ওবায়দুলের আদর্শ হকির ম্যারাডোনা, হতে চান মেসির মতো
Published: 10th, April 2025 GMT
লিওনেল মেসিকে নতুন করে চেনানোর কিছু নেই। গোটা বিশ্ব তাঁকে একনামে চেনে। তাঁর ফুটবলশৈলী কোটি মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে। ফুটবলের সঙ্গে হকির তুলনা চলে না। তবে একটা জায়গায় ফুটবলের সঙ্গে হকির দারুণ মিল—দুটিই গোলের খেলা। গোলের কাজটা মেসি যেমন দারুণভাবে করেন, ওবায়দুল হোসেনও চান হকি মাঠে তেমনই কিছু করতে।
ওবায়দুল শৈশব থেকে মেসির খেলার ভক্ত। মনের ক্যানভাসে ফুটবলার হওয়ার ছবিও এঁকেছিলেন। জিনেদিন জিদান, রোনালদিনিও, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো ফুটবল–তারকাদের খোঁজ রাখতেন নিয়মিতই। কিন্তু বাবার স্বপ্ন পূরণে ওবায়দুল শেষ পর্যন্ত হকির স্টিক হাতে তুলে নিয়েছেন।
২০১৬ সালে বিকেএসপিএতে ভর্তি হওয়ার পর হকি হয়ে যায় ওবায়দুলের সঙ্গী। তবে প্রথম প্রেমের মতো ফুটবলকেও ভুলতে পারেননি। হকির টার্ফেই খুঁজে বেড়ান ফুটবল। স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের হকির মেসি হওয়ার, ‘মেসি আমার পছন্দের ফুটবলার। একসময় ভাবতাম তাঁর মতো হবো। কিন্তু ফুটবলে তো আর যাওয়া হলো না। বাবার জন্য হকিতে আসা। তবে ফুটবলে না গেলেও হকির মেসি হওয়ার চেষ্টাটাই করব।’
কদিন আগে এশিয়ান হকি ফেডারেশন (এএইচএফ) কাপের জন্য দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। দলে প্রথমবার ডাক পেয়েছেন ওবায়দুল। বিকেএসপিতে থাকাকালে ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-২১ হকি দলে জায়গা পেয়েছিলেন। গত বছরের ডিসেম্বরে ওমানের মাসকটে জুনিয়র এশিয়া কাপে থাইল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো জুনিয়র হকির বিশ্বকাপে জায়গা করে ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ। যে ইতিহাসের অংশ ছিলেন ওবায়দুলও। পুরো টুর্নামেন্টে করেছেন পাঁচ গোল। এরপর বিজয় দিবস হকিতেও উজ্জ্বল ছিলেন এই ফরোয়ার্ড। বিমানবাহিনীর হয়ে করেছেন ছয় গোল।
আরও পড়ুনপ্রথমবার হকির জাতীয় দলে আবেদ-ওবায়দুল০৬ এপ্রিল ২০২৫৬ এপ্রিল এএইচএফ কাপের মূল দলে নিজের নামটা দেখার পর বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে ওবায়দুলের। যেখানে কি না তাঁর খুশি হওয়ার কথা, সেখানে বসে বসে চোখের জল ফেলেছেন। কেন? উত্তরে ওবায়দুল বললেন, ‘বাবাকে খুব মনে পড়েছিল। আজ বাবা থাকলে কত–না খুশি হতেন। হয়তো পুরো মহল্লায় ঘুরে বলতেন, “জানো, আমার ছেলে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে।”’
২০২৩ সালে এক দুপুরে হঠাৎই না–ফেরার দেশে পাড়ি জমান ওবায়দুলের বাবা মোহাম্মদ জুয়েল। নিজে বিভাগীয় পর্যায়ে হকি খেলেছিলেন, ছেলেকে লাল–সবুজের জার্সিতে দেখার খুব ইচ্ছা ছিল তাঁর। শেষ পর্যন্ত দেখে যেতে পারেননি। যে শূন্যতা ওবায়দুলও বয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে বাবার ইচ্ছা পূরণ করেই থামতে চান না, হকির জন্য নিজেকে নিংড়ে দিতে চান। হকির রং দিয়ে সাজাতে চান জীবনটা, ‘এখন মনে হচ্ছে বড় কিছুই করতে হবে। চেষ্টা করব দেশকে দারুণ কিছু দিতে। প্রথমবার জাতীয় দলের হয়ে খেলব। তা–ও আবার বিদেশের মাটিতে। ভাবতেই ভালো লাগছে।’
ওবায়দুল হোসেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথমব র ফ টবল র হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলিয়ায় নারী এশিয়া কাপ: শক্তিশালী গ্রুপে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে।
আগামী বছরের ১-২৩ মার্চ অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে নারী এশিয়া কাপ। ১২ দলের এই টুর্নামেন্টের ড্র সিডনিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ দুপুরে। যেখানে শক্তিশালী গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ।
‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ উজবেকিস্তান, চীন ও উত্তর কোরিয়া। জাঁকজমকপূর্ণ ড্রতে বাংলাদেশ ছিল চার নম্বর প্লটে। সঙ্গী ছিল ইরান ও ভারত। গ্রুপিং ড্রতে টুর্নামেন্টের একমাত্র অভিষিক্ত দল বাংলাদেশ ‘বি’ গ্রুপের তৃতীয় দল নির্বাচিত হয়।
পরের রাউন্ডে ‘বি’ গ্রুপের চতুর্থ দল হয় উজবেকিস্তান। এরপর ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন চীন বাংলাদেশের গ্রুপের দ্বিতীয় দল হয়। সবশেষ দল হিসেবে এই গ্রুপে যুক্ত হয় উত্তর কোরিয়া। যারা ২০১০ সালে প্রতিযোগিতায় রানার্সআপ হয়েছিল।
ড্র অনুষ্ঠানে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ও এএফসি অংশগ্রহণকারী সকল দেশের অধিনায়ক ও কোচকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। প্রথমবার নারী এশিয়া কাপে সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশের কেউ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেনি। গতকাল অংশগ্রহণকারী দলগুলোর কোচ, খেলোয়াড়রা ট্রফি নিয়ে ফটোসেশন করে হারবার ব্রিজের সামনে। সেখানে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ছাড়া, তাইওয়ান,ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনামের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাছাইপর্বে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল দুর্বার। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১২৮ নম্বরে থাকা বাংলাদেশ পড়েছিল কঠিন ‘সি’ গ্রুপে, যেখানে প্রতিপক্ষ ছিল বাহরাইন (র্যাঙ্কিং ৯২), তুর্কমেনিস্তান এবং স্বাগতিক মিয়ানমার (র্যাঙ্কিং ৫৫)। র্যাঙ্কিংয়ের বিচারে পিছিয়ে থাকলেও মাঠের পারফরম্যান্সে বোঝার উপায় ছিল না।
প্রথম ম্যাচেই বাহরাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে ঋতুপর্ণার জোড়া গোলের নৈপুণ্যে ২-১ ব্যবধানে হারায় মিয়ানমারকে। শেষ ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানকেও ছাড়েনি মেয়েরা। ৭-০ গোলের দাপুটে জয় তুলে নেয় তারা।
এই জয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। আগামী বছর মার্চে বসবে টুর্নামেন্টের ২১তম আসর, যেখানে খেলবে ১২টি দেশ।
ঢাকা/ইয়াসিন