জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর পরিচালনায় ৩৩টি পদ সৃষ্টি করছে সরকার। একই সঙ্গে আউটসোর্সিং নীতিমালা অনুযায়ী, সাতজনকে নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তরের (এনএসআই) অতিরিক্ত পরিচালকের ৩০টি এবং যুগ্ম পরিচালকের ২৫টি সুপারনিউমারারি (নির্দিষ্ট সংখ্যার অতিরিক্ত) পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এসব পদ সৃষ্টির প্রস্তাব আজ সোমবার সচিবালয়ে প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে উঠবে। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারকে সহায়তা, আহতদের পুনর্বাসনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে কাজ করবে এটি। এই অধিদপ্তরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ৬৩টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৪১টি পদ সৃষ্টির সম্মতি দেয়। অর্থ বিভাগ রাজস্ব খাতে ৩৩টি পদ সৃষ্টির সম্মতি দিয়েছে এবং বেতন স্কেল নির্ধারণ করেছে। সচিব কমিটির অনুমোদন পাওয়ার পর প্রস্তাবটি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যাবে। প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের অনুমোদন পেলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এর পর নিয়োগ ও পদায়ন কার্যক্রম শেষে এ অধিদপ্তরের কাজ শুরু হবে। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, চলতি মাসেই জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। 

এনএসআইয়ের পদ 
এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালকের ৩০টি এবং যুগ্ম পরিচালকের ২৫টি পদসহ মোট ৫৫টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলেন, পদোন্নতিবঞ্চিত ও যোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক পদ ফাঁকা না থাকায় সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পদ সৃষ্টির পর বঞ্চিত ও যোগ্য কর্মকর্তারা এসব পদে পদোন্নতি পাবেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং অর্থ বিভাগ ৫৫টি সুপারনিউমারারি পদের মধ্যে অতিরিক্ত পরিচালকের ৩০টি গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে এবং যুগ্ম পরিচালকের ২৫টি পদ ২০১৯ সালের ২৬ মে থেকে ভূতাপেক্ষভাবে সৃজনের সম্মতি দিয়েছে। এসব পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বেতারের অনুষ্ঠান বিভাগে ৩৫টি নতুন ক্যাডার পদ   
বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারভুক্ত বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান বিভাগের জন্য স্থায়ীভাবে ৩৫টি ক্যাডার পদ সৃষ্টির অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ। ময়মনসিংহ জেলা শ্রম আদালত গঠনের জন্য আটটি এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের জন্য তিনটি পদ সৃজন হচ্ছে। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের সিকিউরিটি অফিসার পদের পদনাম পরিবর্তন করে সহকারী পরিচালক নামকরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন গণঅভ য ত থ ন পদ স ষ ট র র জন য পর চ ল ম পর চ

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