‘অপহরণ-ধর্ষণ, মামলা করায় বাবাকে হত্যা’ মামলায় চাঞ্চল্যকর তথ্য
Published: 18th, March 2025 GMT
বরগুনার কালিবাড়ি এলাকায় প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীকে ‘অপহরণ-ধর্ষণ ও মামলা করায় বাবাকে হত্যা’ মামলায় চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানে।
ওই ছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল এমন কল রেকর্ড ও প্রেমিককে লেখা প্রেমিকার চিঠিতে মোড় ঘুরেছে অনুসন্ধানের। পুলিশি তদন্তেও সত্যতা মিলেছে উভয়ের প্রেমের সম্পর্কের।
কালিবাড়ী এলাকার ‘অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার’ দাবি করা সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর সাথে সৃজীব চন্দ্র রায়ের ১১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের একটি ফোনালাপ এসেছে প্রতিবেদকের হাতে।
তাদের ফোনালাপে শোনা যায়, তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে কথা বলছেন, আবার হাসির ছলে কখনো আপত্তিকর কথাও বলছেন।
ফোনালাপের শুরুতেই সৃজীব ওই মেয়েকে বলেন, “তুমি বরগুনা আসবা কবে? পাঁচ দিনের কথা বলে গেলা, কাল পাঁচ দিন হবে।” মেয়ে তখন শান্তনা দিয়ে বলছে, “তোমার শ্বশুরকে বলো, সে না চাইলে কীভাবে আসব?” তখন সৃজীব বলে, “মাথা খারাপ হবে কিন্তু। তারাতারি বরগুনা আসো।” তখন ওই মেয়ে বলে, “তুমি আসো। তোমার শ্বশুর মাছ ধরছে, তুমিও আসো।” সৃজীব বলে, “আমি মাছ ধরব আর তুমি ব্যাগে মাছ নিয়ে আমার পিছনে থাকবা।” তখন ওই মেয়ে রাজি না হওয়ায় সৃজীব বলে, “তাহলে আমার শালীরাই ভালো। আমার পঁচা বউ তুমি। আমি শালীদের নিয়েই থাকব।” এসময় ওই ছাত্রী কিছু অশালীন কথা বলে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রেমিক সৃজীবকে বিভিন্ন সময় প্রেমপত্র দিয়েছে ওই ছাত্রী। চিঠির সাথে তার বর্তমান লেখা খাতায় হাতের লেখার মিল পাওয়া গেছে।
এদিকে আদালতে ওই ছাত্রীর দেয়া ২২ ধারার জবানবন্দিতে সৃজীবের সাথে ফোনে কথা বলার বিষয়টি স্বীকার করলেও তিনি দাবি করেন- প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে অপহরণ করেছিল সৃজীব।
তাদের প্রেমের বিষয়টি এলাকাবাসীর নজরেও এসেছে। তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময়ে ডিসি পার্কে একান্ত সময় কাটাতেন এই প্রেমিক যুগল।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু সালেহ বলেন, “এই ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত দুই/তিন মাস ধরে তারা প্রায় প্রতিদিন বিকালে ডিসি পার্কে বসে গল্পো করত। এক জনের কোলে মাথা দিয়ে আরেক জন শুয়ে থাকত।”
সৃজীবের পরিবারও স্বীকার করেছেন তাদের প্রেমের সম্পর্কের কথা। সৃজীবের মা কনিকা রানী বলেন, “আমি কয়েকদিন আগে জানতে পেরেছি তাদের প্রেমের সম্পর্কের কথা। ছেলেকে বুঝিয়ে বলেছিলাম। কিন্তু বয়স কম, কথা শোনেনি। তবে, আমার ছেলে অপহরণ করেনি, ধর্ষণও করেনি। আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় জেলে দিয়েছে। তারা অপরাধী না, প্রেম করা যদি অপরাধ হয় তাহলে সেই শাস্তি আমার ছেলে পাবে, এটা আমিও চাই। কিন্তু আমার স্বামীকে কেনো ধরে নিয়ে গেলো?”
