অ্যাপলের পাসওয়ার্ডস অ্যাপে থাকা নিরাপত্তাত্রুটির কারণে গত বছর তিন মাস ফিশিং আক্রমণের ঝুঁকিতে ছিলেন আইফোন ব্যবহারকারীরা। আইওএস ১৮ অপারেটিং সিস্টেম উন্মোচনের পর অ্যাপলের পাসওয়ার্ডস অ্যাপে নিরাপত্তাত্রুটি দেখা দিলেও প্রকাশ করেনি অ্যাপল। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট নাইনটুফাইভম্যাকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইওএস ১৮ অপারেটিং সিস্টেমে চলা আইফোন উন্মুক্ত ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার সময় হ্যাকাররা চাইলেই সংবেদনশীল তথ্য হাতিয়ে নিতে পারত। তবে আইওএস ১৮.

২ সংস্করণে এ নিরাপত্তাত্রুটির সমাধান করা হয়েছে।

আইওএসে নিরাপত্তাত্রুটি থাকার বিষয়টি স্বীকারও করেছে অ্যাপল। এ বিষয়ে অ্যাপল জানিয়েছে, এই ত্রুটির ফলে নেটওয়ার্কে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা কোনো ব্যবহারকারী অন্যের সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস করতে পারত। সমস্যাটির সমাধানে এইচটিটিপিএস ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে, যাতে তথ্য আদান-প্রদান নিরাপদ থাকে।

আরও পড়ুনবাজারে আসার ১৫ দিনের মধ্যেই আইফোনের নতুন মডেলে ত্রুটি, ভোগান্তিতে ব্যবহারকারীরা১৭ মার্চ ২০২৫

নাইনটুফাইভম্যাকের তথ্যমতে, অ্যাপলের পাসওয়ার্ডস অ্যাপে সংরক্ষিত বিভিন্ন ওয়েবসাইটের লোগো ও আইকন প্রদর্শনের জন্য যে অনুরোধ পাঠানো হতো, তা এনক্রিপশন করা হতো না। অর্থাৎ উন্মুক্ত ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার সময় কোনো হ্যাকার ব্যবহারকারীর ব্রাউজারকে ভুয়া ওয়েবসাইটে নিয়ে যেতে পারত। এতে ব্যবহারকারীর অজান্তেই লগইন তথ্য চুরি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল।

আরও পড়ুনআইফোনে ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ রাখতে যে তিনটি সেটিংস বন্ধ রাখতে হবে১১ জানুয়ারি ২০২৫

নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিস্ক প্রথম এই ত্রুটি শনাক্ত করে এবং ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে অ্যাপলকে বিষয়টি অবহিত করে। এরপর ডিসেম্বর মাসে আইওএস ১৮.২ সংস্করণ উন্মুক্ত করে অ্যাপল। আইফোনের পাশাপাশি একই ধরনের নিরাপত্তাত্রুটি ম্যাক, আইপ্যাড ও ভিশন প্রো ডিভাইসেও ছিল।

সূত্র: দ্য ভার্জ

আরও পড়ুনআইফোনের ব্যাটারির স্থায়িত্ব দ্বিগুণ করতে অ্যাপলের ৩ পরামর্শ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র আইফ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।

মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?

তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি  যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?

সরকারের পক্ষ থেকে  রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।

দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।

এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন,  সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!

এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