জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে আলাদা অধিদপ্তর হচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া অনুমোদনের একটি সারসংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে তাতে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। প্রস্তাবটি ফেরত দেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি সংযুক্ত দপ্তর, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান নয়।’

‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়ার ওপর মতামত চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিষয়ক মন্ত্রণালয় খসড়ার ওপর অর্থ বিভাগের মতামতের জন্য পাঠানো হয়। বিষয়টি বিবেচনার জন্য অর্থ সচিব গত ১৯ মার্চ অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমদের কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠালে তিনি ২০ তারিখে সারসংক্ষেপে স্বাক্ষর করেন। এরফলে তার মতামত দেন। এরফলে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ নামে আলাদা অধিদপ্তর হচ্ছে না। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে তাদের কাজ অব্যাহত রাখবে।

সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসনসহ গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনাকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে সরকার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়। উক্ত অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তুতকৃত খসড়া অধ্যাদেশের ওপর অর্থ বিভাগের মতামত পাঠানোর জন্য বিবেচ্য পত্রে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এতে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য গত ১২ ডিসম্বের ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অ্যালোকেশন অব বিজনেস এ ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক’ বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর-এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রাজস্বখাতে ৩৩ টি পদ সৃজনসহ সাংগঠনিক কাঠামো হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। বর্তমানে উক্ত অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক খসড়া অধ্যাদেশ প্রস্তুত করে এর ওপর অর্থ বিভাগের মতামত চাওয়া হয়।

উল্লেখ্য যে, সচিবালয় নির্দেশমালা, ২০২৪ অনুযায়ী অধিদপ্তরসমূহ সংযুক্ত দপ্তর হিসেবে সরকারি নীতি বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী কার্যব্যবস্থার অংশ। মন্ত্রণালয়/ বিভাগ কর্তৃক নির্দেশিত নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংযুক্ত দপ্তরসমূহ প্রয়োজনীয় নির্বাহী কার্যাবলি পরিচালনা করে থাকে। মন্ত্রণালয়/বিভাগের অধীনে নতুন দপ্তর/অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি'র কার্যপরিধিভুক্ত। প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি'র অনুমোদনের প্রেক্ষিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অ্যালোকেশন অব বিজনেস হালনাগাদ করা হয়েছে। তাছাড়া, আইন/অধ্যাদেশের মাধ্যমে সাধারণত সংবিধিবদ্ধ/স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান নয়। উপদেষ্টা পরিষদ ও প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি সংযুক্ত দপ্তর, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান নয়।

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ এ শহীদ পরিবারের কল্যাণ ও আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নীতিমালা, ২০২৫’ খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে এবং এর ওপর অর্থ বিভাগ থেকে মতামত দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীতব্য উল্লিখিত নীতিমালা এবং মন্ত্রণালয়ের অ্যালোকেশন অব বিজনেস বাস্তবায়নের মাধ্যমে আলোচ্য অধিদপ্তরের কার্যাবলি পরিচালিত হবে। এসকল বিষয়াদি বিবেচনায় জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য আইন/অধ্যাদেশ প্রণয়নের প্রয়োজন নেই বলে অর্থ বিভাগ মনে করে।

এ অবস্থায়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা ও এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পৃথকভাবে আইন/অধ্যাদেশ প্রণয়নের প্রয়োজন নেই মর্মে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়কে অবগত করে চিঠি যেতে পারে। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টার মতামত চাওয়া হলে তিনি তাতে অনুমোদন দিয়েছেন।

ঢাকা/টিপু
 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স রস ক ষ প ন র জন য উপদ ষ ট র মত মত প রস ত পর চ ল

এছাড়াও পড়ুন:

খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

দেশের ব্যাংক-আর্থিক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে চলতি বছরের মার্চ শেষে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। ৩ মাস আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।  

রবিবার (১৫ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এ সময় বিতরণ করা ঋণের ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা বা  ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০১ কোটি টাকা।

আরো পড়ুন:

ঈদের আমেজ ব্যাংক পাড়ায়, গ্রাহক কম

ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা চুরি: নিরাপত্তাপ্রহরীর দোষ স্বীকার

আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩০ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। তার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে খেলাপি ঋণ। ৩ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। 

তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। সরকার পরিবর্তনের পর খেলাপির প্রকৃত তখ্য বেরিয়ে আসে। সেই হিসেবে চলতি মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা।

চলতি মার্চ শেষে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে ৪৪ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খেলাপির পরিমাণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ ৬ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপির মধ্যে ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা বা ৯০ দশমিক শূণ্য ৭ শতাংশই মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে, যা আদায় করার সম্ভবনা নেই।  

এদিকে, মার্চ শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ১০ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপির মধ্যে ২ লাখ ২ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশই মন্দ ঋণ, যা আদায় করার সম্ভাবনা নেই। এ সময় বিদেশি ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ করা হযেছে ৬৭ হাজার কোটি টাকা, খেলাপির পরিমাণ ৩ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা।  

এর আগে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমাদের কাছে যতই নতুন তথ্য আসছে, ততই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। আমরা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পুনর্গঠন করতে চাই। যেসব ব্যাংক একীভূত করার দরকার সেগুলো একীভূত করব।”

আর রবিবার গভর্নর বলেছেন, “পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক শিগগিরই একীভূত করবে। তবে একীভূত করা ব্যাংকগুলোর কর্মীদের চাকরি ঠিক থাকবে।”

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হতে শুরু করেছে।  আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে প্রভাবশালীরা নামে বেনামে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছিল। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কাগজে-কলমে কম দেখানো হয়েছিল। সরকার পরিবর্তনের পর খেলাপির প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে এসেছে।

ঢাকা/এনএফ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাগরিক সমাজ শাসকদের পক্ষে থাকে কেন?
  • খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
  • আবু সাঈদ হত্যা: এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের
  • রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা: এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের
  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার যেভাবে হলে ভালো হয়
  • গণঅভ্যুত্থানে আহত সামিউলের দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়
  • জাফলংসহ দেশের পর্যটন উন্নয়নে সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
  • পরিবেশবান্ধব পর্যটনে সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
  • লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি
  • লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি