গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের দূতাবাস অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষক সমিতি।

এ কর্মসূচি পালন করবেন জবির শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। দূতাবাসে গিয়ে তারা স্মারকলিপি প্রদান করবেন বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে শিক্ষক সমিতি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সম্মিলিতভাবে এ সিদ্ধান্ত নেন। 

সভায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড.

রইছ উদ্দীন বলেন, “ইসলামকে ভালোবেসেই আমাদের এ উদ্যোগ। ফিলিস্তিনের প্রতি ন্যায়বিচার ও বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে আমাদের এ আয়োজন। বিশ্ববাসীকে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে মেসেজ দেব এবং শান্তিপূর্ণভাবে দূতাবাসে স্মারকলিপি দেব।”

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশ থেকে চোখের পানি ফেলা ছাড়া আমরা আর কিছুই করতে পারছি না। কিন্তু মুসলমান হিসেবে মুসলমানদের পক্ষে আমরা দাঁড়াবো।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ রানা বলেন, “শিক্ষক সমিতির এমন সাহসী উদ্যোগের জন্য আমরা তাদের অভিনন্দন জানাই। আজ ফিলিস্তিনের ভূমি দুধের শিশুর রক্তে ভিজে যাচ্ছে। অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না। এমন সময়ে শিক্ষক সমিতির এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা এই উদ্যোগের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। আমরা সবাই লংমার্চে অংশগ্রহণ করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া আহ্বান জানাচ্ছি।”

শিক্ষক সমিতির সদস্য ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. বেলাল হোসাইন বলেন, “যেহেতু অনেক শিক্ষার্থী দীর্ঘ পথ হেঁটে অংশগ্রহণ করবে। তাই তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হলো ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের জন্মভূমি রক্ষার সংগ্রামে সংহতি প্রকাশ করা।”

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, শাখা ছাত্রদল, শাখা ইসলামী ছাত্র শিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাসহ বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