বৈঠকে মানবাধিকার ও সংখ্যালঘু অধিকারের বিষয়গুলো এড়িয়ে গেলেন ট্রাম্প–মোদি
Published: 14th, February 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে অস্ত্র বিক্রি থেকে শুরু করে বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে দুই নেতার মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়। তবে মানবাধিকার এবং সংখ্যালঘু নিপীড়নের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো তাঁরা এড়িয়ে গেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনসংক্রান্ত উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কমই গুরুত্ব পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ক্রমাগত বেড়েছে। চীনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ভারত। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
গতকাল হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও মোদির বৈঠকে এবং তাঁদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয়ের উল্লেখ করা হয়নি।
উইলসন সেন্টার থিঙ্কট্যাংকের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান ব্যক্ত না করার বড় একটা কারণ হলো, স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর ভর করে তাঁর পররাষ্ট্রনীতি গড়ে উঠেছে। বিদেশের মাটিতে মানবাধিকারের কী হলো না হলো, সে বিষয় নিয়ে তাঁর তেমন একটা মাথাব্যথা নেই।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভারতের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখলেও তাঁর শীর্ষ কূটনীতিক অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মাঝেমধ্যে সংখ্যালঘু নিপীড়নের নিন্দা জানাতেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক প্রতিবেদনগুলোতে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো উঠে এসেছিল। তবে এগুলোকে অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট বলে উল্লেখ করেছে ভারত।
লন্ডনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের জ্যেষ্ঠ গবেষক চিতিগজ বাজপেয়ীর মতে, মোদি ও ট্রাম্প হলেন একই ধরনের ধারণা পোষণকারী ‘শক্তিশালী’ নেতা। কুগেলম্যানও এ দুই নেতার মধ্যে মিল থাকার কথা বলেছেন। তাঁর মতে, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম হওয়ায় তাঁদের দুজনের সম্পর্কের রসায়নটা জমে উঠেছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোও বিভিন্ন সময়ে মোদি ও ট্রাম্পের কার্যকলাপের সমালোচনা করেছে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। তিনি গাজা দখলের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। মানবাধিকারবিশেষজ্ঞরা একে জাতিগত নিধনের প্রস্তাব হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রে বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক যেসব কর্মসূচি চালু ছিল, তা–ও বাতিল করেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের দাবি, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থেই এসব করছেন। বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমুলক কর্মসূচিকে বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সংখ্যালঘুদের প্রতি মোদি সরকারের আচরণে ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে। এসব সংগঠন ভারতে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বেড়ে যাওয়া, ধর্মভিত্তিক একটি নাগরিকত্ব আইনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছে। ওই আইনকে বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘও।
তবে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ অস্বীকার করে থাকেন মোদি।
গতকাল অভিবাসন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন ট্রাম্প। আর পেশাদারি দক্ষতা থাকা ভারতীয়দের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেওয়ার পক্ষে কথা বলেছে ভারত। এইচ–১বি ভিসা সুবিধার একটা বড় অংশই ভারতীয়রা পেয়ে থাকেন, যা ট্রাম্প সমর্থন করেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান পছন্দ হয়নি স্যামির
চট্টগ্রামের সাগরিকায় উপস্থিত থাকা দর্শকরা গতকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সাপোর্ট করেছে এমন কথা শুনলে অবাক হবেন নিশ্চিয়ই? অবাক হওয়ার কিছু নেই। সত্যিই এমন কিছুই হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে।
ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ বাংলাদেশ দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন দর্শকরা আপাতদৃষ্টিতে এমনটাই মনে হয়েছে। লাল-সবুজের পতাকা গ্যালারিতে উড়তে দেখা যায়নি তেমনটা নয়। কিন্তু ম্যাচ যত গড়িয়েছে সেই পতাকা উড়ানোও তত কমেছে। টিকিটের মূল্য একেবারে হাতের নাগালে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তবুও ভরেনি গ্যালারি।
লিটন, জাকের, তাসকিন, শরিফুল, সাইফদের পারফরম্যান্স এমন গড়পড়তা যে সমর্থকরা প্রতিপক্ষের ব্যাটিং-বোলিং দেখেই বেশি আনন্দিত হচ্ছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যে নিবেদন, যে চাহিদা তা রোস্টন চেজ, আকিম আগাস্তের ব্যাটে পাওয়া গেলে সমর্থকদের দোষ কোথায়? তাদের চার-ছক্কায় গ্যালারিতে তালির ঝড় উঠে। উল্লাস, উদ্দীপনায় মাততে দেখা যায়।
আর স্বাগতিক দলের জন্য উড়ে আসে দুয়ো ধ্বনি। ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান চললো পুরো ম্যাচ জুড়েই। বিশেষ করে সীমানায় থাকা ক্রিকেটাররা দর্শকদের রোষানলে পড়লেন বেশি। শুধু তা-ই নয়, স্টেডিয়ামের যাওয়া-আসার পথেও সেই সমর্থকরাই ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগানে এলোমেলা করে দেন ক্রিকেটারদের।
বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে এসব স্লোগান একেবারেই পছন্দ হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ ড্যারেন স্যামির। ক্যারিয়ারে নানা সময় বাংলাদেশে আসায় কিছুটা বাংলা শব্দ তারও জানা। তবে ভুয়া অর্থটা জেনেছেন এবারই। তাইতো তার হৃদয়ে কিছুটা দহনও হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য, “তারা (দর্শকরা) ক্রিকেটারদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছে, সেটা আমার ভালো লাগেনি। আমি শুনেছি তারা ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলছে। এর অর্থও আমি জেনেছি। কিন্তু আমি মনে করি না, হোম টিমের দর্শক হিসেবে এমন করা উচিত। কারণ আপনারা তখন সমর্থক। প্রত্যেক ক্রিকেটারই মাঠে আসে তাদের সেরাটা দেওয়ার জন্য। তাই আপনাদের উচিত, তাদের সমর্থন করা।”
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুইবার বিশ্বকাপ জেতানো স্যামি কঠিন সময়ে ক্রিকেটারদের পাশে থাকার কথা বললেন, ‘‘তবুও তারা (দর্শকরা) ভালো। তারা নিজেদের দলকে পারফর্ম করতে দেখতে চায়। তবে যত বেশি সমর্থন ও উৎসাহ দেবেন, তারা তত দূর যেতে পারবে। ক্রিকেটারদের অযথা চাপে ফেলবেন না। ফ্যানদের বলব, তাদের (ক্রিকেটারদের) সঙ্গে সুন্দর আচরণ করুন।”
চট্টগ্রাম/ইয়াসিন