কালভার্টে দেওয়া বাঁধ খুলে দিতে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ
Published: 9th, March 2025 GMT
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী ১১নং ওয়ার্ড জায়েরটেক এলাকায় কালভার্টের মুখে বাঁধ দিয়ে মাছের খামার করতেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন। ওই কালভার্ট উন্মুক্ত করে পানি চলাচল ও পুনরায় কৃষিকাজ করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
রবিবার (৯ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই কালভার্টের ওপর দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। তারা দ্রুত চাষাবাদে ফিরতে চায় বলে জানান।
এলাকাবাসী বলেন, বিলের মতো এই এলাকায় এক সময় ধান চাষ করতেন। বর্ষায় পলিমাটি জমা হওয়ায় ধানে প্রচুর ফলন হতো। পরে জমির মালিকদের ভয় ও প্রলোভন দেখিয়ে মাছের খামার করার পরিকল্পনা করে এলাকার কয়েকজন। তারা তুরাগ নদ হতে পানি প্রবাহিত হওয়া কালভার্টটির মুখে বাঁধ দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাছের চাষ শুরু করে। জমির মালিকদের টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তা আর দেয়নি। বর্তমানে মামুন খান নামে এক ব্যবসায়ী মাছের খামার করতে বাঁধা দিতে গেলে তার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্তদের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জয়েরটেক এলাকার তাহাজ উদ্দিন বলেন, আমরা বিলের জমিতে উন্মুক্ত পানি চলাচল চাই। আমাগো খামার ভাড়া চাই না। খামার করা লাগবে না, আমরা ক্ষেতখোলা করতে চাই। আমরা ফসল ফলাতে চাই। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মালেক, শিরা, মোজাম্মেলসহ কয়েকজন অত্যাচার ও জুলুম করতো। একপ্রকার জোরপূর্বক আমাদের জমিতে খামার করে মাছ চাষ করতো।
প্রতাবপুর এলাকার হাসেম উদ্দিন বলেন, ভাড়াও দেয় না, এক বছরের কথা বলে কয়েকবছর ভোগ করছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন। আমার ৩৫ শতাংশ জমি দলিল নিয়ে ঘুরছি, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। আমার মতো ২৫-৩০ জনের জমি দখল করে ভাড়া না দিয়েই মাছ চাষ করছে।
জয়েরটেক এলাকার ইজ্জত মিয়া বলেন, এখানে আমি ধান চাষ করতাম। প্রায় দুইশ মণ ধান পাইতাম। কিছু লোক প্রলোভন দেখিয়ে এবং কালভার্ট বন্ধ করে পানি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এই কালভার্ট বন্ধ করে চাষাবাদ বাধাগ্রস্ত করে। আমরা এলাকাবাসী চাই এই কালভার্ট উন্মুক্ত করা হোক। এতে পানি চলাচল স্বাভাবিক হবে এবং আমরা পুরোদমে ফসল উৎপাদন করতে পারবো।
ঢাকা/রেজাউল/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এল ক ব স খ ম র কর এল ক র
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।