ডি ককের ব্যাটে চড়ে হেসেখেলে জিতল কেকেআর
Published: 27th, March 2025 GMT
আইপিএলে (২৬ মার্চ) কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) হয়ে সবশেষ ম্যাচে নামেননি সুনীল নারিন। তবে বাকি দুই স্পিনার মঈন আলী ও বরুণ চক্রবর্তী অবশ্যই সেই অভাবটি বুঝতে দেননি। এই স্পিনারের ঘূর্ণি জাদুতে ৯ উইকেটে মাত্র ১৫১ রানের পুঁজি পায় রাজস্থান রয়্যালস। কুইন্টন ডি ককের ব্যাটে চড়ে, ৮ উইকেট আর ১৫ বল হাতে রেখেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় কেকেআর।
গুয়াহাটির মন্থর উইকেট দেখেই, টস জিতে প্রথমে রাজস্থানকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় কেকেআর। দেখেশুনে ব্যাটিং করছিলেন রাজস্থানের ব্যাটসম্যানরা। সাঞ্জু স্যামসন ১৩ রানে ফিরলে যশস্বী জয়সোয়ালের সাথে যোগ দেন রিয়ান পরাগ। পাওয়ার’প্লের ৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৫৪ রান তোলে রাজস্থান। পরাগ ভালো শুরু পেলেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি, থেমেছেন পাওয়ার’প্লে শেষেই।
দলের ৬৭ রানের মাথায় ১৫ বলে ২৫ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন পরাগ। পরের ওভারে ২৪ বলে ২৯ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে যান ফিরেছেন জায়সোয়াল। এরপর দ্রুত আরও ২ উইকেট হারিয়েছে তারা। আউট হন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা এবং নিতিশ রানা। পরে কিছুটা লড়াই চালিয়েছেন ধ্রুব জুরেল। তবে উইকেটের পতন ঠেকানো যাচ্ছিল না। ২৮ বলে ৩৩ রান করে দলের ১৩১ রানের মাথাতে আউট হয়েছেন জুরেল।
আরো পড়ুন:
ডি ককের ব্যাটে চড়ে হেসেখেলে জিতল কেকেআর
গ্যালারিতে বসে আইপিএল অভিজ্ঞতা: অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়
বাকি ব্যাটাররা যোগ দিয়েছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। নির্ধারিত ২০ ওভারের খেলা শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রানের পুঁজি দাঁড়ায় রাজস্থানের। কলকাতার হয়ে ২টি করে উইকেট শিকার করেন বরুণ চক্রবর্তী, মঈন আলী, হার্শিত রানা, বৈভব অরোরা।
ছোট লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে কেকেআরের মঈন ও আজিঙ্কা রাহানে দ্রুত ফেরেন। এই দুজনের ব্যাট থেকে আসে যথেক্রমে ৫ ও ১৮ রান। তবে অন্য প্রান্তে অবিচল ডি ককের হার না মানা ৯৭ রানে সহজেই জয় তুলে নেয় কেকেআর। এই প্রোটিয়া কিপার-ব্যাটার ৬১ বলে ৮ চার আর ৬ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৯৭ রানে। ১৭ বলে ২২ রানে অপরাজিত থাকেন অঙ্গকৃষ রঘুবানসি।
আসরের প্রথম জয় পেল কেকেআর। অন্যদিকে রাজস্থান দুম্যাচ খেলে দুটিতেই হেরেছে।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ক আর উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।