পঞ্চগড়ে ১ জনকে মারধর, ২ জনকে আটক বিএসএফের
Published: 18th, March 2025 GMT
পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়া উপজেলার সীমান্ত এলাকায় আতিকুর রহমান (৩২) নামে এক বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বিরুদ্ধে।
সোমবার (১৭ মার্চ) দিবাগত রাতে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের আওতাধীন তেঁতুলিয়া উপজেলার রনচন্ডি বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সীমান্তের মেইন পিলার ৪৪৬ এর ২ নম্বর সাব পিলার থেকে আনুমানিক ২০০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে ইসলামপুর নামক এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।
এসময় আতিকুর নামে ওই বাংলাদেশি ডান হাতে ও মুখে জখম হয়। পরে তাকে তেতুঁলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তেতুঁলিয়া মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে বিজিবি।
এদিকে, একই দিন বিকেলে তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা বিওপির জিরো পয়েন্ট এলাকায় ডিউটিরত বিজিবির সিগন্যাল উপেক্ষা করে মোটরসাইকেল নিয়ে ভারতের ফুলবাড়ি সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ করায় মাসুম ইসলাম (১৮) ও উৎসব চন্দ্র রায় (২১) নামে দুই বাংলাদেশি তরুণকে আটক করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের ১৮ ব্যাটালিয়নের ফুলবাড়ি ক্যাম্পের সদস্যরা।
পরে বিজিবির বাংলাবান্ধা কোম্পানি কমান্ডার ও বিএসএফের ফুলবাড়ি কোম্পানি কমান্ডারের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে বাংলাদেশে তাদের ফেরত আনা হয়েছে।
পৃথক এ দুই ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ চেষ্টার দায়ে তেতুঁলিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে ওই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
আহত বাংলাদেশী আতিকুর রহমানের বাড়ি উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের দরগাসিং এলাকায়। তিনি ওই এলাকার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। তিনি পেশায় গরু ব্যবসায়ী।
এছাড়া গ্রেপ্তার মাসুম ইসলাম পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বোদা সদর ইউনিয়নের নয়াদিঘী এলাকার হাসিবুল ইসলামের ছেলে এবং উৎসব চন্দ্র রায় দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার মাহেরপুর দেউর এলাকার নীপেন চন্দ্র রায়ের ছেলে।
জানা যায়, আতিকুর রহমানসহ চার জন বাংলাদেশি সোমবার দিবাগত রাতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের মেইন পিলার ৪৪৬ এর ২ নম্বর সাব পিলার এলাকা দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। এসময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের ১৮ ব্যাটালিয়নের কালামগঞ্জ ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিলে বাকীরা পালিয়ে গেলেও আতিকুর বিএসএফের হাতে আটক হন। পরে তাকে বেধরক মারধর করা হয়।
ঘটনাটি পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের রনচন্ডি বিওপির কমান্ডারকে জানানো হয়। পরে বিএসএফের টহলদল বিজিবির টহলদলকে পতাকা বৈঠক ছাড়াই আতিকুরকে হস্তান্তর করে।
অপরদিকে, বাংলাদেশী তরুণ মাসুম ইসলাম ও উৎসব চন্দ্র রায় মোটরসাইকেল নিয়ে বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ফুলবাড়ি সীমান্তের ১০ গজ অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
সেসময় বিএসএফের ১৮ ব্যাটালিয়নের ফুলবাড়ি ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের আটক করে। কোম্পানী কমান্ডার পর্যায়ে আলোচনা করে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। পরে তেতুঁলিয়া মডেল থানায় তাদের হস্তান্তর করে বিজিবি।
তেতুঁলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত কবীর দুই যুবকসহ তিনজনকে অবৈধ অনুপ্রবেশ চেষ্টার দায়ে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “বিজিবির পক্ষ থেকে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুরে আদালতে তোলা হয়।”
পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.
ঢাকা/নাঈম/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসএফ র কম ন ড র উপজ ল র এল ক য় ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।