টানা ৯ দিনের ছুটি শেষে কাল খুলছে অফিস
Published: 5th, April 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টানা ৯ দিনের ছুটি শেষে আগামীকাল রোববার থেকে খুলছে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত অফিস।
আগামীকাল অফিস খোলা থাকায় ঈদের লম্বা ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন মানুষজন। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট লঞ্চঘাট ও বাস টার্মিনালগুলোতে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে ঢাকায় ফেরা মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
বাসসের খবরে বলা হয়, ঈদের আগে গত ২৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) ছিল এসব অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেষ কর্মদিবস। শুক্রবার (২৮ মার্চ) থেকে শুরু হয় টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটি।
২০ মার্চ পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ৩ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) নির্বাহী আদেশে ছুটি দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এ জন্য টানা ৯ দিনের ছুটি মেলে। চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে গত ৩১ মার্চ সোমবার দেশে ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয়।
উপদেষ্টা পরিষদ ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর ঈদুল ফিতরে পাঁচ দিনের ছুটির অনুমোদন দেয়। আগে এ ছুটি ছিল ৩ দিন। ছুটির বিষয়ে ২১ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ৩১ মার্চ সোমবার ঈদুল ফিতরের দিন ছিল সাধারণ ছুটি। ঈদের আগের দুই দিন ২৯ ও ৩০ মার্চ (শনি ও রোববার) এবং ঈদের পরের দুই দিন ১ ও ২ এপ্রিল (মঙ্গল ও বুধবার) নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ছিল। ২৮ মার্চ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি। অন্যদিকে ৩ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করায় সরকারি চাকরিজীবীরা এবার টানা ৯ দিন ছুটি ভোগ করছেন। কারণ, ৩ এপ্রিলের পরের দুই দিন ৪ ও ৫ এপ্রিল (শুক্র ও শনিবার) সাপ্তাহিক বন্ধ। সে ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে টানা ৯ দিন ছুটি ভোগ করছেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
প্রথম আলোর আজ শনিবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঈদের লম্বা ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে মানুষের ফেরার পথে পরিবহন খাতসংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু ব্যক্তি যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছেন।
গতকাল শুক্রবার রাজশাহী, বগুড়া, বরগুনা ও পাবনা থেকে ছেড়ে যাওয়া কিছু পরিবহনে ১০০ থেকে ৬০০ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়েছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে রাজশাহীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের মুখে অতিরিক্ত ভাড়ার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। আর পাবনায় সাতটি বাস ও সিএনজিচালিত দুটি অটোরিকশাকে ৫৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বরগুনা থেকে ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামগামী বাসগুলোর টিকিটে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, বরগুনা থেকে রাজধানীর সায়েদাবাদ পর্যন্ত সরকার–নির্ধারিত ভাড়া ৭৩৭ টাকা। ঈদের আগে বরগুনা থেকে ঢাকায় বাসভাড়া নেওয়া হতো ৬০০ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
আজ সোমবার বিকেলে হিন্দু নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। এ সময় তাঁদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’
হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন হবে বলে তাঁরা আশা করছি।
এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’ এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ (একক), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার উপস্থিত ছিলেন।