কুড়িগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের পিটুনিতে ৪ বাংলাদেশি আহত, উত্তেজনা
Published: 14th, February 2025 GMT
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে চার বাংলাদেশিকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বিরুদ্ধে। এতে সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি হয়।
আজ শুক্রবার দুপুরে উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের বালারহাট সীমান্তের ৯৩০ নম্বর আন্তর্জাতিক পিলারের কাছে এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার পশ্চিম বালাটারী গ্রামের সামছুল আলম (৬০), জাবেদ আলী (৫৫), তাজুল ইসলাম (৪০) ও কাসেম আলী (৫০)। তাঁরা সবাই পশ্চিম বালাতাড়ি গ্রামের বাসিন্দা।
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাকিল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ওই ঘটনায় সীমান্তে কিছু বাংলাদেশি জড়ো হওয়ার উত্তেজনা তৈরি হয়। ঘটনার বিস্তারিত তথ্যের জন্য আমরা কাজ করছি। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে অপেক্ষা করতে হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও বিএসএফের পিটুনিতে আহত ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ দুপুরে নামাজের পর সামছুল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার ২০০ থেকে ৩০০ গজ অভ্যন্তরে বসে ছিলেন। এ সময় হঠাৎ ১০ থেকে ১২ জন বিএসএফ সদস্য আন্তর্জাতিক সীমান্তরেখার ৯৩০ নম্বর পিলার পার হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে সেখানে বসে থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। এ সময় তাঁদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে বিজিবি সদস্যেরা বন্দুকের পেছনের অংশ দিয়ে সামছুলকে আঘাত করে। এতে তাঁর ডান হাত ফেটে যায়। পরে তিনি এলাকায় ফিরে ঘটনাটি স্থানীয় বাসিন্দাদের জানান। পরে এলাকাবাসী সেখানে গিয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে বিএসএফ সদস্যদের ধাওয়া দেয়। এ সময় বিজিবি একটি রাবার বুলেট ছোড়ার পাশাপাশি কয়েকজন বাংলাদেশিকে মারধর করে। এতে অন্তত ৩ জন আহত হন।
খবর পেয়ে কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী উপজেলার গোরকমণ্ডল বিজিবি ক্যাম্পের কয়েকজন সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের শান্ত করে শূন্যরেখা থেকে ফিরিয়ে আনেন। তবে ভারতীয় সীমান্তে এখনো বিএসএফ সদস্যেরা কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে ও ভেতরে সজ্জিত থাকায় সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আশিক আহমেদ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা আজ বিকেলের দিকে বলেন, ‘এখনো বিএসএফ ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের ভেতরে যায়নি। বর্ডারের ওপারে ৪টি বড় ভারতীয় গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আমরা তো ভারতীয় সীমান্তে যাইনি। তাঁরা বাংলাদেশের ভেতর এসে আমাদের এলাকার মানুষকে মারধর করে গেছে। এ ঘটনায় এলাকার লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁরা রাবার বুলেট ছুড়েছে। পরে বিজিবির কয়েকজন সদস্য এসে বাংলাদেশি নাগরিকদের শূন্যরেখা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।’
বিএসএফ এর বন্দুকের আঘাতে আহত সামছুল আলমের ছেলে জিহাদ হোসেন জানান, ‘শুক্রবার নামাজের পর তাঁর বাবা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে বসে ছিলেন। বিএসএফের সদস্যেরা তাঁকে বন্দুক দিয়ে আঘাত করে আহত করে। বিএসএফের বন্দুকের আঘাতে ডান হাত ফেটে যায়। আমরা তাঁকে বাসায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এসএফ র বন দ ক সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে আটক ১৯ জেলে ৯৭ দিন পর বাড়ি ফিরলেন
