ওয়াশিংটন যাচ্ছে ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল
Published: 8th, April 2025 GMT
ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত খনিজ সম্পদ চুক্তির আলোচনার জন্য এ সপ্তাহেই ওয়াশিংটন যাচ্ছে ইউক্রেনের একটি প্রতিনিধি দল। গত মাসে চুক্তিটি সই হওয়ার কথা থাকলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে প্রকাশ্য সংঘাতের কারণে ওই আলোচনা স্থগিত হয়ে যায়।
ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিদেনকো গতকাল সোমবার জানিয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ বিষয়ে চুক্তি নিয়ে আলোচনায় উভয় দেশের কৌশলগত স্বার্থ এবং শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার অঙ্গীকার বিবেচনায় নেওয়া হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ আহরণ থেকে লাভের একটি অংশ রয়্যালটি হিসেবে পাবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক ও আর্থিক সহায়তার ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে এই স্বত্ব দাবি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই চুক্তিতে রাশিয়ার ভবিষ্যৎ আগ্রাসন ঠেকানোর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চয়তাও অন্তর্ভুক্ত রাখার বিষয়ে কথা বলবে তারা।
এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করলেও, ‘এখনও বহু প্রশ্ন ঝুলে রয়েছে’ বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। সোমবার এক বিবৃতিতে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘পুতিন যুদ্ধবিরতির পক্ষে। তবে সেটি কীভাবে কার্যকর হবে এ বিষয়ে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর নেই।’
এ অবস্থায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার কায়রো সফরকালে তিনি বলেন, ‘গত প্রায় এক মাস ধরে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া’।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থাপিত যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনার প্রতি সমর্থনের কথাও জানান মাখোঁ।
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন জেলেনস্কিও। তবে তাঁর অভিযোগ, রাশিয়া সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। যুদ্ধবিরতির অনিশ্চয়তার জন্য কিয়েভের নিয়ন্ত্রণহীনভাবে কাজ করাকে দুষছে ক্রেমলিন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা