ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরাই এখন শুল্ক আরোপের সমালোচনা করছেন
Published: 8th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশ্বব্যাপী শুল্ক আরোপের ঘোষণা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন খোদ তাঁর ঘনিষ্ঠ ধনকুবের ব্যবসায়ী নেতারা। গত বুধবার ট্রাম্পের ওই শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর থেকে সারা বিশ্বে পুঁজিবাজারগুলোয় ব্যাপক দরপতন হচ্ছে।
ট্রাম্পের সমর্থক ধনকুবের বিনিয়োগকারী বিল অকম্যান গত রোববার সতর্ক করে বলেছেন, নতুন শুল্ক আরোপ নিয়ে সামনে অগ্রসর হলে সেটা অর্থনৈতিকভাবে পরমাণু যুদ্ধ শুরু করার শামিল হবে। ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেছিলেন অকম্যান।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাকি বিশ্বের বাণিজ্যে ভারসাম্য আনার কথা বলে ২ এপ্রিল বেশ কয়েকটি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তালিকায় থাকা কয়েকটি দেশের ওপর তিনি উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’–এ এক পোস্টে অকম্যান লিখেছেন, যদি নতুন শুল্ক কার্যকর হয়, তবে বাণিজ্যিক বিনিয়োগ ক্রমশ গতি হারাবে এবং ক্রেতারা অর্থ ব্যয় বন্ধ করে দেবেন।
অকম্যান আরও লিখেন, ‘বাকি বিশ্বের কাছে আমাদের যে সুনাম রয়েছে, আমরা সেটির গুরুতর ক্ষতি করব এবং এই সুনাম পুনরুদ্ধার করতে কয়েক বছর এবং সম্ভবত কয়েক দশক লেগে যাবে।’
অকম্যানের এই পোস্ট ১ কোটি ৬০ লাখ বার দেখা হয়েছে।
পারশিং স্কয়ার ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অকম্যান আরও বলেছেন, ‘যদি ট্রাম্প তাঁর পথ পরিবর্তন না করেন, তবে আমরা নিজেদের তৈরি করা একটি অর্থনৈতিক পরমাণু দুর্যোগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এবং আমাদের আশ্রয় খোঁজা শুরু করা উচিত।’
কেন তিনি এ কথা বলছেন, তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন অকম্যান। তিনি বলেন, ‘একটি অর্থনৈতিক পরমাণু যুদ্ধের মাঝখানে কোনো সিইও এবং কোনো পরিচালনা পরিষদ আমাদের দেশে বড়, দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি দিতে কি স্বস্তিবোধ করবেন? প্রেসিডেন্ট বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়িক নেতাদের আস্থা হারাতে শুরু করেছেন।’
ট্রাম্প বুধবার সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা সব পণ্যের ওপর যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, তা গত শনিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। সর্বশেষ আরোপ করা শুল্ক কার্যকর হবে আগামীকাল বুধবার থেকে।
অন্যান্য লাখো কোটিপতি ও ধনকুবের ব্যবসায়ীরাও খোলাখুলি ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। তাঁদের একজন জেমি ডিমোন। তিনি জেপিমরগ্যান চেজ–এর চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনিও ট্রাম্পের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
গতকাল সোমবার ডিমোন সতর্ক করে বলেন, শুল্কের ফলে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, বৈশ্বিক অর্থনীতি মন্দার দিকে ধাবিত হওয়ার এবং বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
শেয়ারহোল্ডারদের কাছে পাঠানো বার্ষিক চিঠিতে ডিমোন আরও লেখেন, ‘সাম্প্রতিক শুল্ক খুব সম্ভবত মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি করবে এবং অনেকেই মনে করছেন, এতে মন্দার সম্ভাবনাও অনেক বাড়বে। শুল্কের কারণে মন্দা দেখা দেবে কি দেবে না, তা নিয়ে এখনো হয়তো প্রশ্নের অবকাশ আছে, কিন্তু এটা অর্থনীতির গতি হ্রাস করবে।’
আরও পড়ুনএশিয়ার ৬ দেশসহ যে ১০ দেশের ওপর সবচেয়ে বেশি শুল্কারোপ করলেন ট্রাম্প৫ ঘণ্টা আগেআরেক কোটিপতি বিনিয়োগকারী স্ট্যানলি ড্রুকেনমিলার গতকাল এক্সে এক পোস্টে বলেছেন, তিনি ১০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপের পক্ষে নন।
গতকাল রাতে ফিশার ইনভেস্টমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান ধনকুবের কেন ফিশার এক্সে এক পোস্টে বলেছেন, ‘ট্রাম্প (গত) বুধবার যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটা বোকামি, ভুল, চরম উদ্ধত, ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাকে অবজ্ঞা করা এবং সমস্যাই নয়—এমন একটি বিষয়কে ভুল যন্ত্র দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা। আমার অভিজ্ঞতা বলছে, এটা ব্যর্থ হবে এবং সমস্যা যতটা তার চেয়ে আতঙ্ক বেশি এবং এখান থেকে এটা অতিরঞ্জিত।’
ফিশার এদিন বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, তিনি সাধারণত প্রেসিডেন্টদের কার্যক্রম নিয়ে জনসম্মুখে কথা বলেন না। কিন্তু শুল্ক নিয়ে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প যা করেছেন, সেটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।
এমনকি বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইলন মাস্ক পর্যন্ত এ নিয়ে কথা বলেছেন। গত রোববার তিনি বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে ‘শুল্কবিহীন অবস্থার’ ব্যাপারে আশাবাদী।
অনলাইনে ইতালির উপপ্রধানমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক আরও বলেন, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার মধ্যে একটি কার্যকর মুক্ত-বাণিজ্য অঞ্চল তৈরি হোক, সেটা দেখতে চান তিনি।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র আরোপিত শুল্কের শেষ দেখে নেওয়ার অঙ্গীকার চীনের৭ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র ধনক ব র ক র যকর ব যবস য় বল ছ ন কর ছ ন র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত ৩, আহত ২৯
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট।
আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।