নারীরই হয় এমন রোগ ১২টি, আক্রান্ত ৪ কোটি ৩৫ লাখ
Published: 8th, March 2025 GMT
কিছু রোগ আছে পুরুষের হয় না, নারীর হয়। শুধু নারীদের হয়, এমন ১২ ধরনের রোগে দেশে প্রায় ৪ কোটি ৩৫ লাখ নারী ভুগছেন। প্রতিবছর এর সঙ্গে আরও কয়েক লাখ নারী যুক্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন তাঁরা। নারীর চিকিৎসা ও সুরক্ষায় পৃথকভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগও জরুরি।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য–উপাত্ত ও যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বৈশ্বিক রোগতাত্ত্বিক পরিস্থিতি নজরদারি ও বিশ্লেষণ করছে আইএইচএমই। তাদের প্রকাশিত গবেষণার তথ্য থেকে বাংলাদেশের নারী স্বাস্থ্যবিষয়ক পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানূর রহমান।
শুধু নারীর হয় এমন রোগ বা সমস্যার তালিকায় আছে মাসিক–পূর্ব শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ, জরায়ুমুখ ক্যানসার, জরায়ু ক্যানসার, ডিম্বাশয়ের ক্যানসার, জননাঙ্গ বের হয়ে আসা, বন্ধ্যত্ব, জরায়ুস্তরের প্রদাহ (এন্ডোমেট্রিওসিস), ডিম্বাশয়ে গোটা, জরায়ুতে গোটা, টার্নান উপসর্গ (জিনজনিত সমস্যা), জরায়ু ও জরায়ুমুখে নির্বিরোধ ক্যানসার। এ ছাড়া আছে আরও কিছু স্ত্রীরোগ (যোনিপ্রদাহ, জরায়ুমুখের কোষের অস্বাভাবিকতা, শ্রোণি অঞ্চলে প্রদাহ)।পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শুধু নারীর হয়, এমন ১২ ধরনের রোগে আক্রান্তের অনুমিত সংখ্যা ৪ কোটি ৩৫ লাখের কিছু বেশি। এসব রোগে প্রতিবছর আনুমানিক ৮ হাজার ৬৫০ নারীর মৃত্যু হয়। কিছু রোগ নারীকে দুর্বল ও বিপর্যস্ত করে। বিপুলসংখ্যক নারী অসুস্থ থাকার কারণে তাঁদের কর্মঘণ্টাও নষ্ট হয়।
আহমেদ এহসানূর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কিছু রোগ একান্তভাবে নারীর। তাতে শুধু নারীরাই ভোগেন, কিন্তু তা নিয়ে সমাজে বা রাষ্ট্রে আলোচনা কম হয়। গবেষণাও কম। তথ্য পাওয়া কঠিন। এসব রোগে আক্রান্ত নারীদের নিয়ে জাতীয় জরিপ ও গবেষণা হলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব হতো।
কিছু রোগ একান্তভাবে নারীর। তাতে শুধু নারীরাই ভোগেন, কিন্তু তা নিয়ে সমাজে বা রাষ্ট্রে আলোচনা কম হয়। গবেষণাও কম। তথ্য পাওয়া কঠিন। আহমেদ এহসানূর রহমান সদস্য, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১০ লাখ। এর অর্ধেকের বেশি নারী। দেশে নারীর স্বাস্থ্যের বিষয়টি মাতৃ ও প্রজননস্বাস্থ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। মাতৃস্বাস্থ্য ও প্রজননস্বাস্থ্যের বাইরেও নারীর ভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য চাহিদা রয়েছে। যদিও গবেষণা, ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা চিকিৎসা বিধিমালা তৈরির ক্ষেত্রে নারীস্বাস্থ্যকে কম গুরুত্ব দেওয়ার অভিযোগ আছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাতৃ বা প্রজননস্বাস্থ্যের মধ্যে আটকে না থেকে আমরা নারীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর জোর দিচ্ছি। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে কোথায় নারী–পুরুষে বৈষম্য হয়, তা বের করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবার প্রাপ্যতা ও ব্যবস্থাপনা নারীর জন্য সহজ করতে হবে। অসংক্রামক রোগ থেকে নারীকে সুরক্ষা দেওয়ার জোরদার পদক্ষেপ নিতে হবে। কমিশনের কাছে নারীর স্বাস্থ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
