চট্টগ্রামভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেডকে’ অর্থায়ন ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে হওয়া একটি বিএনপি নেত্রী ও  সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাকিলা ফারজানাসহ ২৫ জন খালাস পেয়েছেন। আজ সোমবার চট্টগ্রামের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আবু হান্নান এই রায় দেন।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে জঙ্গি অর্থায়ন ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ৯ বছর আগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এ মামলাটি হয়। উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য শাকিলা বিএনপির সাবেক হুইপ প্রয়াত সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য।

সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি আবদুস সাত্তার সরোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই মামলায় সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে আসছেন না। মাত্র একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত বেকসুর খালাস দেন।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারীর মাদ্রাসাতুল আবু বকর (র.

)-এ অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। পরদিন র‍্যাব-৭-এর সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। এর দুদিন পর বাঁশখালীর লটমণি পাহাড়ে ‘জঙ্গি প্রশিক্ষণকেন্দ্র’ থেকে বিপুল অস্ত্রসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব । এর প্রায় দেড় মাস পর ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় র‍্যাব-৭-এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হাটহাজারী ও লটমণি পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া জঙ্গিরা চট্টগ্রামভিত্তিক নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেডের’ সদস্য।

তদন্তের একপর্যায়ে ওই বছরের ১৮ আগস্ট হামজা ব্রিগেডকে অর্থায়নের অভিযোগে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শাকিলা ফারজানাসহ তিন আইনজীবীকে। তদন্ত শেষে পরের বছরের মার্চ মাসে র‍্যাব দুই মামলায় শাকিলাসহ ৬১ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়।

দুটি মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, বাহরাইনের নাগরিক আল্লামা লিবদির নির্দেশে দেশে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে আসামিরা নতুন জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলেন। দেশে তাঁদের বড় ভাই ওরফে জুনাইয়েদ নামের একজন তাঁদের পরিচালনা করতেন। কিন্তু গ্রেপ্তার আসামিরা বড় ভাই সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি। হামজা ব্রিগেডকে সামরিক, দাওয়াহ ও মিডিয়া নামের তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। সামরিক বিভাগকে হোয়াইট, ব্লু ও গ্রিন নামে ভাগ করেন। সামরিক বিভাগের প্রধান হলেন মনিরুজ্জামান ওরফে ডন, দাওয়াহ বিভাগের প্রধান নাছির হোসেন, মিডিয়া বিভাগের প্রধান মো. আবদুল্লাহ। জঙ্গিদের কাছে অস্ত্রগুলো বিক্রি করেন অস্ত্র ব্যবসায়ী মোজাহের মিয়া। জঙ্গি অর্থায়নের জন্য মনিরুজ্জামান ওরফে ডনের তিনটি হিসাব নম্বরে আইনজীবী শাকিলা ফারজানা দুই দফায় ২৫ লাখ ও ২৭ লাখ টাকা, হাছানুজ্জামান দুই দফায় ১৫ লাখ ও ১৬ লাখ টাকা, মাহফুজ চৌধুরী ২৫ লাখ জমা করেন। হাটহাজারী ও বাঁশখালী থানার দুই মামলায় ৬১ আসামির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত।

খালাস পাওয়ার পর শাকিলা ফারজানা প্রথম আলোকে বলেন, আসামিরা আমরা কেউ জঙ্গি ছিলাম না। তৎকালীন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের মতাদর্শী হওয়ায় ষড়যন্ত্র করে  এসব মামলায় জড়ানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২ মার্চ প্রথম আলোতে ‘র‍্যাবের পলাতক জঙ্গি কারাগারে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল, মামলায় বাঁশখালী ও হাটহাজারীর ‘পলাতক জঙ্গি’ হিসেবে দেখানো হয় আজিজুল হক ও পারভেজকে। আজিজুলের খোঁজে ২২ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীর দুর্গম পাহাড়ে র‍্যাব অভিযানও চালিয়েছিল বলে দাবি করেছিল। অথচ আজিজুল ভাঙচুরের একটি মামলায় প্রায় দুই মাস ধরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।২০১৫ সালের  ৭ জানুয়ারি পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে গত ২১ জানুয়ারি হাটহাজারীর ঘটনায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেকটি মামলায় শাকিলাসহ ৩১ আসামিকে খালাস দেন আদালত।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর আইনজ ব ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

বিয়ে-তালাকের তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক: হাইকোর্ট

বিয়ে ও তালাকের সব তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।

আদালত বলেছেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে, যাতে প্রতিটি তথ্য সরকারি ব্যবস্থায় সুরক্ষিত থাকে; ডেটাবেজ সম্পূর্ণ কার্যকর ও ব্যবহারযোগ্য হয় এবং নাগরিকেরা বিশেষ করে নারীরা সহজেই তথ্য যাচাই করতে ও ডিজিটাল কপি সংগ্রহ করতে পারেন।

বিবাহ ও তালাকের ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজ রেজিস্ট্রেশনে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে এইড ফর ম্যান ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন এবং তিন ব্যক্তি ২০২১ সালের ৪ মার্চ রিট করেন।

রিট আবেদনের ভাষ্য, বিয়ে ও তালাকের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর তথা ডিজিটালাইজ রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। স্বামী বা স্ত্রী বিয়ের তথ্য গোপন করে অনেক ক্ষেত্রে আবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ডিজিটাল আর্কাইভের অনুপস্থিতিতে অনেক সময় সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে অনিশ্চয়তা ও জটিলতা দেখা যায়।

রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে পারিবারিক জীবনের বৃহত্তর সুরক্ষায় বিয়ে ও তালাকের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ডিজিটালাইজেশনের জন্য কেন্দ্রীয় একটি ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায় দেওয়া হয়।

রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট বিয়ে ও তালাকের সব তথ্য পুরোপুরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। রুল নিষ্পত্তি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দিয়ে রায় দেওয়া হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান, তাঁকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী তানজিলা রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।

রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, আদালতের এই সিদ্ধান্ত দেশে পরিবারের নিরাপত্তা, নারীর সুরক্ষা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, আইনগত স্বচ্ছতা এবং সবচেয়ে বড় বিষয় বিয়ে–তালাকসংক্রান্ত প্রতারণা বন্ধে ঐতিহাসিক এক পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। ডিজিটাল নিবন্ধন চালু হলে গোপন বিয়ে, একাধিক বিয়ে লুকানো, পূর্ববর্তী তথ্য গোপন, তালাক প্রমাণের জটিলতা—এসব সমস্যা ব্যাপকভাবে কমবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরানে নোবেলজয়ী মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদি গ্রেপ্তার
  • বিপিএলে ফিক্সিং: অভিযুক্তদের বিচার হবে ট্রাইব্যুনালে
  • আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর–৪ আসনে অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ
  • বিয়ে-তালাকের তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক: হাইকোর্ট
  • মানিকগঞ্জ শহরে ককটেল বিস্ফোরণ
  • রিট খারিজ, জোটে গেলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান বহাল
  • মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী ৬ দিন, তাঁর স্বামী ৩ দিনের রিমান্ডে
  • গাজীপুর কারাগারে ‘আয়নাবাজির’ ঘটনায় আদালতে মামলা, আইনজীবীকে শোকজ