জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঈদের ছুটিতে সিলেটে বেড়াতে গিয়ে পায়ে আঘাত পেয়েছেন। এখন তিনি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থান করছেন। তার পায়ে আঘাত পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাশ।

জানা যায়, ঈদের ছুটিতে সিলেট ও মৌলভীবাজারে পরিবার নিয়ে বেড়াতে যান নাহিদ ইসলাম। গত ৩ এপ্রিল তিনি প্রথমে সিলেট যান। সেখানে বেড়ানোর সময় পায়ে মোচড় লাগে তার। তাৎক্ষণিক তিনি কোনো সমস্যা অনুভব করেননি। ফলে তখন চিকিৎসাও নেওয়া হয়নি তার। পরে সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অর্থপেডিক্সের ডাক্তার জোবায়ের আহমদকে দেখানো হয় নাহিদ ইসলামকে। তিনি তার পায়ে বেন্ডেজ করে দেন। 

গতকাল শুক্রবার (৪ এপ্রিল) নাহিদ ইসলাম মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে যান। সেখানে যাওয়ার পর পায়ে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। তার পা ফুলে যায়। পরে তাকে শ্রীমঙ্গলের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার পায়ে আঘাতের চিহ্ন পান চিকিৎসক। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে নাহিদ ইসলাম শ্রীমঙ্গলে অবস্থান করছেন।

এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাশ বলেন, “নাহিদ ইসলাম গত ৩ এপ্রিল সিলেটে পায়ে আঘাত পান। তখন বিষয়টি টের পাননি। শ্রীমঙ্গলে আসার পর তার পা ফুলে যায়। তখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার পায়ে একটি আঘাতের চিহ্ন ধরা পড়ে। নাহিদ ইসলাম বর্তমানে ভালো আছেন। পায়ের আঘাত তেমন মারাত্মক নয়।”

ঢাকা/আজিজ/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হ দ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

নানা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন প্রার্থীরা, তবে আলোচনায় রেজা কিবরিয়া

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে হবিগঞ্জের চারটি আসনে শীতের এ আবহে প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের মনোনীত প্রার্থীরা প্রতিদিন সভা-সমাবেশ, মিছিল, উঠান বৈঠকসহ নানা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থীদের এই প্রচারণা আরও গতি পেয়েছে। শুধু শহরজুড়েই নয়, জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলও ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের ব্যানার, ফেস্টুন আর পোস্টারে।

তবে সব ছাপিয়ে আলোচনায় আছেন হবিগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি মনোনীত রেজা কিবরিয়া। তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে।

জেলার চারটি আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। একটি আসনে প্রার্থী নিয়ে দলে অসন্তোষ রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও গণ অধিকার পরিষদ সব আসনে প্রার্থী দিয়ে প্রচারণা শুরু করেছে বেশ আগে থেকেই। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) একটি আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। জাতীয় পার্টির (জাপা) তৎপরতা নেই বললেই চলে। একই অবস্থা বামপন্থী দলগুলোর। তবে ইসলামপন্থী বেশ কয়েকটি দলের নেতারা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন।

জেলার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ চারটিতে জয়ী হয়। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনটিতে আওয়ামী লীগ এবং একটিতে জোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়ী হন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারটিতে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুটিতে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। দুটিতে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল)

বিএনপি প্রথম ধাপে মনোনয়ন ঘোষণার সময় আসনটি ফাঁকা রেখেছিল। পরে ৪ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপে অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়াকে প্রার্থী করেছে বিএনপি। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে এখানে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সম্প্রতি তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এখানে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া, নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরীসহ কয়েকজন।

মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর এলাকার বিভিন্ন দেয়াল ও স্থাপনা রেজা কিবরিয়ার ছবিসহ শুভেচ্ছা ব্যানারে ছেয়ে গেছে। নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, রেজা কিবরিয়া মনোনয়ন পাওয়ায় দলের নেতা-কর্মীরা খুশি।

রেজা কিবরিয়া গত শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবাই বুঝতে পারছে, আগে যাঁরা এ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন, তাঁরা এলাকার জন্য কোনো কাজ করেননি। এবার বিএনপিকে ভোট দিলে বেশি কাজ হবে। এ ছাড়া আমি আমার বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো এগিয়ে নিতে চাই। আমি আশাবাদী, মানুষের জন্য ভালো কিছু করতে পারব।’

এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী মো. শাহজাহান আলী। তিনি কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ও সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি। পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আবু হানিফা আহমদ হোসেন। তিনি দলের নবীগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি।

রেজা কিবরিয়ার মনোনয়নে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সন্তোষ প্রকাশ করলেও ‘খুশি’ হতে পারেননি দলের অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ)

এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবু মনসুর সাখাওয়াত হাসান (জীবন)। তিনি ২০০৮ সালে নির্বাচন করেছিলেন। নির্বাচনী মাঠে এখন বেশ সরব সাখাওয়াত হাসান বলেন, ‘এলাকার মানুষের জন্য আমি ৩৫ থেকে ৪০ বছর ধরে কাজ করে আসছি। এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবাসেন, তার প্রমাণ আগেও পেয়েছি।’

আসনটিতে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন শেখ জিল্লুর রহমান। তিনি দলের ঢাকা মহানগরের হাতিরঝিল থানা শাখার আমির। তিনি ঢাকায় বসবাস করেন। দলের মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে এলাকায় গণসংযোগ করছেন। জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ভোটের প্রতি মানুষের উৎসাহ বেশি। আশা করি, নতুন ভোটাররা এবারের নির্বাচনে জামায়াতকে দেশের দায়িত্ব দিয়ে নতুন এক বাংলাদেশ দেখতে চান।’ এখানে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হাদীসুর রহমান রুহানী। তিনি দলের বানিয়াচং উপজেলা শাখার সভাপতির দায়িত্বে আছেন।

এ আসনে গত চারটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হন। ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলেন আবদুল মজিদ খান। সর্বশেষ ২০২৪ সালে নির্বাচনে দল তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। তবে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ময়েজ উদ্দিন শরীফ (রুয়েল)।

হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ)

এখানে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জি কে গউছ। তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ)। এখানে প্রচারণায় আছেন গণ অধিকার পরিষদের প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি চৌধুরী আশরাফুল বারী (নোমান)। প্রচারণায় এ দুই প্রার্থীর বাগ্‌যুদ্ধ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে।

হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছ ২০১৮ সালে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি মনোনয়ন পাওয়ার পর কর্মী-সমর্থকেরা নির্বাচনী এলাকায় ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়েছেন। জি কে গউছ প্রথম আলোকে বলেন, তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে এবারের নির্বাচন প্রথম ধাপ অতিক্রম করল। বাধাহীন ও উৎসবমুখর পরিবেশে এ নির্বাচন হবে, এটা সবার আশা। জনগণ সুন্দরভাবে ভোট প্রয়োগ করলে এ আসনে বিএনপি জয়ী হবে। কারণ, জনগণ দেশের দায়িত্বে বিএনপিকে দেখতে চান।

এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী কাজী মহসিন আহমদ। তিনি জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি। তিনি বলেন, বিগত দিনে সরকারগুলোর নানা দুর্নীতির কারণে মানুষের মনে ভয় তৈরি হয়েছে। এবার মানুষ নিজের ভোট নিজে দিয়ে স্বপ্নের সরকার গঠন করতে চান।

এ ছাড়া মাঠে প্রার্থী হিসেবে আছেন ইসলামী আন্দোলনের মহিব উদ্দিন আহমদ (সোহেল) এবং খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মো. ছারওয়ার রহমান চৌধুরী।

হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর)

আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সৈয়দ মো. ফয়সল। তিনি শিল্পপ্রতিষ্ঠান সায়হাম গ্রুপের চেয়ারম্যান। ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে জয়ের দেখা পাননি। এবারও তাঁর মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে দলের ভেতরে কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সহসম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মি আক্তার এখানে মনোনয়ন চান। তাঁর সমর্থকেরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে চুনারুঘাট উপজেলা সদরে বেশ কিছুদিন ধরে বিক্ষোভ মিছিল, সভা-সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন।

শাম্মি আক্তার বলেন, ‘স্বাধীনতার পর এ আসনে বিএনপি কখনো জয়ী হতে পারেনি। এবার আশা ছিল বিএনপি জিতবে। কিন্তু এমন একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যিনি এর আগে চারবার নির্বাচন করে ফেল করেছেন। জয়ী হতে পারেননি। ৮০-ঊর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ায় স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তা মেনে নিতে পারছেন না।’

এ বিষয়ে সৈয়দ মো. ফয়সল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আসনটিতে জামায়াতে ইসলামী প্রথমে দলের জেলা আমির মুখলিছুর রহমানকে প্রার্থী করেছিল। পরে ২ ডিসেম্বর তাঁর বদলে সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়। অলিউল্লাহ নোমান দীর্ঘ সময় যুক্তরাজ্যে বসবাস করছিলেন। গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি দেশে ফেরেন।

মুখলিছুর রহমান জানান, রাজনৈতিক বাস্তবতা ও সংগঠনের কৌশলগত সিদ্ধান্ত বিবেচনায় কেন্দ্রীয় সংগঠন তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে অলিউল্লাহ নোমানকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সংগঠনের প্রতি সম্মান ও আনুগত্য থেকে তিনি সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন।

এনসিপি মনোনয়ন দিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (উত্তরাঞ্চল) ও হবিগঞ্জ জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী নাহিদ উদ্দিনকে (তারেক)। ইসলামী আন্দোলন এখানে প্রার্থী করেছে মো. কামাল উদ্দিনকে। তিনি দলের চুনারুঘাট উপজেলা সভাপতি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