বাসচালককে লাঠি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিবাদে শ্রমিকরা দুই ঘণ্টা ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। 

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পৌরসভার নতুন বাজার এলাকায় পরিবহন শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন।

স্থানীয়রা জানান, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখতে থানার বিপরীতে পৌরসভার পাশে বাস দাঁড়াতে নিষেধ করে প্রশাসন। আজ সকালে পৌরসভার পাশে ইসলাম পরিবহনের একটি বাস দাঁড় করানোকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বাসচালক মোহাম্মদ বুলু মিয়াকে লাঠি দিয়ে মারধর করেন। এরই প্রতিবাদে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। এসময় সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের আশ্বাসে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন।  

আরো পড়ুন:

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক, কয়েকটি কারখানায় ছুটি

কেয়া গ্রুপের শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

মারধরের শিকার বাসচালক বুলু মিয়া বলেন, ‍“ঢাকায় যাওয়ার জন্য ভাবকির মোড় থেকে বাসটি নিয়ে পৌরসভার পাশে আসি। এসময় ইউএনও বাসে উঠে আমাকে লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করেন। এতে আমি আহত হই। পরে আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এতো বড় কর্মকর্তা এভাবে আমাকে মারবেন কখনো ভাবতে পারিনি। আমি সঠিক বিচার চাই।” 

চালক রুস্তম আলী বলেন, “গাড়ি চালানো অবস্থায় একজন চালককে ইউএনও যেভাবে মারলেন সেটা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এ ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছি। বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। আপাতত প্রশাসনের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেছি।” 

যানজটে আটকে থাকা বাসযাত্রী পারভীন আক্তার বলেন, “চালকরা সড়ক অবরোধ করায় আমরা ভোগান্তিতে পড়েছি। দুই ঘণ্টা পর পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।” 

এ বিষয়ে জানতে মুক্তাগাছা উপজেলার ইউএনও আতিকুল ইসলামের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। 

মুক্তাগাছা থানার ওসি মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, “বাসচালককে ইউএনও লাঠি দিয়ে মারধর করায় শ্রমিকরা প্রায় দুই ঘণ্টা ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে যানজট সৃষ্টি হয়। পরে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন। আজ সন্ধ্যায় বসে আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।”

ঢাকা/মিলন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম রধর ইউএনও ব ক ষ ভ কর প রসভ র ভ কর ন চ লকক য নজট ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

হাড়ভাঙা পরিশ্রমে পুরুষের অর্ধেকের কম বেতন নারীর

লিমা আক্তার কাজ করতেন ময়মনসিংহ নগরীর একটি রেস্তোরাঁয়। প্রতিদিন তাঁর ডিউটি শুরু হতো বেলা ১১টায়, শেষ হতো রাত ১২টায়। তাঁর কাজ ছিল বাবুর্চির রান্নার কাজে সহায়তা করা। প্রতিদিন ১৩ ঘণ্টা কাজ করেও তাঁর দৈনিক মজুরি ২৫০ টাকা। অথচ মূল বাবুর্চির দৈনিক বেতন এক হাজার টাকা। সংসার সামলে স্বল্প বেতনে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় কাজ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বাধ্য হয়েই চাকরি ছাড়েন তিনি।

একই চিত্র দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বেলায়। সরেজমিন দেখা যায়, রাত ১০টার পর থেকে বিপণিবিতানগুলো বন্ধ হলে কাজ শুরু হয় তাদের। এ কাজে পুরুষের চেয়ে নারীর অংশগ্রহণ বেশি। তাদের অভিযোগ, রাত ১১টা থেকে কাজ শুরু হলে শেষ হয় রাত ২-৩টায়। এত রাতে কাজ শেষ করে নিরাপদে বাসায় যাতে পারেন না। এ কাজে মজুরিও অনেক কম।

সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, নগরীতে নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। তারা মাসিক বেতন পান ৭ হাজার ৮০০ টাকা। নারী অধিকারকর্মীরা জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানেও নারীর প্রতি বৈষম্য মেনে নেওয়ার মতো না। তাদের দাবি– বিশ্ববিদ্যালয়, সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম মজুরি সরকারি প্রজ্ঞাপনে ধরা আছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাচ্ছেন মাত্র ২০০-২৫০ টাকা।

সুলেখা নামে এক নারী কর্মীর ভাষ্য, এত অল্প আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। আবার রাত-বিরাতেও কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন ঝামেলা পোহাতে হয়।

ময়মনসিংহের ইটভাটাগুলোতে কাজ করেন শতাধিক নারী কর্মী। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করলেও পুরুষের চেয়ে অর্ধেক বেতন জোটে। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে তারা মজুরি পান ২৫০-৩০০ টাকা। যেখানে একজন পুরুষ একই কাজ করে মজুরি পান ৬০০-৭০০ টাকা। একই অবস্থা চালকলগুলোতে। শতাধিক চালকলে কাজ করেন কয়েক হাজার নারী শ্রমিক। নারীর তুলনায় এখানে দ্বিগুণ বেতন পান পুরুষ।

ময়মনসিংহ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সূত্রমতে, জেলার ইটভাটাগুলোতে ৮০ শতাংশ পুরুষের সঙ্গে কাজ করেন ২০ শতাংশ নারী। তবে ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন পোশাক কারখানা ও স্পিনিং মিলগুলোতে কাজ করেন ৬৫-৭০ শতাংশ নারী শ্রমিক। সরকারি প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস হলেও এসব কারখানায় খুব একটা ছুটি মেলে না। তাদের অভিযোগ, অধিকাংশ নারীকেই অন্তঃসত্ত্বা হলে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। পরে আবার নতুন চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়।

ট্রেড ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, নারীদের সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কাজ না করানোর নির্দেশনা থাকলেও নিয়ম মানছে না অধিকাংশ কারখানা। রাত ১২টা থেকে ১টায় অনেক কারখানা ছুটি হলে ঘরে ফিরতে অনিরাপদ বোধ করেন নারী কর্মীরা। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে ও রাস্তায় যৌন হেনস্তার শিকার হন অনেকে। এসব বিষয়ে ‘অ্যান্টি হেরেজমেন্ট কমিটি’ থাকলেও বাস্তবে সুফল পাচ্ছেন না শ্রমিকরা।

ট্রেড ইউনিয়নের নারী নেত্রী নওশীন বৃষ্টি জানান, মাঝে মাঝেই খবর আসে অফিস বা কর্মস্থলেই সন্তান প্রসব করেন নারী শ্রমিকরা। যা একইভাবে নিয়োগ কর্তার গাফিলতি ও শ্রমিকের অসচেতনার ইঙ্গিত দেয়। নিয়োগ কর্তা বা মালিক পক্ষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ছুটি দিতে চান না। তার ওপর আবার বেতনসহ ছুটি দেওয়া তো আকাশ ছোঁয়ার মতো ব্যাপার। 

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন সমকালকে বলেন, ময়মনসিংহে হোটেল রেস্টুরেন্টে সব মিলিয়ে পাঁচ হাজার নারী শ্রমিক কাজ করেন। তাদের দিয়ে পুরুষের তুলনায় অনেক কম বেতনে কাজ করানো হয়। তাঁর মতে, নারীরা সমাজে পুরুষের সমকক্ষ হওয়ার জন্য দেশে প্রচলিত বিভিন্ন রকম শ্রমশোষণ ও বিভাজন ভেঙে ফেলতে হবে।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ময়মনসিংহের শ্রম পরিদর্শক (সেফটি) তুহিনুর রহমান জানান, কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে শ্রমিকদের প্রতি মাসে ৫০-৬০টি অভিযোগ আসে। ১২৪-এর ক ধারায় ত্রিপক্ষীয় সালিশের মাধ্যমে এগুলো নিষ্পত্তি করা হয়। এ ছাড়া ১৬৩৫৭ নম্বরে ট্যুল ফ্রি ফোন করে অভিযোগ জানালে বিষয়গুলো বিবেচনা করে শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় কাজ করে অধিদপ্তর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাতে ‘টর্চলাইট জ্বালিয়ে’ দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ইউএনও-ওসিসহ আহত ৩০
  • ২৩৮ বছরে কী পেল আর কী পেল না ময়মনসিংহ জেলা
  • পড়াশোনায় ফিরছেন দিনাজপুরের ‘ইংলিশম্যান’ হৃদয়, শেখাবেন ইংরেজি
  • হাড়ভাঙা পরিশ্রমে পুরুষের অর্ধেকের কম বেতন নারীর
  • আ.লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা
  • নারায়ণগঞ্জে ৩০ স্কুলে চালু হলো ‌‘মিড ডে মিল’
  • গাজীপুরে ১০ মাটি খেকোকে কারাদণ্ড
  • পাঠাগার থেকে লুট হওয়া বই ফেরত পেলো কর্তৃপক্ষ
  • দমদমিয়া আলোর পাঠশালায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিলেন ইউএনও
  • রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ, লুট হওয়া বই ফেরত পেল পাঠাগার কর্তৃপক্ষ