ভোলার সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ১৯ জেলে ৯৭ দিন ভারতে আটক থাকার পর দেশে ফিরেছেন। গত বুধবার রাতে তাঁরা নিজ নিজ বাড়ি ফিরেছেন।
দেশে ফেরত জেলেরা বলছেন, সাগরে মাছ ধরা শেষে ফেরার পথে ঝড়ে দিগ্ভ্রান্ত হয়ে তাঁদের বহনকারী ট্রলার ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে যায়। পরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাঁদের আটক করে।
দেশে ফেরা জেলেরা হলেন সফিজল ব্যাপারী (মাঝি), শাহে আলম, ছিডু মুন্সি, রাজীব চন্দ্র দাস, আক্তার হোসেন, মিন্টু হাওলাদার, মো. ফরিদ, মো. আলমগীর, মোহাম্মদ ফরিদ, মো. ইউনুছ, মো. বাবুল সরদার, মো. নিরব হোসেন, মো. ইসমাইল, মো. শাহ আলম হাওলাদার, গৌতম চন্দ্র দাস, জাকির হোসেন, সগির সিকদার, মো. টুটুল ও শহীদুল ইসলাম। তাঁরা সবাই ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
জেলে ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, ৫ সেপ্টেম্বর শান্তির হাট ঘাট এলাকা থেকে একটি মাছ ধরার নৌকা নিয়ে বঙ্গোপসাগরে যান ওই জেলেরা। মাছ ধরা শেষে ফেরার পথে ঝড়ে দিক হারিয়ে তাঁরা ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ করেন। বিএসএফ তাঁদের আটক করে সুন্দরবনের কোস্টাল থানায় হস্তান্তর করে। সেখান থেকে তাঁদের আলীপুর সদর ও পরে বারাইপুর জেলে পাঠানো হয়। দুই দেশের সরকারের সিদ্ধান্তে বন্দিবিনিময়ের অংশ হিসেবে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মেরিটাইম বাউন্ডারিতে হস্তান্তরের পর পশ্চিমাঞ্চলীয় কোস্টগার্ডের সহায়তায় বুধবার সন্ধ্যায় মোংলা বন্দরে পৌঁছান তাঁরা। পরে দিবাগত রাত দুইটার দিকে নিজ নিজ বাড়িতে ফেরেন।
জেলেরা ফিরলেও মাছ ধরার নৌকাটি ফেরত দেওয়া হয়নি দাবি করেন সফিজল মাঝির ছেলে হোসাইন স্বাধীন। তিনি বলেন, ‘৩০ লাখ টাকা মূল্যের ফিশিং বোটটি ফেরত পাইনি। নৌকাটি না পেলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।’
আরও পড়ুনবঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার বিকল, ভোলার ১৯ জেলে ভারতের কারাগারে২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫জেলে মো. শাহে আলম বলেন, সাগর থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ পাওয়া গিয়েছিল। ভারতীয় প্রশাসন মাছসহ ফিশিং বোট নিয়ে গেছে।
ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওই জেলেদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছেন বলে দাবি করেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী ও জেলে সমিতির ভোলা সদর উপজেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মামুন শেখ। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেন আর কোনো জেলেকে এভাবে নির্যাতন না করা হয়, সেই অনুরোধ জানাই।’
আরও পড়ুনসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ১২ দিন ধরে ১৫ জেলে নিখোঁজ২২ নভেম্বর ২০২৫আল মামুন শেখ বলেন, জেলেরা আটক হওয়ার খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট পরিবারের কাছ থেকে সব কাগজপত্র সংগ্রহ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ফলে দীর্ঘ ৯৭ দিন পর কোস্টগার্ডের সহায়তায় ওই জেলেরা দেশে ফিরেছেন।
কোস্টগার্ড সূত্রে জানা যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে বন্দিবিনিময়ের সিদ্ধান্ত হলে বাংলাদেশ ৪৭ ভারতীয় জেলেকে ও ভারত ৩২ বাংলাদেশি জেলেকে ফেরত দেয়।
ভোলা সদর ইউএনও মো. আরিফুজ্জামান বলেন, সাধারণত এ ধরনের ঘটনায় জেলেদের ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ সময় লাগে। এ ক্ষেত্রে ৯৭ দিনের মাথায় তাঁরা ফিরেছেন। আটক থাকা অবস্থায় তাঁদের পরিবারগুলোকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুনভোলায় সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ১৩ জেলে ভারতের কারাগারে বন্দী০১ ডিসেম্বর ২০২৫