যদিও ধর্ষণ-হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার রয়েছেন তবু পুলিশি তদন্ত ও আদালতের রায়ের আগে স্বামী-সন্তানকে ধর্ষণ ও হত্যাকারী হিসেবে উল্লেখ না করতে অনুরোধ করেন তিনি। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চান।
এদিকে নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী ও তার মা প্রেমের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তাদের দুজনেরই দাবি কোনো সম্পর্ক ছিল না ওই ছেলের সাথে।
জানতে চাইলে ওই ছাত্রী বলেন, “কল দিলে আমি নিষেধ করতাম, আমি প্রেম করিনি।”
আদালতে মেয়ের দেওয়া জবানবন্দি, পাশে প্রেমিকের কাছে লেখা চিঠি (ডানে)।
তবে, পুলিশি তদন্তে প্রেমের সম্পর্কসহ বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যা পুলিশের হাতে রয়েছে এবং এ ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে বরগুনা পুলিশ প্রশাসন। নতুন করে তদন্ত শুরু করেছেন তারা।
বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম এ বিষয়ে রাইজিংবিডিকে বলেন, “তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এটা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত। আমরা গভীরভাবে আবারও গোটা বিষয়টি তদন্ত করছি। যে যতটুকু অপরাধ করেছে, আমরা তাকে ততটুকু সাজা নিশ্চিৎ করতে রিপোর্ট দেবো। কল রেকর্ডসহ বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। বাকিটা তদন্ত শেষে বলা যাবে।”
উল্লেখ্য, বরগুনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কিশোরীকে অপহরণ ও ধর্ষণের বিচার চেয়ে মামলা করার ছয় দিনের মাথায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তার বাবা। তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে নিজ বাড়ির পেছনের ঝোপ থেকে। নিহত ব্যক্তি বরগুনা পৌরশহরে একটি মুরগির দোকানের কর্মচারী ছিলেন। তার স্বজনদের দাবি, ধর্ষণের মামলার জের ধরে অভিযুক্তের স্বজনরা প্রতিশোধ নিতে তাকে হত্যা করেছে।
পুলিশ জানায়, নিহত ব্যক্তির সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হয় এবং পরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত ৫ মার্চ বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন তার বাবা। ওই মামলায় অভিযুক্ত সৃজীব চন্দ্র রায় ও তার বাবা শ্রীরামসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঢাকা/ইমরান/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ওই ছ ত র তদন ত বরগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দরে দুই যুবককে অপহরণের ঘটনায় ৩ অপহরণকারী গ্রেপ্তার
বন্দরে দুই যুবককে অপহরণের পর ২ লাখ টাকা মুক্তি পণ দাবির ঘটনায় ৩ অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বুধবার (১১ জুন) রাতে বন্দর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের লাউসার গ্রামে অপহরণের এ ঘটনাটি ঘটে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো বন্দরের মদনপুর দেওয়ানবাগ এলাকার হাজী শহিদুল ইসলামের ছেলে মাহবুবুর রহমান শিশির (৩৫), বন্দরের নেহাল সরদারেরবাগ গ্রামের মৃত জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে মোঃ রুবেল মিয়া(২৯) ও সোনারগাঁ উপজেলার নাজিরপুর বড়বাড়ি গ্রামের মৃত নান্নু মিয়ার ছেলে মোঃ সুমন (২৮)।
এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় বন্দরের ধামগড় ইউনিয়নের পশ্চিম কেওঢালা এলাকার ফয়েজ আহমেদের ছেলে রনি( ৪০), বাবুল (৪৮) ও অপুসহ ১০-১২ জন অপহরণকারী। এ ব্যাপারে অপহরণের শিকার ফাহিমের (১৭) এর মামা হৃদয় হোসেন বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বন্দর থানায় মামলা করেছেন।
মামলার বাদী হৃদয় হোসেন জানান, ভাগ্নে ফাহিম ও তার বন্ধু মোহন মিয়া বুধবার রাত নয়টার দিকে তাদের আরেক বন্ধু অপুর সাথে দেখা করতে বন্দরের লাউসার এলাকার জনৈক জাহাঙ্গীর মিয়ার বাড়িতে যায়। এ সময় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অপহরণকারীরা দুজনকে একটি কক্ষে আটকে রাখে।
তারা ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি ও মারধর করে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অপহরণের বিষয়টি মোবাইল ফোনে জানতে পেরে তিনি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ তে কল করে পুলিশকে জানান। পরে বন্দর থানা পুলিশ ফাহিম ও মোহনকে উদ্ধার করে এবং তিন অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে।
এ ব্যাপারে বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, অপহরণ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।