পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পাঁচ বিভাগীয় কমিশনারকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ
Published: 24th, February 2025 GMT
অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে আদালতের আদেশ প্রতিপালিত না হওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং পাঁচ বিভাগীয় কমিশনারকে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সম্পূরক এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন।
আদেশে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারকে আগামী ১৭ মার্চ আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক আদেশে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে আদালতের আদেশ প্রতিপালন না হওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তিন বিভাগীয় কমিশনার, তিন জেলা প্রশাসক এবং দুই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ অনুসারে আট কর্মকর্তা সোমবার সকালে আদালতে উপস্থিত হন। উপস্থিত কর্মকর্তারা হলেন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনার; নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক এবং সাভার ও ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তাঁদের পক্ষ হতে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
শুনানির শুরুতে আট কর্মকর্তার উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘দেশের পরিবেশের এখন যে অবস্থা, তা খুবই করুণ। দেশের পরিবেশ আমাদের রক্ষা করতেই হবে। প্রত্যেকের জীবন পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। পরিবেশের ব্যাপারে আমরা কোনো আপস করব না। দেশের পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো কাজ করা যাবে না। আইন আপনাদের দায়িত্ব দিয়েছে। বিষয়টি শক্তভাবে দেখবেন, দেশের স্বার্থে। শক্তভাবে হ্যান্ডেল করলে কেউই পরিবেশ নষ্ট করার সাহস পাবে না।’
মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে সম্পূরক আবেদনটি করা হয়। আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ, তাঁকে সহায়তা করেন আইনজীবী সেলিম রেজা। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান ও আসাদ উদ্দিন। ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির পক্ষে আইনজীবী ফাহিমা নাসরিন শুনানিতে অংশ নেন।
শুনানি নিয়ে আদালত আট কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। একই সঙ্গে দেশজুড়ে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ বা ধ্বংসের প্রক্রিয়া শেষ করে বিভাগীয় কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আদালতে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৭ মার্চ পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়।
আবেদনকারীপক্ষের তথ্য অনুসারে, সারা দেশে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে ২০২২ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে একটি রিট করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে ব্যবস্থা এবং ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর ধারাবাহিকতায় এইচআরপিবির করা সম্পূরক এক আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৮ নভেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন। এতে দেশের আট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে থাকা অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম যাতে শুরু না করতে পারে, সে বিষয়ে সাত দিনের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিভাগীয় কমিশনারদের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। পাশাপাশি কার্যক্রম ও পদক্ষেপ জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
তিন বিভাগীয় কমিশনার গত ২৮ নভেম্বরের আদেশে অনুসারে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তবে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় তিন বিভাগীয় কমিশনারসহ আট কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। এই আবেদন মঞ্জুর করে গত ২৯ জানুয়ারি আদেশ দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ তিন বিভাগীয় কমিশনারসহ আট কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত হন।
অবৈধ ইটভাটা বন্ধে পদক্ষেপ এবং সেগুলোর অবস্থা সম্পর্কে তিন বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয় বলে জানান আবেদনকারীপক্ষের (এইচআরপিবি) জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নির্দেশনা অনুসারে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ ও বন্ধের আদেশ পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। কোনো কোনো ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সেগুলো পরে আবার চালু হয়েছে। আইন অনুসারে লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা না করার নির্দেশনা রয়েছে।
অবৈধ ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, মাঝেমধ্যে অবৈধ ইটভাটার মালিকদের জরিমানা করা হলেও আইনের বিধান অনুসারে দুই বছরের জেল দেওয়া হয় না। ফলে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে না।
সম্পূরক আবেদন ও আদেশের বিষয়ে জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ বাস্তবায়িত না হওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনারকে ব্যক্তিগতভাবে আদালতে হাজির হতে নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদনটি করা হয়। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আগামী ১৭ মার্চের মধ্যে নিজ নিজ এলাকায় থাকা অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ বা ধ্বংস করে তাঁদের আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব শ র পদক ষ প আইনজ ব অন স র
এছাড়াও পড়ুন:
বিয়ে-তালাকের তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক: হাইকোর্ট
বিয়ে ও তালাকের সব তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
আদালত বলেছেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে, যাতে প্রতিটি তথ্য সরকারি ব্যবস্থায় সুরক্ষিত থাকে; ডেটাবেজ সম্পূর্ণ কার্যকর ও ব্যবহারযোগ্য হয় এবং নাগরিকেরা বিশেষ করে নারীরা সহজেই তথ্য যাচাই করতে ও ডিজিটাল কপি সংগ্রহ করতে পারেন।
বিবাহ ও তালাকের ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজ রেজিস্ট্রেশনে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে এইড ফর ম্যান ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন এবং তিন ব্যক্তি ২০২১ সালের ৪ মার্চ রিট করেন।
রিট আবেদনের ভাষ্য, বিয়ে ও তালাকের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর তথা ডিজিটালাইজ রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। স্বামী বা স্ত্রী বিয়ের তথ্য গোপন করে অনেক ক্ষেত্রে আবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ডিজিটাল আর্কাইভের অনুপস্থিতিতে অনেক সময় সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে অনিশ্চয়তা ও জটিলতা দেখা যায়।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে পারিবারিক জীবনের বৃহত্তর সুরক্ষায় বিয়ে ও তালাকের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ডিজিটালাইজেশনের জন্য কেন্দ্রীয় একটি ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায় দেওয়া হয়।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট বিয়ে ও তালাকের সব তথ্য পুরোপুরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। রুল নিষ্পত্তি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দিয়ে রায় দেওয়া হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান, তাঁকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী তানজিলা রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, আদালতের এই সিদ্ধান্ত দেশে পরিবারের নিরাপত্তা, নারীর সুরক্ষা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, আইনগত স্বচ্ছতা এবং সবচেয়ে বড় বিষয় বিয়ে–তালাকসংক্রান্ত প্রতারণা বন্ধে ঐতিহাসিক এক পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। ডিজিটাল নিবন্ধন চালু হলে গোপন বিয়ে, একাধিক বিয়ে লুকানো, পূর্ববর্তী তথ্য গোপন, তালাক প্রমাণের জটিলতা—এসব সমস্যা ব্যাপকভাবে কমবে।