অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে আদালতের আদেশ প্রতিপালিত না হওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং পাঁচ বিভাগীয় কমিশনারকে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সম্পূরক এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন।

আদেশে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারকে আগামী ১৭ মার্চ আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।

এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক আদেশে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে আদালতের আদেশ প্রতিপালন না হওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তিন বিভাগীয় কমিশনার, তিন জেলা প্রশাসক এবং দুই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ অনুসারে আট কর্মকর্তা সোমবার সকালে আদালতে উপস্থিত হন। উপস্থিত কর্মকর্তারা হলেন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনার; নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক এবং সাভার ও ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তাঁদের পক্ষ হতে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

শুনানির শুরুতে আট কর্মকর্তার উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘দেশের পরিবেশের এখন যে অবস্থা, তা খুবই করুণ। দেশের পরিবেশ আমাদের রক্ষা করতেই হবে। প্রত্যেকের জীবন পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। পরিবেশের ব্যাপারে আমরা কোনো আপস করব না। দেশের পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো কাজ করা যাবে না। আইন আপনাদের দায়িত্ব দিয়েছে। বিষয়টি শক্তভাবে দেখবেন, দেশের স্বার্থে। শক্তভাবে হ্যান্ডেল করলে কেউই পরিবেশ নষ্ট করার সাহস পাবে না।’

মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে সম্পূরক আবেদনটি করা হয়। আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ, তাঁকে সহায়তা করেন আইনজীবী সেলিম রেজা। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান ও আসাদ উদ্দিন। ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির পক্ষে আইনজীবী ফাহিমা নাসরিন শুনানিতে অংশ নেন।

শুনানি নিয়ে আদালত আট কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। একই সঙ্গে দেশজুড়ে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ বা ধ্বংসের প্রক্রিয়া শেষ করে বিভাগীয় কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আদালতে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৭ মার্চ পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়।

আবেদনকারীপক্ষের তথ্য অনুসারে, সারা দেশে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে ২০২২ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে একটি রিট করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে ব্যবস্থা এবং ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর ধারাবাহিকতায় এইচআরপিবির করা সম্পূরক এক আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৮ নভেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন। এতে দেশের আট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে থাকা অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম যাতে শুরু না করতে পারে, সে বিষয়ে সাত দিনের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিভাগীয় কমিশনারদের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। পাশাপাশি কার্যক্রম ও পদক্ষেপ জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

তিন বিভাগীয় কমিশনার গত ২৮ নভেম্বরের আদেশে অনুসারে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তবে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় তিন বিভাগীয় কমিশনারসহ আট কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। এই আবেদন মঞ্জুর করে গত ২৯ জানুয়ারি আদেশ দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ তিন বিভাগীয় কমিশনারসহ আট কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত হন।

অবৈধ ইটভাটা বন্ধে পদক্ষেপ এবং সেগুলোর অবস্থা সম্পর্কে তিন বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয় বলে জানান আবেদনকারীপক্ষের (এইচআরপিবি) জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নির্দেশনা অনুসারে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ ও বন্ধের আদেশ পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। কোনো কোনো ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সেগুলো পরে আবার চালু হয়েছে। আইন অনুসারে লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা না করার নির্দেশনা রয়েছে।

অবৈধ ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, মাঝেমধ্যে অবৈধ ইটভাটার মালিকদের জরিমানা করা হলেও আইনের বিধান অনুসারে দুই বছরের জেল দেওয়া হয় না। ফলে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে না।

সম্পূরক আবেদন ও আদেশের বিষয়ে জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ বাস্তবায়িত না হওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনারকে ব্যক্তিগতভাবে আদালতে হাজির হতে নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদনটি করা হয়। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আগামী ১৭ মার্চের মধ্যে নিজ নিজ এলাকায় থাকা অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ বা ধ্বংস করে তাঁদের আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব শ র পদক ষ প আইনজ ব অন স র

এছাড়াও পড়ুন:

বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ পঞ্চম পর্বে থাকছে বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ মূলত আইনজীবীদের পেশাজীবনের অনুসরণীয় বিধিমালা। এ আইন থেকে আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষায় দুটি প্রশ্ন আসবে। উত্তর দিতে হবে একটি। নম্বর থাকবে ১০।

প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন দেখেই বোঝা যাচ্ছে আইনটি কেমন হতে পারে। মূলত বার কাউন্সিলের গঠন, আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা এবং একজন আইনজীবী হিসেবে সমাজের প্রতি, মক্কেলের প্রতি, সহকর্মীদের প্রতি যেসব দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা এ আইনে বলা হয়েছে। বাস্তবধর্মী ও পেশাজীবনে অতি চর্চিত একটি আইন হলো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২। এ আইন থেকে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।

যেমন বার কাউন্সিল কীভাবে গঠিত হয়, বার কাউন্সিলের কার্যবালি কী, সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হন, কতগুলো কমিটি রয়েছে, কমিটির কাজ কী কী—এগুলো পড়তে হবে। অনেকেই আছে বার কাউন্সিল ও বার অ্যাসোশিয়েশনের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না। এটি ভালো করে রপ্ত করতে হবে। এমন প্রশ্ন হরহামেশা পরীক্ষায় আসে।

এ ছাড়া বার ট্রাইব্যুনালের গঠন ও কার্যাবলি, আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণের জন্য কী কী ধরনের শাস্তি রয়েছে, বার কাউন্সিল কি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে—বিষয়গুলো কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। অনুচ্ছেদ ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩২ এবং বিধি ৪১, ৪১ক ও ৫০–এ এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। সেগুলো ভালো করে পড়তে হবে। অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা, একজন আইনজীবী হিসেবে আরেক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তর জানতে হবে। এসব বিষয় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে।

পেশাগত বিধি অংশে রচনামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন পেশাগত বিধি এবং নীতিমালার আলোকে আদালতের প্রতি, মক্কেলের প্রতিসহ আইনজীবীদের প্রতি ও জনসাধারণের প্রতি একজন আইনজীবীর দায়িত্ব ও কর্তব্য পর্যালোচনা করতে বলা হয়। বর্তমান ঢাকা বারসহ বেশ কয়েকটি বার অ্যাসোশিয়েশনে এডহক কমিটি রয়েছে। এডহক বার কাউন্সিলের গঠন ও ফাংশনস সম্পর্কে প্রশ্ন আসতে পারে। এগুলো ভালো করে পড়তে হবে।

অনেক সময়ে আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরসংক্রান্ত মুসাবিদা করতে দেওয়া হয়। তাই এই মুসাবিদা নিয়মিত অনুশীলন করবেন। মনে রাখবেন, মামলার মুসাবিদা ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মুসাবিদার ধরন কিন্তু এক নয়। তাই যেকোনো ভালো একটি বই থেকে ফরমেটটি দেখে নেবেন এবং অনুশীলন করবেন। একই সঙ্গে বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন সমাধান করবেন। এ আইন থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন রিপিটও হয়।

একটি বিষয় মনে রাখবেন, আইনটি সহজ বলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ, কৃতকার্য হওয়ার জন্য এই ১০ নম্বর অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন
  • দণ্ডাদেশ বহালের রায়ের বিরুদ্ধে ১০ আসামির আপিল ও লিভ টু আপিল
  • যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
  • দক্ষিণ ভারতের নিষ্পেষিত মুসলিম নারীদের কণ্ঠস্বর