পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) গতকাল বৃহস্পতিবারও অচলাবস্থা ছিল। সংস্থাটির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা কার্যালয়ে গেলেও পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী কর্মবিরতি পালন করেন। যে কারণে এদিন সংস্থাটিতে কোনো কাজ হয়নি।

এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় অচলাবস্থা থাকলেও গতকাল শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন ও সূচক দুটোই আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে। ঢাকার বাজারে এদিন ৩৫৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ৩৫ কোটি টাকা বেশি। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৭ পয়েন্ট বেড়েছে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারের পদত্যাগের দাবিতে বৃহস্পতিবার কর্মকর্তা–কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করলেও এদিন বেলা তিনটার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় কার্যালয়ে আসেন বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও তিন কমিশনার। তবে এদিন দৈনন্দিন কোনো কাজ হয়নি কমিশনে। চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা কার্যালয়ে ফিরলেও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাৎ হয়নি। রমজানে অফিস সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনটার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তা–কর্মচারী কার্যালয় ত্যাগ করেন। তার আগে আন্দোলনকারী কর্মকর্তা–কর্মচারীরা সংবাদ সম্মেলন করে চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারের পদত্যাগের দাবি পুনরায় উত্থাপন করেন। অন্যদিকে কার্যালয়ে ফিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কর্মীদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন কমিশনার ফারজানা লালারুখ।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার চার দফা দাবিতে চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারকে চার ঘণ্টা কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখেন সংস্থাটির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। এ সময় তাঁরা বিএসইসি ভবনের বিদ্যুৎ–সংযোগ ও সিসিটিভি বন্ধ করে দেন। পরে সেনা হস্তক্ষেপে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে কার্যালয় ত্যাগ করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনার। ওই দিনই সংস্থাটির বিক্ষুব্ধ কর্মীরা পুরো কমিশনের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।

ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সকাল থেকে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কার্যালয়ে গেলেও দাপ্তরিক কোনো কাজ করেননি। তাঁদের একটি অংশ বিএসইসি কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় মাল্টিপারপাস হলে অবস্থান নেন। আর নির্বাহী পরিচালকেরা নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করেন। অন্যদিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বিএসইসি ভবনের পঞ্চম তলায় অবস্থিত চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের ফ্লোরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ছিল সুনসান নীরবতা। তিনটার পর চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনার কার্যালয়ে ফিরলে সে ফ্লোরে সাংবাদিকেরা সেখানে ছুটে যান।

সরকার আমাদের একটি মিশন দিয়ে এখানে পাঠিয়েছে। সেই মিশন থেকে আমরা একচুল পরিমাণ সরব না। কোনো ধরনের অন্যায় দাবির কাছে আমরা মাথা নত করব না। আমরা আমাদের কাজ নিয়মনীতি ও নিষ্ঠার সঙ্গে করে যাবখন্দকার রাশেদ মাকসুদ, চেয়ারম্যান, বিএসইসি।  

কার্যালয়ে ফিরে বিএসইসির চেয়ারম্যান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার আমাদের একটি মিশন দিয়ে এখানে পাঠিয়েছে। সেই মিশন থেকে আমরা একচুল পরিমাণ সরব না। কোনো ধরনের অন্যায় দাবির কাছে আমরা মাথা নত করব না। আমরা আমাদের কাজ নিয়মনীতি ও নিষ্ঠার সঙ্গে করে যাব।’ এ সময় তিন কমিশনারও তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর বিষয়ে নিয়মনীতি মেনেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সময় তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১২টি কোম্পানির অনিয়মের তদন্তে গঠিত কমিটি ৭টির বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর মধ্যে তিনটির বিষয়ে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এনফোর্সমেন্ট শেষে সব তদন্ত প্রতিবেদন বিএসইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

এদিকে গত বুধবার দিনভর বিএসইসিতে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেকের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। বিএসইসির চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনার এদিন সচিবালয়ে গিয়ে সচিবের কাছে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ পুরো কমিশনকে তাদের কার্যক্রম জোরালোভাবে চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়।

অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ সম্মেলন

বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে বর্তমান কমিশনের পদত্যাগ, মিথ্যা তথ্য দিয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী ডেকে এনে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের লাঠিচার্জ করার ঘটনার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা, কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার হিসেবে অভিজ্ঞ ও যোগ্য লোক নিয়োগে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ, কমিশনকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান এবং তা দ্রুত বাস্তবায়ন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসচিব মোল্যা মো.

মিরাজ উস সুন্নাহ। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনটির আহ্বায়ক ও বিএসইসির পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক হাসান মাহমুদ, মাহবুবুল আলম, মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, মোহাম্মদ রেজাউল করিম, মোহাম্মদ শফিউল আজম, রিপণ কুমার দেবনাথ, মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

চেয়ারম্যানসহ কমিশন পদত্যাগ না করলে কর্মকর্তা–কর্মচারীরা তাঁদের ঘোষিত কর্মবিরতি অব্যাহত রাখবেন কি না, এ প্রশ্নের সুষ্পষ্ট জবাব দেওয়া হয়নি সংবাদ সম্মেলনে। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বলা হয়, ‘আমরা কার্যালয়ে আছি। প্রয়োজনীয় কাজও করছি। ভবিষ্যতে কী হবে, এ বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।’ অ্যাসোসিয়েশেনর এই বক্তব্যের পর রোববার থেকেও কর্মবিরতি চলবে কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। কর্মীরাও সুস্পষ্ট করে কোনো কিছু বলতে পারছেন না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কর মকর ত র পদত য গ অন য য় দ র এক আম দ র অবস থ এ সময় সরক র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
  • ২২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দেবে বিএসইসি
  • পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
  • বিএসইসির তদন্তের মুখে ভ্যানগার্ড ও ক্যাপিটেক অ্যাসেট
  • দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে পুঁজিবাজার ও বন্ডকে ব্যবহারের প্রস্তাব
  • ৫ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ৩ জনকে দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড