জামালপুরে ৩৫ হাজার গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও ২৩ সমিতি, থানার সামনে গ্রাহকদের অবস্থান
Published: 6th, April 2025 GMT
জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে জমা রাখা আমানতের টাকা ফেরত পেতে বিক্ষোভ করেছেন গ্রাহকেরা। আজ রোববার দুপুরে তাঁরা লাঠি ও ঝাড়ুমিছিল করে থানা চত্বরে অবস্থান এবং জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন। ‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’—ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
বেলা ১১টার দিকে শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে কয়েক হাজার গ্রাহক জড়ো হন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে থানা গেটের সামনে এসে অবস্থান নেয়। পরে তাঁরা থানার সামনের সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা দুইটা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলে।
একই দাবিতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও, ২৪ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি ও ২৩ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কের পাশে কর্মসূচি পালন করেন।
আজকের কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসার পথে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে ফাতেমা বেগম (৬০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার ভাংবাড়ী এলাকার হাসেম মিয়ার স্ত্রী। দুটি সমিতিতে তিনি ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা জমা রেখেছিলেন। বাড়ি থেকে কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার সময় মিলন বাজার এলাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে গৃহকর্মী, ভ্যানচালক, প্রবাসী, কৃষক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, এমনকি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রয়েছেন। তাঁরা জানান, লাভের আশায় তাঁরা ২৩টি সমবায় সমিতিতে কেউ এককালীন, কেউ মাসে মাসে টাকা জমা রাখতেন। এখন মূল টাকা ফেরত পাওয়াই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরা প্রায় দুই বছর ধরে আত্মগোপনে রয়েছেন।
গ্রাহকদের অভিযোগ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে মাদারগঞ্জসহ জামালপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সমিতিগুলোর মালিকেরা।
সমাবেশে বক্তব্য দেন আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী। তিনি বলেন, ‘দেড় হাজার কোটি টাকা নিয়ে মালিকেরা আত্মগোপনে থাকলেও ওই অর্থে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রয়েছে। আমরা বারবার দাবি জানিয়ে আসছি, এসব প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া হোক। প্রশাসন লোকদেখানো আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।’
কমিটির সদস্য মাহবুব আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকেরা বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়ে আসছেন। মামলা হয়েছে থানায় ও আদালতে। যখন কর্মসূচি পালিত হয়, তখন প্রশাসনের লোকজন টাকা উদ্ধারে নানা রকম প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু বাস্তবায়ন কিছুই হয়নি। বাধ্য হয়ে তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন।
জেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুল হান্নানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সমিতিগুলোর অধিকাংশই নিবন্ধিত। গ্রাহকের অন্তত ৭৩০ কোটি টাকা এই সমিতিগুলোতে জমা রয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধুন উল্লেখযোগ্য। কেবল এই ছয়টি সমিতির কাছেই জমা রয়েছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি।
২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি হুমায়ুন আহম্মেদ, শতদল সমিতির মো.
মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান আল মামুন বলেন, সমিতিগুলোর গ্রাহকেরা থানার সামনে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে, যাতে তাঁরা সড়ক ছেড়ে দেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম দ রগঞ জ কর মকর ত র গ র হক গ র হক র অবস থ ন র স মন
এছাড়াও পড়ুন:
রয়্যাল সোসাইটি অব লিটারেচারের নতুন সভাপতি এলিফ শাফাক
ঔপন্যাসিক এলিফ শাফাক যুক্তরাজ্যের রয়্যাল সোসাইটি অব লিটারেচারের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। বিদায়ী সভাপতি বার্নার্দিন ইভারিস্টোর চার বছরের মেয়াদ শেষে তিনি এ দায়িত্ব নিচ্ছেন।
ব্রিটিশ-তুর্কি এই লেখক দ্য আইল্যান্ড অব মিসিং ট্রিস ও দেয়ার আর রিভারস ইন দ্য স্কাইসহ বহু উপন্যাসের রচয়িতা। সোসাইটির বার্ষিক সাধারণ সভায় ফেলোদের ভোটে তাঁকে নির্বাচন করা হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে নাম ঘোষণা করা হয়।
এলিফ শাফাক দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘তাঁদের সিদ্ধান্তে আমি আবেগাপ্লুত। আমার কাছে ফেলোশিপ মানে কেবল সংগঠনে যোগ দেওয়া নয়। আমি মনে করি, এর মানে হলো সহযোগিতা, সংহতি ও একসঙ্গে থাকা। আমরা অস্থির ও কঠিন সময় পার করছি। লেখক, গ্রন্থাগারিকসহ সবার সামনে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ।’
তাঁর মেয়াদকালে নিজস্ব কিছু পরিকল্পনা থাকলেও এলিফ শাফাক বলেন, ‘প্রথমত, আমি সবার কথা শুনতে চাই। আমার সহলেখক ও কবিদের ভাবনা ও প্রস্তাব জানতে চাই।’
এজিএমে মেয়াদ শেষে সদ্য সাবেক সভাপতি ইভারিস্টো বলেন, ‘শাফাক নির্বাচিত হওয়ায় আমি খুশি। তিনি বিশ্বব্যাপী বেস্টসেলিং লেখক হিসেবে পরিচিত।’
এলিফ শাফাক ২০২০ সাল থেকে রয়্যাল সোসাইটি অব লিটাচারের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২১, যার মধ্যে ১৩টি উপন্যাস। তাঁর লেখা ৫৮টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
• গ্রন্থনা: রবিউল কমল