সাংবাদিকদের কল্যাণে কাজ করার আশ্বাস তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজের
Published: 22nd, March 2025 GMT
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের আলোকে সংবাদপত্রের প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সাংবাদিকদের কল্যাণে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম।
আজ শনিবার রাজধানীর তথ্য ভবনে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে মৃত্যুবরণকারী সাংবাদিকদের পরিবার এবং অসুস্থ-অসচ্ছল সাংবাদিকদের মাঝে কল্যাণ অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথাগুলো বলেন।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন-ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে কল্যাণ অনুদান দেওয়ার হয়তো প্রয়োজন হতো না। গণমাধ্যম মালিক, সম্পাদক ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে সাংবাদিকতা ব্যবস্থাকে সাংবাদিকবান্ধব করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। উপদেষ্টা বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মপরিধি বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য সচিব মাহবুবা ফারজানা। গুজব ও অপপ্রচার মোকাবিলায় সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করে গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ৫ আগস্টের আগে এই সংস্থাটি ছিল অন্য রকম, এখন তা পরিবর্তন হচ্ছে। আস্থার জায়গা হিসেবে গড়ে উঠেছে। তারা এই সংস্থাটিকে শতভাগ স্বচ্ছ হিসেবে রাখতে চান।
প্রবীণ ও গুণী সাংবাদিকদের কীভাবে পেনশনের তালিকার আনা যায়, তা নিয়ে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ভবিষ্যতে যেন কোনো প্রবীণ সাংবাদিককে কষ্ট করতে না হয় সেই বিষয় নিয়ে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট কাজ করছে। এ ছাড়া নতুন একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটা হচ্ছে ফেলোশিপ। অচিরেই গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চলতি বছরে পাঁচজন সাংবাদিককে ফেলোশিপ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের নিজস্ব কোনো ভবন নেই উল্লেখ করে মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, নিজস্ব ভবন ও নিজস্ব আয়ের পথ তৈরির লক্ষ্যে সরকারের কাছ থেকে একটি জায়গা বরাদ্দ পাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, সাংবাদিক মুহাম্মদ খায়রুল বাশার, সাজিদ আরাফাত ও মীর মুশফিক আহসান প্রমুখ।
উল্লেখ্য ৩৭৪ জন সাংবাদিক ও সাংবাদিক পরিবারের মধ্যে ১ কোটি ৯৩ লাখ ৯০ হাজার টাকার অনুদানের চেক দেওয়া হয়। এর মধ্যে মৃত্যুবরণকারী সাংবাদিকের পরিবার রয়েছে ১১টি। এ ছাড়া অনুদানপ্রাপ্তদের মধ্যে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত সাংবাদিক রয়েছেন ১৯২ জন।
এর আগে ৩০ জানুয়ারি দ্বিতীয় কিস্তিতে ১২৭ জন সাংবাদিক ও মৃত্যুবরণকারী সাংবাদিক পরিবারকে ৮৯ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালে ৩০ অক্টোবর প্রথম কিস্তিতে ঢাকাসহ সারা দেশে ৩৫০ জন সাংবাদিক ও তাঁদের পরিবারের মধ্যে ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব দ ক কল য ণ ট র স ট র ম হ ম মদ ব যবস থ উপদ ষ ট পর ব র অন দ ন ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।