কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে জমি নিয়ে বিরোধে আবদুল মালেক নামে বৃদ্ধকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার রাতে উজিরপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, নিহত আবদুল মালেকের সঙ্গে প্রতিবেশী কামাল উদ্দিনের পরিবারের জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। যা নিয়ে উভয় পক্ষের একাধিক মামলাও চলমান। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উভয় পক্ষ ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে কামাল উদ্দিনের নেতেৃত্বে ছয়-সাতজন বৃদ্ধ আবদুল মালেককে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে বিদ্যুতের আলো নিভিয়ে দেয়। পরে তাঁকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আবদুল মালেককে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা কামাল উদ্দিন ও তার সহযোগীদের বাড়ি ঘেরাও করেন। খবর পেয়ে থানা থেকে পুলিশ গিয়ে অভিযুক্ত কামাল উদ্দিনসহ ছয়জনকে আটক করে।

নিহত মালেকের ছেলে মহিন উদ্দিন বলেন, ‘কামাল উদ্দিন গংদের সঙ্গে আমাদের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। শুক্রবার বিকেলে কামাল উদ্দিনরা বিরোধপূর্ণ জমিতে বেড়া নির্মাণ করছিলেন। এ সময় আমার বাবা বাধা দেন। এর জেরে তারা রাত সাড়ে ৯টার দিকে পরিকল্পনা করে আমার বাবার ওপর হামলা করে এবং ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।’

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিলাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে আবদুল মালেককে পিটিয়ে হত্যা করেছে কামাল উদ্দিন গংরা। মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পরলে এলাকাবাসী কামাল উদ্দিন গংদের বাড়ি ঘেরাও করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কামাল উদ্দিনসহ ছয়জনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও দু’জন নারী। এ বিষয়ে এখনও মামলা হয়নি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আবদ ল ম ল ক

এছাড়াও পড়ুন:

বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা

কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।

আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।

তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।

বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।

গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।

ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’

বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’

সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’

জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’

আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’

ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গভীর রাতে থানায় গিয়ে স্বামীর আত্মসমর্পণ, পরে ভাড়া বাসা থেকে স্ত্রীর লাশ উদ্ধার
  • শৈলকুপায় ইউপি কার্যালয়ে তালা, বিএনপি নেতাসহ আটক ৬
  • বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা