১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার শুনানিতে আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে অংশ নেন সদ্য নিয়োগ পাওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার। এ মামলার শুনানির শুরুতেই ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন তোলেন, ডিফেন্সের লইয়ারকে (আসামিপক্ষের আইনজীবী) প্রসিকিউশনে (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে) নিয়ে নিচ্ছেন। যদি কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট (স্বার্থের সংঘাত) দেখা দেয়, তখন কী হবে?

ট্রাইব্যুনালের এই প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, কোনো একটি মামলায় একজন আইনজীবী একটি পক্ষ নিয়েছেন। যদি সেই আইনজীবী পরে সেই মামলায় বিপরীত পক্ষ নেন, তখন সেটা ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ হবে। কিন্তু একজন আইনজীবী একটি মামলায় আসামিপক্ষ, আরেকটি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের হলে তা ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ হবে না।

বিচারপতি মো.

গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

শুনানির পর ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বিষয়ে সাংবাদিকেরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামকে প্রশ্ন করেন। তখন তিনি বলেন, আজকে একজন ডিফেন্স লইয়ার আছেন, আগামীকাল প্রসিকিউশনে আসতেই পারেন। সেটা খুব বড় ইস্যু না। কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হবে না। একই মামলায় একজন আগে অন্যপক্ষে থাকলে পরে বিপরীত পক্ষে গিয়ে দাঁড়াতে পারবে না। এটা হচ্ছে খুবই পরিচিত ও সাধারণ বিধান।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অন্তত চারজন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। বর্তমান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন।

গত ২৭ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে যোগ দেন আইনজীবী আবদুস সাত্তার। ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের আগে তিনি আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০২২ সালে হওয়া একটি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে শুনানিতে অংশ নেন তিনি।

ফজলে করিমকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীকে এক দিন জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ১৬ এপ্রিল জিজ্ঞাসাবাদের দিন ধার্য করা হয়েছে।

অন্যদিকে ফজলে করিম অসুস্থ, এমনটি উল্লেখ করে জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। সেই আবেদনের শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ এপ্রিল।

একই মামলায় যুবলীগ কর্মী মো. ফিরোজকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। পরে তাঁকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে ৯ জন শহীদ এবং ৪৫৯ জন আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

শুনানি শেষে তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এ মামলায় আরও অনেকের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সবাইকে চিহ্নিত করার তৎপরতা চলমান আছে। সে কারণে আদালত আরও তিন মাসের সময় দিয়েছেন। আগামী ৭ জুলাই এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

তিন পুলিশ সদস্যকে হাজিরের নির্দেশ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সাভারের আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলায় পুলিশের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে ১৫ এপ্রিল হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তাঁরা হলেন সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী ও ডিবির সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন। এই তিনজনই অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

আইসিসিতে পাঠানো হবে না

গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ট্রাইব্যুনালেই করা হবে। কোনো অবস্থাতেই বিষয়টি নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিসিতে (আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত) পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর।

ট্রাইব্যুনালে আজ শুনানি শেষ হওয়ার পর চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আইসিসি যদি আমাদেরকে টেকনিক্যাল সাপোর্ট (কারিগরি সহায়তা) দেয়, এইখানে বিচার হবে তারা আমাদের বিভিন্ন টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেবেন, সেটা আমরা অবশ্যই গ্রহণ করব। যেমনটি আমরা জাতিসংঘের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলাম। তারা আমাদের প্রসিকিউটর এবং ইনভেস্টিগেটরদের বিভিন্ন ট্রেইনিং দিয়ে সাহায্য করেছেন। যে তদন্ত তাঁরা করেছেন সেই রিপোর্ট আমাদেরকে দিয়েছেন।... সুতরাং সেই ধরনের সহযোগিতা যদি আইসিসি থেকে আসে, আমরা সেটা গ্রহণ করব। কিন্তু মামলাগুলো বিচারের জন্য আইসিসিতে প্রেরণ করা হবে না, এটাই এখন পর্যন্ত আমাদের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ষ ট রপক ষ র ত জ ল ইসল ম ম নবত ব র ধ র সময় স অপর ধ র আম দ র আইস স সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ পঞ্চম পর্বে থাকছে বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ মূলত আইনজীবীদের পেশাজীবনের অনুসরণীয় বিধিমালা। এ আইন থেকে আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষায় দুটি প্রশ্ন আসবে। উত্তর দিতে হবে একটি। নম্বর থাকবে ১০।

প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন দেখেই বোঝা যাচ্ছে আইনটি কেমন হতে পারে। মূলত বার কাউন্সিলের গঠন, আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা এবং একজন আইনজীবী হিসেবে সমাজের প্রতি, মক্কেলের প্রতি, সহকর্মীদের প্রতি যেসব দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা এ আইনে বলা হয়েছে। বাস্তবধর্মী ও পেশাজীবনে অতি চর্চিত একটি আইন হলো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২। এ আইন থেকে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।

যেমন বার কাউন্সিল কীভাবে গঠিত হয়, বার কাউন্সিলের কার্যবালি কী, সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হন, কতগুলো কমিটি রয়েছে, কমিটির কাজ কী কী—এগুলো পড়তে হবে। অনেকেই আছে বার কাউন্সিল ও বার অ্যাসোশিয়েশনের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না। এটি ভালো করে রপ্ত করতে হবে। এমন প্রশ্ন হরহামেশা পরীক্ষায় আসে।

এ ছাড়া বার ট্রাইব্যুনালের গঠন ও কার্যাবলি, আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণের জন্য কী কী ধরনের শাস্তি রয়েছে, বার কাউন্সিল কি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে—বিষয়গুলো কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। অনুচ্ছেদ ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩২ এবং বিধি ৪১, ৪১ক ও ৫০–এ এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। সেগুলো ভালো করে পড়তে হবে। অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা, একজন আইনজীবী হিসেবে আরেক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তর জানতে হবে। এসব বিষয় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে।

পেশাগত বিধি অংশে রচনামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন পেশাগত বিধি এবং নীতিমালার আলোকে আদালতের প্রতি, মক্কেলের প্রতিসহ আইনজীবীদের প্রতি ও জনসাধারণের প্রতি একজন আইনজীবীর দায়িত্ব ও কর্তব্য পর্যালোচনা করতে বলা হয়। বর্তমান ঢাকা বারসহ বেশ কয়েকটি বার অ্যাসোশিয়েশনে এডহক কমিটি রয়েছে। এডহক বার কাউন্সিলের গঠন ও ফাংশনস সম্পর্কে প্রশ্ন আসতে পারে। এগুলো ভালো করে পড়তে হবে।

অনেক সময়ে আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরসংক্রান্ত মুসাবিদা করতে দেওয়া হয়। তাই এই মুসাবিদা নিয়মিত অনুশীলন করবেন। মনে রাখবেন, মামলার মুসাবিদা ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মুসাবিদার ধরন কিন্তু এক নয়। তাই যেকোনো ভালো একটি বই থেকে ফরমেটটি দেখে নেবেন এবং অনুশীলন করবেন। একই সঙ্গে বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন সমাধান করবেন। এ আইন থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন রিপিটও হয়।

একটি বিষয় মনে রাখবেন, আইনটি সহজ বলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ, কৃতকার্য হওয়ার জন্য এই ১০ নম্বর অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন
  • দণ্ডাদেশ বহালের রায়ের বিরুদ্ধে ১০ আসামির আপিল ও লিভ টু আপিল
  • যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
  • দক্ষিণ ভারতের নিষ্পেষিত মুসলিম নারীদের কণ্ঠস্বর
  • সুবিচার মিলবে কত বছরে
  • ধর্ষণের শিকার শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন বিএনপি নেতা অমিত
  • রেফারেন্স ও মতামতপ্রক্রিয়া নিয়ে রিট খারিজ, আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন