জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এবং তার দোসররা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। সামনে আরেকটি অভ্যুত্থান হবে। সেই অভ্যুত্থান হবে ছাত্র-জনতার ভোটের অভ্যুত্থান। ছাত্র-জনতার ভোটের অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাবে আওয়ামী লীগ পরবর্তী জুলুমবাজের দল। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় সদস্য সাইয়েদ জামিল শুক্রবার সকালে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে এনসিপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ সাগর আহমেদের কবর জিয়ারতের পর সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন।

সাইয়েদ জামিল বলেন, অতীতে আপনারা আওয়ামী লীগ সরকার দেখেছেন, বিএনপি সরকার দেখেছেন, জাতীয় পার্টির সরকারও দেখেছেন। এবার আপনারা আপনাদের অভিজ্ঞতার আলোকে সিদ্ধান্ত নেবেন। আপনাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা ব্যক্তিগত লাভের আশা করবেন না, পুরোনো নেতাদের মিষ্টি কথার ফাঁদে পা দেবেন না। রাষ্ট্রকে ঢেলে সাজাবার, সিস্টেমকে ভেঙে গড়বার ক্ষমতা এবার আপনাদের হাতে। আমার বিশ্বাস, আপনারা দেশের অধিকাংশ মানুষের মতোই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চান। ন্যায় ও ইনসাফের সমাজ এবং রাষ্ট্র চান।

পরে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বালিয়াকান্দির বিভিন্ন বাজারঘাট ও গণজমায়াতের স্থানগুলোতে দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভোটারদের করণীয় এবং এনসিপিতে যোগদানের আহ্বান সম্বলিত লিফলেট বিলির কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। এতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় সংগঠক এনামুল হক জমিদার, বালিয়াকান্দি উপজেলা এনসিপির সংগঠক শফিউল মনির মিয়া, মিজানুর রহমান রাকিব, মো.

আল আমিন, মিজানুর রহমান মোল্লা এবং কালুখালী উপজেলার সংগঠক মো. মারুফ হোসেন, বোরহান মাহমুদ, জিহাদুল ইসলাম প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প জ ত য় ন গর ক প র ট আওয় ম ল গ ব এনপ ছ ত র জনত র এনস প আপন র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

২২টি যুদ্ধের পর শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া

আজ ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মুক্তদিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম, ২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর অসংখ্য নীরব ত্যাগের মধ্যদিয়ে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের কুষ্টিয়া থেকে বিতাড়িত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। কালেক্টরেট চত্বরে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। 

মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকেই কুষ্টিয়া ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের প্রথম দিকে এখানে ইপিআর, পুলিশ এবং সাধারণ মানুষ মিলে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

আরো পড়ুন:

টাঙ্গাইল শত্রুমুক্ত হয় ১১ ডিসেম্বর

৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধে শত্রুমুক্ত হয় মাদারীপুর

কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই প্রতিরোধে যোগ দেন, যা পরবর্তীতে সুসংগঠিত মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীতে রূপ নেয়। মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস জুড়ে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা হামলা, সম্মুখযুদ্ধ ও প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় চূড়ান্ত মুক্তির পথ।

ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ১৬ এপ্রিল থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। মিরপুর, ভেড়ামারা, দৌলতপুর, খোকসা, কুমারখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর সুসজ্জিত ঘাঁটির বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই চালান। পাকবাহিনীর ক্যাম্প, ব্রিজ, সড়ক ও রসদ সরবরাহ লাইনে ধারাবাহিক আক্রমণ চালিয়ে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া হয়। প্রতিটি যুদ্ধে বহু মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ শহীদ হন। পাকিস্তানি বাহিনীরও বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। তারা কুষ্টিয়ায় অবস্থান টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহরের প্রবেশমুখ, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনার আশপাশে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী পাক সেনাদের সঙ্গে চূড়ান্ত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। ভোর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে গোলাগুলি, মর্টার শেল ও ভারী অস্ত্রের প্রচণ্ড গর্জনে পুরো শহর কেঁপে ওঠে। কৌশলগত স্থানে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর প্রতিরক্ষা ভেঙে দেন। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটতে ও আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। তাদের অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায়। ১১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে কুষ্টিয়া শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয় এবং দিনটিকেই ‘কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

১১ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত কুষ্টিয়া শহরের কালেক্টরেট চত্বরে তৎকালীন রাজনৈতিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ সময় প্রাদেশিক পরিষদের জোনাল চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরীসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত থেকে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানান। এই পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়েই প্রতীকীভাবে স্বাধীন কুষ্টিয়ার জন্ম এবং মুক্তাঞ্চল হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালুর সূচনা ঘটে। ।

প্রতি বছরের মতো এবারো কুষ্টিয়া মুক্তদিবস উপলক্ষে কালেক্টরেট চত্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাত, র‌্যালি পরবর্তী শহীদ স্মৃতিস্মম্ভ চত্বরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিবসটি উপলক্ষে পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। শহীদ পরিবার ও জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের সামনে যুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরছেন। 

ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সব কার্যক্রম স্থগিত
  • রিয়ালের ৪ তারকা ফুটবলার নিষিদ্ধ
  • ২২টি যুদ্ধের পর শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া