প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
Published: 12th, March 2025 GMT
ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণ ও ছাত্রাবাসের সিট বাতিলের প্রতিবাদে হল প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজন করা ইফতার বর্জন করে বুধবার ইফতারের পর হল প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো.
শিক্ষার্থীরা জানান, আজ বুধবার বিদ্রোহী হল আয়োজিত ইফতারের টোকেন দেওয়া শুরু হয় মঙ্গলবার সকাল থেকে। এ সময় হলের ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থীদের অনেককে ইফতারের টোকেন না দিলে হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার রাতেই হল প্রশাসনের ইফতার বর্জনের ডাক দেন ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থীরা। এরপরই সিনিয়রদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে বর্জনের ঘোষণা দিতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। হল প্রশাসনের ইফতার বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে গণ-ইফতার করেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্রোহী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং অযৌক্তিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম ব্যাচ (২০১৮-১৯) সেশনের শিক্ষার্থীদের হলের সিট বাতিলের প্রতিবাদে হল প্রশাসন আয়োজিত ইফতার বর্জন করেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। ইফতার বর্জন করায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য আজ বেলা সাড়ে ১১টা ও সাড়ে ৩টায় দুই দফা বসার চেষ্টা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসেনি। পরে আজ ইফতার শেষে প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো শিক্ষার্থীদের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ ও অপমানজনক শব্দচয়নের মাধ্যমে হল প্রভোস্ট দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই প্রভোস্টের স্থলে কোনো উপযুক্ত ও যোগ্য ব্যক্তিকে এই দায়িত্ব অর্পণ করবেন এবং এরূপ আচরণের জন্য প্রভোস্টকে দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিতে হবে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে উচ্চশিক্ষা ও কর্মজীবনবিষয়ক প্রস্তুতির জন্য রেজাল্ট পরবর্তী তিন মাস সময় হলে থাকতে দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় যেকোনো আয়োজন যেমন: বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ইফতার আবাসিক এবং অনাবাসিক সব শিক্ষার্থীকে মানসম্মত খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। শুধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন বৈষম্যমূলক আচরণ। সব হলের ভাড়া সর্বোচ্চ ৫০ টাকার মধ্যে সীমিত রাখতে হবে এবং হলের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা যেমন: বিনা মূল্যে ওয়াই-ফাই, ভাত-ডাল, উন্নত মানের খাবার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে বিদ্রোহী হলের প্রভোস্ট সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনে ফোন করা হলেও সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যায়ের বন্ধন গেস্টহাউসের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে গিয়ে তাঁদের দাবি শোনেন উপাচার্য, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার। এ সময় উপাচার্য মো. জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা না চাইলে প্রভোস্ট থাকবে না। প্রভোস্টের নিয়ে দাবি বাস্তবায়িত হবে। মাস্টার্সের ফলাফল না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাসে থাকতে পারবে।’
কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি জানান, পরীক্ষার ফলাফল হওয়ার পর তিন মাস পর্যন্ত ছাত্রাবাসে থাকার। তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। ওই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের চারটি দাবিই মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন উপাচার্য। আগামী রোববার এ বিষয়ে লিখিতভাবে সিদ্ধান্ত জানাতে সময় নেন উপাচার্য। পরে শিক্ষার্থীর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আগামী রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।
উল্লেখ্য, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলে শিক্ষার্থীদের হলে সিটবিষয়ক একটি সিদ্ধান্ত হয়। জানানো হয়, যেসব শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছেন এবং যেসব বিভাগে স্নাতকোত্তর চালু নেই, সেসব বিভাগের শিক্ষার্থীদের স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষা সম্পন্নের এক মাসের মধ্যে আবাসিক হলের সিট বাতিল করে দেওয়া হবে। প্রভোস্ট কাউন্সিলের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপ চ র য র জন য পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
ক্ষমা পেয়ে কাজে যোগ দিলেন চিকিৎসক ধনদেব চন্দ্র বর্মণ
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফরের সঙ্গে তর্কে জড়ানো চিকিৎসক ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে ক্ষমা করা হয়েছে। শোকজের জবাব সন্তোষজনক হওয়ায় তাঁকে ক্ষমা করে আগের পদ আবাসিক সার্জন (ক্যাজুয়ালটি) পদে বহাল করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে মুঠোফোনে ধনদেব চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমার জবাবে সন্তুষ্ট হয়ে পূর্বের পদে বহাল করেছেন। আমি কাজে যোগ দিয়েছি।’
গতকাল বুধবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফেরদৌস স্বাক্ষরিত একটি পত্র জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘৬ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনকালে হাসপাতালের আবাসিক সার্জন (ক্যাজুয়ালটি) ও সহকারী অধ্যাপক (সার্জারি) ইনসিটু, ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে মহাপরিচালকের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয় এবং সেই সঙ্গে ক্যাজুয়ালটি ওটি ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। তিনি তাঁর অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের কারণে ক্ষমা চেয়ে এবং ভবিষ্যতে এরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করবেন না বলে অঙ্গীকার করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে লিখিত জবাব দাখিল করেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর দাখিলকৃত জবাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয় বরাবর প্রেরিত প্রতিবেদন সন্তোষজনক হওয়ায় মহাপরিচালকের উদারতা ও মহানুভবতায় ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে ক্ষমা প্রদর্শন করেন এবং তাঁকে পূর্বের কর্মস্থল ক্যাজুয়ালটি ওটি ইনচার্জ পদে পুনর্বহাল রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। সে মোতাবেক তাঁকে ক্যাজুয়ালটি ওটি ইনচার্জের দায়িত্বে পুনর্বহাল করা হলো। এই আদেশ পত্র জারির তারিখ থেকে কার্যকর হবে।’
আরও পড়ুনস্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্কে জড়ালেন চিকিৎসক, বললেন ‘আমাকে সাসপেন্ড করেন, নো প্রবলেম’০৬ ডিসেম্বর ২০২৫৬ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফর। এ সময় হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি অপারেশন থিয়েটার পরিদর্শনে গিয়ে ডিজি কক্ষের ভেতরে টেবিল থাকার কারণ জানতে চান চিকিৎসকদের কাছে। এ সময় জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জ ধনদেব চন্দ্র বর্মণ তাঁর সঙ্গে তর্কে জড়ান।