মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে অস্ত্র বিক্রি থেকে শুরু করে বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে দুই নেতার মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়। তবে মানবাধিকার এবং সংখ্যালঘু নিপীড়নের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো তাঁরা এড়িয়ে গেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনসংক্রান্ত উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কমই গুরুত্ব পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ক্রমাগত বেড়েছে। চীনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ভারত। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

গতকাল হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও মোদির বৈঠকে এবং তাঁদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয়ের উল্লেখ করা হয়নি।

উইলসন সেন্টার থিঙ্কট্যাংকের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকারসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান ব্যক্ত না করার বড় একটা কারণ হলো, স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর ভর করে তাঁর পররাষ্ট্রনীতি গড়ে উঠেছে। বিদেশের মাটিতে মানবাধিকারের কী হলো না হলো, সে বিষয় নিয়ে তাঁর তেমন একটা মাথাব্যথা নেই।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভারতের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখলেও তাঁর শীর্ষ কূটনীতিক অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মাঝেমধ্যে সংখ্যালঘু নিপীড়নের নিন্দা জানাতেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক প্রতিবেদনগুলোতে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো উঠে এসেছিল। তবে এগুলোকে অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট বলে উল্লেখ করেছে ভারত।

লন্ডনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের জ্যেষ্ঠ গবেষক চিতিগজ বাজপেয়ীর মতে, মোদি ও ট্রাম্প হলেন একই ধরনের ধারণা পোষণকারী ‘শক্তিশালী’ নেতা। কুগেলম্যানও এ দুই নেতার মধ্যে মিল থাকার কথা বলেছেন। তাঁর মতে, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম হওয়ায় তাঁদের দুজনের সম্পর্কের রসায়নটা জমে উঠেছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোও বিভিন্ন সময়ে মোদি ও ট্রাম্পের কার্যকলাপের সমালোচনা করেছে।

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। তিনি গাজা দখলের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। মানবাধিকারবিশেষজ্ঞরা একে জাতিগত নিধনের প্রস্তাব হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রে বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক যেসব কর্মসূচি চালু ছিল, তা–ও বাতিল করেছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের দাবি, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থেই এসব করছেন। বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমুলক কর্মসূচিকে বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সংখ্যালঘুদের প্রতি মোদি সরকারের আচরণে ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে। এসব সংগঠন ভারতে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বেড়ে যাওয়া, ধর্মভিত্তিক একটি নাগরিকত্ব আইনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছে। ওই আইনকে বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘও।

তবে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ অস্বীকার করে থাকেন মোদি।

গতকাল অভিবাসন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন ট্রাম্প। আর পেশাদারি দক্ষতা থাকা ভারতীয়দের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেওয়ার পক্ষে কথা বলেছে ভারত। এইচ–১বি ভিসা সুবিধার একটা বড় অংশই ভারতীয়রা পেয়ে থাকেন, যা ট্রাম্প সমর্থন করেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।

এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।

এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।

সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।

আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।

শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।

পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • মুসলিম পরিবারে শিশুর নিরাপত্তা
  • পুরোপুরি বিলুপ্তির পর উগান্ডায় আবার ফিরল গন্ডার
  • ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের