‘জিনিসপত্রের দাম এখন মোটামুটি স্বাভাবিক। তবে সামনের সপ্তাহে কী হয়, সেটি দেখার বিষয়। রোজা শুরু হলে তো ব্যবসায়ীরা বেতাল হয়ে যায়।’ গতকাল বুধবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজারে সবজি কেনার পর নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে সমকালের কাছে এভাবেই খেদোক্তি প্রকাশ করেন বেসরকারি চাকরিজীবী রিয়াজ হাসান। ভোজ্যতেল নিয়ে দুর্দশার কথা জানালেন রহিমা সুলতানা। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মহল্লায় না পেয়ে কারওয়ান বাজারে আইলাম। আট-দশটা দোকানে খুঁজেও তেল পাইলাম না। এই তেল গেল কই?’ 

রোজার আগে নিত্যপণ্যের বাজারে গিয়ে রিয়াজ আর রহিমার মতো অনেক ক্রেতাই নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। প্রতিবছর রোজার আগমুহূর্তে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সরবরাহ কমে যাওয়ার ছুতায় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এবার বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মনের ভেতর জমে থাকা পুরোনো ভয় কাটছে না। রোজা শুরুর পরপরই কিছু পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি ও দাম বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা করছেন কেউ কেউ। যদিও এ বছর ভরপুর ফলনের কারণে পানির দরে কেনা গেছে সবজি। ফলে অন্যসব পণ্যের দরও কিছুটা নাগালে। তবে রোজার আগের এই স্বস্তি একাই কেড়ে নিয়েছে সরবরাহ সংকটে পড়া ভোজ্যতেল।

তবে বাজারে পণ্যের দাম একেবারে বাড়ছে না, তেমনটা নয়। এ সপ্তাহে কিছুটা মাথাচাড়া দিয়েছে ব্রয়লার মুরগি, ছোলা, বেগুন, লেবু, শসা ও বিদেশি ফল। এগুলোর বেশির ভাগই ইফতারির পণ্য। 

তেল এখনও বেতাল

দুই মাসের বেশি সময় ধরে ভোজ্যতেলের বাজারে চলছে অরাজকতা।

 বড় আকারে শুল্ককর ছাড় দেওয়া হলেও আমদানিকারকরা ভোক্তার সঙ্গে ‘ইঁদুর-বিড়াল খেলা’ থেকে বের হতে পারেননি। নানা অজুহাতে ফের সামনে এনেছেন দর বাড়ানোর আবদার। যদিও তা আমলে নিচ্ছে না সরকার। ফলে বিলম্ব আমদানি দেখিয়ে সরবরাহ কমানোর অভিযোগের তীরে বিদ্ধ তারা।

গেল সপ্তাহে ভোক্তা অধিদপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আমদানিকারকদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গতকাল থেকে ভোজ্যতেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার কথা ছিল। তবে সেটি যে ‘কথার কথা’ ছিল, তা ক্রেতারা টের পেয়েছেন বাজারে গিয়েই। গতকাল বুধবার ঢাকার মহাখালী, হাতিরপুল, তেজকুনিপাড়া ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভোজ্যতেলের সংকট আরও প্রবল হয়েছে। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ১০ দোকান খুঁজলে মেলে দুই-এক দোকানে। একসঙ্গে পাঁচ লিটার কিনলে দামে কিছুটা সাশ্রয় হয়। সে জন্য এই বোতলের চাহিদা বেশি। খোলা সয়াবিনের সরবরাহ স্বাভাবিক দেখা গেলেও কিনতে গিয়ে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। সরকার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দর ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ১৮০ থেকে ১৮২ টাকা দরে। কারওয়ান বাজারের আবদুর রব স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো.

নাইম বলেন, পাইকারিতে প্রতি লিটার কেনা পড়ে ১৭৫ টাকার বেশি, এর সঙ্গে আছে অন্যান্য খরচ। এ জন্য বাড়তি দরে বিক্রি করতে হয়। 

তেজগাঁওয়ের মেঘনা গ্রুপের ডিলার মায়ের দোয়া স্টোরের মালিক হেলাল উদ্দিন বলেন, তিনবার ক্রয়াদেশ নিয়েছে বিপণনকর্মী। তবে তেল এখনও পায়নি। তা ছাড়া পাঁচ কার্টন তেলের চাহিদা দিলে কোম্পানি পাঠায় দুই কার্টন। 

কারওয়ান বাজারের পুষ্টি ব্র্যান্ডের ডিলার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে, তবে স্বাভাবিক হয়নি। যেখানে দৈনিক দরকার ২০ কার্টন, দিচ্ছে ১০ কার্টন। ফলে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ সংকট রয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দুই-তিনটা প্রতিষ্ঠানের মিল বন্ধ। ফলে অন্য কোম্পানির ওপর চাপ বেড়েছে, সে জন্যই ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।  

চট্টগ্রামেও মিলছে না তেল

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানিয়েছে, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও মিলছে না ভোজ্যতেল। খুচরা বাজারে হন্যে হয়ে খুঁজেও তেল কিনতে পারছেন না ভোক্তা। রমজান ঘনিয়ে এলেও স্বাভাবিক হচ্ছে না সরবরাহ। বেশির ভাগ বাজারে এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন মিলছে না। কয়েকটি স্থানে পাঁচ লিটারের বোতল পাওয়া গেলেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।

এ ব্যাপারে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক তাসলিম শাহরিয়ার বলেন, মাত্র একটি কোম্পানির কিছু তেল এসে বন্দরে পৌঁছেছে। মেঘনার একটি জাহাজ আসবে শুক্রবার, আরেকটা আসবে ৬ মার্চ। দেরিতে তেল আসার কারণে বাজার ধরতে পারছি না। এতে লোকসানের আশঙ্কা করছি।

লেবুর বাজার চড়া

ইফতারে লেবুর শরবত কমবেশি সবার পছন্দ। সেই লেবুর বাজার ছয়-সাত দিন ধরে চড়া। হালিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। বাজারে এখন মাঝারি আকারের এক হালি লেবু কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ৪০ থেকে ৮০ টাকা, যা সপ্তাহখানেক আগে কেনা গেছে ২০ থেকে ৫০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের লেবু বিক্রেতা হামিদ মিয়া বলেন, এখন লেবুর মৌসুম নয়। সে জন্য চাহিদা বেশি থাকলেও বাজারে সেই হারে লেবু আসছে না। ফলে মাসখানেক ধরেই লেবুর দাম বাড়তি।

মাল্টারও দামও বেড়েছে। এক সপ্তাহে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায়। এভাবে কমলা, আপেল ও আঙুরের দামও বেড়েছে কেজিতে সর্বোচ্চ ২০ টাকা। পাশাপাশি দেশি ফলের দামও কিছুটা চড়েছে। তিন-চার দিন আগে পেয়ারার কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল শতক ছুঁয়েছে। একইভাবে বিভিন্ন জাতের কলা ডজনে ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়তি দেখা গেছে।

প্রথা ভেঙেছে খেজুর

রোজার শুরুতে খুচরা বাজারে খেজুরের আগুনদর থাকাটাই ছিল নিয়ম। এবার খেজুরের দাম উল্টো পড়ে গেছে। ১৫ থেকে ২০ দিনে মানভেদে খেজুর কেজিতে কমেছে ২০ থেকে ১০০ টাকা। বেশি চাহিদা জায়েদি খেজুরের। গত বছর মানভেদে কেজি ছিল ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এবার কেনা যাচ্ছে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। গত বছর এ সময় মাবরুর জাতের খেজুরের দাম ছিল ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, এবার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকার আশপাশে। আজওয়া বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ৯০০ থেকে হাজার টাকা। কেজিতে ২০০ টাকার মতো কমে মেডজল খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায়। এভাবে অন্য জাতের খেজুরের দামও কমেছে।

আমদানিকারকরা বলছেন, এবার রমজানে খেজুরের দাম গতবারের চেয়ে অন্তত ২০ শতাংশ কম হবে। শুল্ক কর কমানোর কারণে আমদানি বেড়েছে। ফলে দাম কমছে। বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমদানিতে শুল্ক কর কমানোর কারণে দাম কিছুটা কমেছে। তবে যৌক্তিক শুল্কায়ন মূল্য কমানো হলে খেজুরের দাম আরও কমবে।

