ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে এবার ২ হাজার ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলারের উপহারসামগ্রী বেচাকেনা হবে। প্রিয়জনকে ফুল, গয়না, চকলেটসহ বিভিন্ন ধরনের উপহারসামগ্রী দিতে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করবেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারীরা। ডলারের বর্তমান বাজারদরে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ওই দেশের ৫৬ শতাংশ ভোক্তা ভালোবাসা দিবস উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই দিবসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি পরিবারের গড়ে ১৮৮ ডলার ৮১ সেন্ট খরচ হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন (এনআরএফ) ভালোবাসা দিবসের অর্থনীতির এ বছরের বাজার নিয়ে এই প্রাক্কলন করেছে। ইউএস চেম্বার অব কমার্সের ওয়েবসাইটেও এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

ভালোবাসা দিবসে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা কত খরচ করেন, এর একটি ধারণা নেওয়া যাক। এ বছর ভালোবাসা দিবসের প্রাক্কলিত খরচের পরিমাণ, চলতি অর্থবছরের বাংলাদেশের বাজেটের ৪২ শতাংশের সমান। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।

ভালোবাসা দিবসে প্রেমিক-প্রেমিকা, আত্মীয়স্বজনসহ প্রিয়জনকে উপহার দেওয়া এখন একটি রীতিতে পরিণত হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বে এটি রীতিমতো উৎসবের পর্যায়ে চলে গেছে। ভালোবাসা দিবসে উপহার হিসেবে ফুল, গয়না, চকলেট—এসবেরই চল বেশি। তবে অনেকে প্রিয় মানুষকে গাড়ির মতো দামি উপহারও দেন। আবার দামি হোটেল থাকা, খাওয়াসহ বেড়ানোর পেছনেও বড় অঙ্কের অর্থ খরচ করেন। ফলে ভালোবাসার উপহারসামগ্রীর বাজার চাঙা হয়, অর্থনীতিও গতি পায়।

আগামীকাল শুক্রবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। পশ্চিমা বিশ্বে এ নিয়ে হইচই শুরু হয়ে গেছে। নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশেও ভালোবাসা দিবস জনপ্রিয় হতে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের যত বেচাকেনা

দ্য সোসাইটি অব আমেরিকান ফ্লোরিস্টস জানিয়েছে, এবারের ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ফুল ব্যবসায়ীরা ২৫ কোটি ফুল প্রস্তুত করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে চকলেট-ক্যান্ডির মতো মিষ্টান্ন ভালোবাসা দিবসের উপহার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। এবার ৫৬ শতাংশ আমেরিকান ক্যান্ডি কেনার পরিকল্পনা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ালেটহাবস ২০২৫ সমীক্ষা অনুসারে, এ বছর ভালোবাসা দিবসে ৬০ লাখ আমেরিকান বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারেন। ৩৬ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন, ভালোবাসা দিবসে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া বেশ রোমান্টিক।

ভালোবাসা দিবসে শুধু প্রিয়জনকে নয়, কুকুর-বিড়ালের মতো প্রিয় প্রাণীকেও উপহার দেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটাল ওয়ান শপিংয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছর ভালোবাসা দিবসে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা পোষা প্রাণীকে উপহার দিতে ১৫০ কোটি ডলার খরচ করেছেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা। একটি কুকুর গড়ে ৩১ ডলার ২৪ সেন্টের উপহার পেয়েছে। আর পোষা বিড়াল পেয়েছে ২৭ ডলার ৪২ সেন্টের উপহার।

ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে রেস্তোরাঁর ব্যবসাও বেশ জমজমাট থাকে। প্রিয়জনকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে যান অনেকে। তবে গতবারের মতো এবারও সপ্তাহের কর্মদিবসে (শুক্রবার) পড়েছে ভালোবাসা দিবস। ফলে রেস্তোরাঁয় ‘টেক আউট (খাবার কিনে নিয়ে যাওয়া)’ বিক্রি বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতবার ভালোবাসা দিবসে এই ‘টেক আউট’ বিক্রি ৪৬ শতাংশ বেড়েছিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র য়জনক আম র ক ন র উপহ র

এছাড়াও পড়ুন:

৯ মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা

দেশের শীর্ষস্থানীয় রড উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমের দুই কোম্পানি মিলে ৯ মাসে ১৪ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। কোম্পানি দুটি হলো বিএসআরএম লিমিটেড ও বিএসআরএম স্টিল। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিএসআরএমের এই দুটি কোম্পানিরই মূল ব্যবসা রডের।

চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) কোম্পানি দুটি সম্মিলিতভাবে এই ব্যবসা করেছে। গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানি দুটির সম্মিলিত ব্যবসা ছিল ১২ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিএসআরএমের ব্যবসা বেড়েছে ১ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা বা ১৩ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের যে আর্থিক প্রতিবেদন কোম্পানি দুটি প্রকাশ করেছে, তা থেকে তাদের ব্যবসার এই চিত্র পাওয়া গেছে। গত সোমবার কোম্পানি দুটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। গতকাল বুধবার তা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছে। আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত কোম্পানি দুটি ১৪ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকার যে ব্যবসা করেছে, তার মধ্যে বিএসআরএম লিমিটেডের ব্যবসা ৬ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকার। আর বিএসআরএম স্টিলের ব্যবসার পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। ব্যবসা বৃদ্ধি পাওয়ায় কোম্পানি দুটি মুনাফাও বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানির ব্যবসা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে। কারণ, আমাদের নতুন একটি কারখানা এ সময়ের মধ্যে উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে। তপন সেনগুপ্ত, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিএসআরএম গ্রুপ

বিএসআরএম লিমিটেড চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে মুনাফা করেছে ৪১৫ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩৩৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ৮১ কোটি টাকা বা ২৪ শতাংশের বেশি। আর চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে বিএসআরএম স্টিল মুনাফা করেছে ৩০২ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২৭৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ২৩ কোটি টাকা বা সোয়া ৮ শতাংশ।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে মার্চ—এই ৯ মাসে সম্মিলিতভাবে কোম্পানি দুটি মিলে ৭১৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৬১৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানি দুটির সম্মিলিত মুনাফা ১০৪ কোটি টাকা বা ১৭ শতাংশ বেড়েছে।

মুনাফা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কোম্পানি–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৯ মাসে নতুন একটি কারখানার উৎপাদনে এসেছে। তাতে কোম্পানির বিক্রি বেড়েছে। ব্যবসা বৃদ্ধি পাওয়ায় মুনাফাও বেড়েছে। পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমাতেও সচেষ্ট ছিল কোম্পানিটি। এসব কারণে কোম্পানির মুনাফায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

বর্তমানে বিএসআরএমের রড তৈরির তিনটি কারখানা রয়েছে। চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফৌজদারহাট ও নাসিরাবাদে—তিনটি কারখানা অবস্থিত। এই তিন কারখানার মধ্যে মিরসরাই ও ফৌজদারহাটের কারখানা দুটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিএসআরএম স্টিলের আওতাধীন। আর নাসিরাবাদের কারখানাটি বিএসআরএম লিমিটেডের আওতায় রয়েছে। দুটি কোম্পানিরই মূল ব্যবসা রডের। তবে বিএসআরএম লিমিটেডের ব্যবসার সঙ্গে রডের বাইরে এঙ্গেল, চ্যানেলের আয়ও যুক্ত হয়।

বিএসআরএমের ব্যবসা ও মুনাফা বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানিটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানির ব্যবসা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে। কারণ, আমাদের নতুন একটি কারখানা এ সময়ের মধ্যে উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে। যদিও কারখানাটিতে এখনো পুরোদমে উৎপাদন শুরু হয়নি। তারপরও আংশিক উৎপাদন শুরুর কারণে বিক্রি বেড়েছে। আবার উৎপাদন খরচ কমানোর ক্ষেত্রে আমরা সচেষ্ট ছিলাম। এসব কারণে মুনাফা বেড়েছে।’

অর্থবছরের ৯ মাসের পাশাপাশি চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের আয়–ব্যয়ের হিসাবও আলাদাভাবে প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি। তাতে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বিএসআরএম লিমিটেড ২ হাজার ৯১৮ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়েছে ৫৯৭ কোটি টাকার। ব্যবসা বৃদ্ধি পাওয়ায় মুনাফাও বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বিএসআরএম লিমিটেড মুনাফা করেছে ২২৫ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১৪৭ কোটি টাকা।

একইভাবে বিএসআরএম স্টিল চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যবসা করেছে ৩ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকার। এ সময় কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ১৬২ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়েছে ৬০২ কোটি টাকা। আর মুনাফা বেড়েছে ৩৭ কোটি টাকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
  • কর্মক্ষেত্রে অধিকার আদায়ের রক্তাক্ত গৌরবময় দিন
  • শিগগিরই শ্রম আইন সংশোধন করা হবে: শ্রম উপদেষ্টা 
  • ৯ মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা
  • আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসে শিল্পকলা একাডেমির  দুই দিনের আয়োজন
  • মেরাদিয়ায় পশুর হাট বসানো যাবে না, নির্দেশ হাইকোর্টের
  • ৯ মাসে ৪,৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা ওয়ালটনের
  • আইনগত সহায়তা দিবসে আলোচনা সভা-শোভাযাত্রা
  • যমুনা অয়েলের মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ
  • আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন