ছিটকেই গেলেন বুমরা, ভারতের পরিবর্তিত দলে আরও চমক
Published: 12th, February 2025 GMT
শেষ পর্যন্ত শঙ্কাটাই সত্যি হলো। পিঠের চোট থেকে পুরোপুরি সেরে না ওঠায় ভারতের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল থেকে ছিটকে গেলেন যশপ্রীত বুমরা। গত রাতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) তাঁকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
৩১ বছর বয়সী বুমরার পরিবর্তে হর্ষিত রানাকে দলে নিয়েছে অজিত আগারকারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটি। ঘরোয়া ক্রিকেট, বিশেষ করে আইপিএলে সর্বশেষ মৌসুমে ভালো করার পুরস্কার হিসেবে গত নভেম্বরে বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফি দিয়ে ভারতের হয়ে অভিষেক হয় হর্ষিতের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান ওয়ানডে সিরিজেও খেলছেন তিনি। প্রথম দুই ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়েছেন ২৩ বছর বয়সী এই ফাস্ট বোলার।
ভারতের পরিবর্তিত দলে আরেকটি চমক আছে। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান যশস্বী জয়সোয়ালকে বাদ দিয়ে অফ স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীকে নেওয়া হয়েছে। এতে ভারতীয় দলে স্পিনারের সংখ্যা বেড়ে হলো পাঁচজন—বরুণ, কুলদীপ যাদব, ওয়াশিংটন সুন্দরের সঙ্গে দুই বাঁহাতি স্পিন অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা ও অক্ষর প্যাটেল।
সম্প্রতি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজে সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পেয়েছেন বরুণ চক্রবর্তী। প্রকৌশলী থেকে পুরোদস্তুর ক্রিকেটার বনে যাওয়া এই স্পিনার বৈশ্বিক আসরে সর্বশেষ খেলেছেন ২০২১ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।
গত জানুয়ারিতে বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফিতেই নতুন করে পিঠের সমস্যায় পড়েন বুমরা। এরপরও চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রাথমিক স্কোয়াডে তাঁকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সর্বশেষ স্ক্যান রিপোর্ট থেকে জানা যায়, পিঠের চোট থেকে সেরে উঠতে আরও পাঁচ সপ্তাহ সময় লাগবে। তত দিনে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শেষ হয়ে যাবে। এ কারণে গতকাল চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণার শেষ দিনে তাঁকে বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে বিসিসিআই।
বুমরার না থাকা ভারতের জন্য বিশাল এক ধাক্কা হয়েই এল। গত বছরটা অবিশ্বাস্য কেটেছে তাঁর। জুনে ভারতকে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতাতে বড় অবদান রেখে হয়েছিলেন টুর্নামেন্টসেরা। বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারত ৩–১ ব্যবধানে হারলেও তিনি হয়েছিলেন সিরিজসেরা। ২০২৪ সালে আইসিসির বর্ষসেরা ক্রিকেটারের খেতাবও জিতেছেন।
এদিকে, জয়সোয়ালকে চূড়ান্ত দল থেকে বাদ দেওয়া হলেও রিজার্ভ খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এ তালিকায় আরও আছেন পেসার মোহাম্মদ সিরাজ ও ব্যাটিং অলরাউন্ডার শিবম দুবে। বিসিসিআই জানিয়েছে, এই তিনজন ভারতেই থাকবেন। শুধু দরকার পড়লে দুবাইয়ে যাবেন।
হাইব্রিড মডেলের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু ১৯ ফেব্রুয়ারি। মূল আয়োজক পাকিস্তান হলেও ভারত তাদের ম্যাচগুলো খেলবে দুবাইয়ে। টুর্নামেন্টে রোহিত–কোহলিদের অভিযান শুরু ২০ ফেব্রুয়ারি, প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ।
ভারতের চূড়ান্ত স্কোয়াডরোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুবমান গিল (সহ–অধিনায়ক), বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল (উইকেটকিপার), ঋষভ পন্ত (উইকেটকিপার), রবীন্দ্র জাদেজা, মোহাম্মদ শামি, অর্শদীপ সিং, কুলদীপ যাদব, হর্ষিত রানা, বরুণ চক্রবর্তী, ওয়াশিংটন সুন্দর, হার্দিক পান্ডিয়া ও অক্ষর প্যাটেল।
রিজার্ভ খেলোয়াড়: মোহাম্মদ সিরাজ, যশস্বী জয়সোয়াল ও শিবম দুবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।