বেগুন এখনও নাগালে

ইফতারির অন্যতম পদ বেগুনি। এর মূল উপাদান বেগুন। বেগুনে আগুন– রোজার আগে এমন শিরোনাম বহুবার দেখেছেন ক্রেতা। এবারও সেই পথে বেগুন হাঁটবে কিনা, তা নিয়ে জনমনে রয়েছে উদ্বেগ। তবে এখন পর্যন্ত দাম নাগালে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। সপ্তাহখানেক আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সেই হিসাবে এরই মধ্যে কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা।

বেড়ে আবার কমেছে ছোলা

মাস দুয়েক আগে ছোলার দাম বেড়ে ১৩০ টাকা ছাড়িয়েছিল। এখন দাম নেমেছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। তবে এই দাম গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি। গত বছর এ সময় ছোলার কেজি ছিল ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে ছোলার চাহিদা বছরে ১ লাখ ৫০ হাজার টন। রমজানে লাগে প্রায় লাখ টন। যদিও ছোলা আমদানিকারকরা বলছেন, দেশে প্রতিবছর ছোলার চাহিদা দুই লাখ টনের মতো। এবার পর্যাপ্ত ছোলা আমদানি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত চার মাসে প্রায় ৫৮ হাজার টন ছোলা আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে।

গরুর মাংস ৭৫০

এবার গরুর মাংসের দাম তেমন বাড়েনি। কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে। তবে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের ভরসা ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। এ ছাড়া সোনালি জাতের মুরগির কেজি কেনা যাচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা দরে।

যেখানে স্বস্তি

কিছুটা স্বস্তির খবর আছে চিনি, সবজি, আলু, পেঁয়াজে। ফলন বেশি হওয়ায় এখন আলুর কেজি নেমেছে ২০ টাকায়। গত বছর এ সময় আলুর কেজি ছিল ৩০ টাকার মতো। একই পরিস্থিতি পেঁয়াজে। গত বছর এ সময় পেঁয়াজের কেজি ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা। এখন প্রায় তিন ভাগের এক ভাগে নেমেছে দাম। মান ও জাতভেদে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। সবজির দামও বেশ কম। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে। কাঁচামরিচের কেজি কেনা যাচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। তবে গত চার-পাঁচ দিনের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

গত বছর এ সময় চিনির কেজি ছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। এবার তা কেনা যাচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়।

কারা কী বলছেন

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, অনেক দিন ধরেই বোতলজাত সয়াবিন বাজার থেকে উধাও। ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে এগুলো উধাও করেছেন। এ নিয়ে রিফাইনারগুলো এবং তাদের ডিস্ট্রিবিউটররা একে অপরের ওপর দোষারোপ করছেন। তবে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। সরকারের উচিত, রমজানের আগে তদারকি জোরদার করা। যাতে ব্যবসায়ীরা সরবরাহ ঘাটতি দেখিয়ে কোনো পণ্যের দাম বাড়াতে না পারেন।
তবে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ ঘাটতি নিয়ে ভোক্তার অভিযোগকে উড়িয়ে দিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান। সমকালকে তিনি বলেন, তেলের সংকটের বিষয়টি সঠিক নয়। বাজারে অভাব নেই। সব জায়গায় ভরপুর তেল আছে। শুধু ভোজ্যতেল নয়, কোনো পণ্যের সংকট নেই। 

এদিকে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কার্যদিবসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রমজানে ভোক্তাদের স্বস্তিতে রাখতে যে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তা ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এখন অগ্রাধিকার কর্মসূচি। একই সঙ্গে টিসিবির পণ্য বিক্রির তদারকি জোরদার করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন ত যপণ য ক রওয় ন ব জ র ভ জ যত ল র ব যবস য় র সরবর হ স র সরবর হ আমদ ন ক ১০ ট ক ২০ ট ক ৫০ ট ক ৩০ ট ক ২০ থ ক ক র টন ৫০ থ ক রমজ ন গতক ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার বসার দাবি উচ্ছেদ হওয়া হকারদের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা থেকে সম্প্রতি উচ্ছেদের শিকার হকাররা আবারও আগের জায়গায় বসার দাবি জানিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে শাহবাগে বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন ভবনের ২ নম্বর কক্ষে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ ও ভুক্তভোগী হকারদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মাশরুমচাষি ও ক্যাম্পাসে হকারদের কাছে মাশরুম সরবরাহকারী রুবি আক্তার। সঞ্চালনা করেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ঢাকা জেলার আহ্বায়ক শবনম হাফিজ। এতে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম, ঢাকা জেলা কমিটির সদস্য ইকবাল কবির ও আঁখি মনি এবং ভাসমান উদ্যোক্তা নুরুজ্জামান কমলসহ উচ্ছেদের শিকার কয়েকজন হকার।

মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন শবনম হাফিজ। তিনি বলেন, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক হকার কাজ করতেন। গত অক্টোবরে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগ এনে ডাকসুর সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এতে অসংখ্য হকার বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পড়েছেন।

শবনম হাফিজ আরও বলেন, এই মানুষগুলোকে উচ্ছেদের নামে হয়রানি করা হলো, জিনিসপত্র নষ্ট করা হলো। এই ক্ষতির জবাবদিহি চাই, ক্ষতিপূরণ চাই এবং তাঁদের যেন সসম্মানে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়, সেটি চাই। প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ যেন তাঁদের পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করে দেয়।

আয়োজকেরা বলেন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ও ভুক্তভোগী হকাররা উচ্ছেদের পর নিজেদের কার কী পরিস্থিতি ও কীভাবে তাঁদের বর্তমান জীবন চলছে, তা জানতে একটি জরিপ পরিচালনা করছেন। এর আওতায় এ পর্যন্ত তাঁরা ৫০ জনের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছেন। এর মধ্য দিয়ে যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে, তা তুলে ধরার লক্ষ্যেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে রুবি আক্তার নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির সময় স্বামীর গাড়ি ভাড়ার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরা মাশরুম চাষ শুরু করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চাহিদার ওপরই নির্ভর ছিল তাঁদের সংসার। হকার উচ্ছেদের পর সেই বাজার প্রায় হারিয়ে গেছে।

রুবি আক্তার বলেন, ‘একজন হকারের সঙ্গে আরও অনেকের আয় জড়িয়ে থাকে—সরবরাহকারী, পানিওয়ালা ও সবজিওয়ালা। একজনের আয় বন্ধ হলে বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা চাই, হকারদের কাজের জায়গা আবারও ফিরিয়ে দেওয়া হোক, বসতে দেওয়া হোক আগের জায়গায়। তাতে আরও অনেক পরিবার বেঁচে যাবে।’

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, হকার উচ্ছেদ ডাকসুর দায়িত্ব নয়। এটি মানবিক বা ন্যায়সংগত কোনো পদক্ষেপ নয়। হকারদের সম্মানজনক ব্যবসার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। এ বিষয়ে যথাযথ পরিকল্পনা করা সম্ভব।

ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম বলেন, জনগণের মৌলিক অধিকার ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ করা অন্যায় ও অমানবিক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও কয়েকজন হকার নিজেদের বর্তমান সংকটের কথা জানান।

চার দফা সুপারিশ

অনুষ্ঠানে আয়োজকেরা চার দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হলো উচ্ছেদ করা হকারদের আগের কাজের জায়গায় ফেরার সুযোগ দেওয়া; কিছুদিন পরপর উচ্ছেদের নামে হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করা এবং যাঁরা এই নির্যাতন করেছেন, তাঁদের বিচার করা; প্রয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা সিটি করপোরেশন বা নিজেদের সমবায় বা ট্রেড ইউনিয়নের পরিচয়পত্র ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা এবং কয়েক দফায় ভাসমান উদ্যোক্তাদের হাঁড়িপাতিল ও অন্যান্য যে মালামাল প্রক্টরিয়াল টিম নিয়ে গেছে, তা দ্রুত ফেরত দিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেপিএমে চার দিন বাদে ফের ‌‘ব্যালটের কাগজ’ ছাপা শুরু
  • নতুন মাদক এমডিএমবি জব্দ, চক্রের হোতাসহ গ্রেপ্তার ৪
  • কমেছে সবজির দাম, বেড়েছে মাছের দাম
  • বাজারে বাড়তি পেঁয়াজ ও সয়াবিন তেলের দাম
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার বসার দাবি উচ্ছেদ হওয়া হকারদের
  • কম্পিউটার বাজারে র‍্যামের সরবরাহে ঘাটতি
  • রাজশাহীতে দুই বছরের শিশু ৩০ ফুট গভীর গর্তে, ফায়ার সার্ভিস অক্সিজেন দিচ্ছে
  • পলিয়েস্টারের শাল ১০ বছর ধরে রেশমের বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে মন্দিরে