যে রোগ শুধুই নারীরএমন ধারণা আছে, রোগ নারী–পুরুষ, ধনী–দরিদ্র, জাতি–ধর্ম চেনে না বা মানে না। তবে কিছু রোগ আছে শুধু পুরুষের হয়, যেমন প্রোস্টেট ক্যানসার। এমন অনেক রোগ বা শারীরিক সমস্যা আছে, যা শুধু নারীর হয়।
শুধু নারীর হয় এমন রোগ বা সমস্যার তালিকায় আছে মাসিক–পূর্ব শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ, জরায়ুমুখ ক্যানসার, জরায়ু ক্যানসার, ডিম্বাশয়ের ক্যানসার, জননাঙ্গ বের হয়ে আসা, বন্ধ্যত্ব, জরায়ুস্তরের প্রদাহ (এন্ডোমেট্রিওসিস), ডিম্বাশয়ে গোটা, জরায়ুতে গোটা, টার্নান উপসর্গ (জিনজনিত সমস্যা), জরায়ু ও জরায়ুমুখে নির্বিরোধ ক্যানসার। এ ছাড়া আছে আরও কিছু স্ত্রীরোগ (যোনিপ্রদাহ, জরায়ুমুখের কোষের অস্বাভাবিকতা, শ্রোণি অঞ্চলে প্রদাহ)।
শুধু পুরুষের হয় এমন রোগের তালিকায় রয়েছে প্রোস্টেট ক্যানসার, অণ্ডকোষের ক্যানসার, প্রোস্টেট বড় হয়ে যাওয়া, বন্ধ্যত্ব ও জিনগত ত্রুটি।
পরিস্থিতি বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে খারাপইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৈশ্বিকভাবে নারীদের ১০ ধরনের রোগ বেশি। শীর্ষ এই রোগের তালিকায় আছে (বেশি থেকে কম) স্তন ক্যানসার, মেরুদণ্ডের নিচের দিকে ব্যথা বা লো ব্যাক পেইন, আয়রনস্বল্পতা, বিষণ্নতা, আলঝেইমারসসহ অন্যান্য ভুলে যাওয়া রোগ, মাথার যন্ত্রণা, উদ্বেগ, বিভিন্ন ধরনের হাড়–পেশির রোগ, ওস্টিওআর্থ্রাইটিস ও ঘাড়ের ব্যথা।
দেখা যাচ্ছে, বৈশ্বিকভাবে ১ লাখ নারীর মধ্যে ৪৫৫ জন মেরুদণ্ডের নিচের দিকে ব্যথায় আক্রান্ত। দেশে ১ লাখ নারীর মধ্যে ৫৭৫ জনের এ রোগ আছে, অর্থাৎ বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে ১২০ জন বেশি।
সারা বিশ্বে প্রতি লাখ নারীর মধ্যে বিষণ্নতায় ভোগেন ৩০৭ জন। বাংলাদেশে বিষণ্নতায় আক্রান্ত প্রতি লাখে ৪৮৮ জন। বিশ্বে প্রতি লাখ নারীর মধ্যে হাড় ও পেশির নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত ২৪৩ জন নারী, বাংলাদেশে ভুগছে ৫২১ জন, অর্থাৎ এই তিন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে খারাপ।
আলঝেইমারসসহ অন্যান্য ভুলে যাওয়া রোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীদের অবস্থা ভালো বলা যায়। দেখা যাচ্ছে, এসব রোগে বৈশ্বিকভাবে ১ লাখে ২৮৯ জন নারী আক্রান্ত। দেশের ক্ষেত্রে তা ২৫ জন। বাকি রোগগুলোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীদের অবস্থা বৈশ্বিক গড়ের কাছাকাছি বা গড়ের চেয়ে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো।
শীর্ষ ১০টি রোগের বাইরে মাতৃস্বাস্থ্য–সংশ্লিষ্ট কিছু সমস্যা আছে। সন্তানধারণ ও সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে অনেক নারী স্বাস্থ্য জটিলতায় পড়েন। এর মধ্যে আছে রক্তক্ষরণ, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক রোগ, গর্ভপাত, গর্ভ নষ্ট, নানা ধরনের সংক্রমণ। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ নারী এসব সমস্যায় পড়েন। এতে বছরে চার হাজারের বেশি মায়ের মৃত্যু হয়। মাতৃমৃত্যু নিয়ে আলোচনা হলেও নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা নারীদের নিয়ে আলোচনা ও সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে কথা কম হয়।
পদক্ষেপ জরুরিনারীর স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের আলোচনায় প্রথমেই নারীর প্রতি বৈষম্য কমানোর বিষয়টি সামনে চলে আসে। এ বৈষম্য দূর করতে রাষ্ট্রীয় নানা উদ্যোগ আছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নারী সংস্কার কমিশন এ নিয়ে কাজ করছে। কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, কমিশন প্রতিবেদনে নারীস্বাস্থ্যের উন্নতিতে জোরালো সুপারিশ থাকবে।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক কমিশনের সুপারিশেও নারীর স্বাস্থ্যকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে একাধিক কমিশন সদস্য প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। নারীদের জন্য বড় হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতালে পৃথক আয়োজন, নারীবান্ধব হাসপাতাল, নারীস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা, ওষুধ গবেষণায় নারীর সংশ্লিষ্টতা—এসব বিষয় সুপারিশে থাকবে বলে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সায়েবা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নারীস্বাস্থ্যের উন্নতিতে নীতি, জনবল খুবই জরুরি। নারীর জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল বা ইনস্টিটিউট তৈরি করা জরুরি। থাকতে পারে গবেষণাকেন্দ্র। সেভাবেই আমাদের চিন্তা করতে হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হয় এমন র গ প রথম আল ক ধরন র র গ ন র র হয় পর স থ ত উপসর গ ব ষয়ক সদস য সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
হজমের সমস্যা হলে বুঝবেন কীভাবে?
শরীরে কোনো ধরনের সমস্যা হলে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। অনেকেই সেসব লক্ষণকে পাত্তা দেন না। ধীরে ধীরে এসব সমস্যা বড় আকার নেয়। তাই যেকোন রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জেনে রাখা জরুরি। শরীরে হজমজনিত সমস্যা হওয়া মানে অন্ত্রের স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে পড়া। তাই জটিল রোগ হওয়ার আগেই কিছু লক্ষণ জেনে রাখা দরকার। যেমন-
বদহজমের সমস্যা থাকলে সারাক্ষণই পেটে একটা চিনচিনে ব্যথা, অস্বস্তি হতে পারে। কিছু খেলেই মনে হবে পেটে ব্যথা হচ্ছে। এক্ষুনি বাথরুমে দৌড়াতে হবে। বদহজমের সমস্যা মানেই হচ্ছে খাবার সঠিক ভাবে হজম না হওয়া। এর ফলে অস্বস্তিকর ঢেকুর উঠতে পারে। তাই সারাক্ষণ ঢেকুর উঠতে থাকলে সাবধান হওয়া জরুরি।
যারা অনেকদিন ধরে বদহজমের সমস্যায় ভুগছেন পানি খেলেও তাদের মনে হয় অ্যাসিডিটি হচ্ছে। এমন হলে সতর্ক হওয়া জরুরি।
সামান্য কিছু খেলেও অনেকেরই ঢেকুর উঠতে থাকে। এর অন্যতম কারণ বদহজমের সমস্যা। এই লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
খাবার দেখলে অনীহা, খিদে না থাকা, গা-গোলানো এবং বমিভাবে এগুলি বদহজমের কারণেই দেখা যায়। এইসব উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা করবেন না।
বদহজমের সমস্যা থাকলে গ্যাসেরও সমস্যা হয়। সারাক্ষণ গলায় এক ধরনের চাপ অনুভূত হয়। এমন হলে সতর্ক হোন।
বদহজমের সমস্যা থাকলে সারাক্ষণ মনে হবে পেট যেন ফুলে ফেঁপে রয়েছে। সামান্য কিছু খেলেই অস্বস্তি হবে। এইসব উপসর্গ অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
দীর্ঘক্ষণ ধরে চলতে থাকা বদহজমের সমস্যা অবহেলা করলে পরবর্তীতা পেটের বড় রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ কারণে যাদের প্রচণ্ড অ্যাসিডিটি এবং গ্যাসের সমস্যা আছে তারা ভাজাভুজি, তেলমসলা, ঝাল খাবার এড়িয়ে চলুন। সহজপাচ্য খাবার খান। প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে পানি পান করুন।