ধান কেনায় কোনো সিন্ডিকেট হলে সোজা করে দেব: সুনামগঞ্জে কৃষি উপদেষ্টা
Published: 10th, April 2025 GMT
কৃষি ও কৃষকেরাই দেশটাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন মন্তব্য করে কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘এ জন্য কৃষকদের সব সময় ধন্যবাদ দিতে হবে। কৃষকের ধানের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা হবে। সরকার ধান কিনবে। ধান কেনায় কোনো সিন্ডিকেট হলে সেটি আমরা সোজা করে দেব।’
সুনামগঞ্জের হাওরে বোরো ধান কাটার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের কৃষি উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সদর উপজেলার দেখার হাওরের গোবিন্দপুর এলাকায় কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে একজন কৃষকের ধান কাটেন কৃষি উপদেষ্টা। এর মাধ্যমেই হাওরে বোরো ধান কাটার উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর কৃষকদের সঙ্গে ফসল, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ, ধানের দামসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার ধান ও চাল ক্রয়ের জন্য দাম নির্ধারণ করেছে। সেই অনুযায়ী যথাসময়ে ধান-চাল কেনা শুরু হবে। কৃষকেরাই আমাদের ভরসা। তাঁরা নানাভাবে বঞ্চিত হন। কৃষকেরা যাতে ধানের ন্যায্য দাম পান, সে জন্য সরকারিভাবে আমরা ধান ক্রয় করব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে এবার ভালো ধান হয়েছে। খাদ্যসংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। প্রচুর খাদ্য মজুত আছে।
কৃষকেরা উপদেষ্টার কাছে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের দুর্বলতা, হাওরে রাবার ড্যামের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। উপদেষ্টা তখন রাবার ড্যামের বিষয়ে কথা বলতে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
এ সময় উপদেষ্টার সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. জাকির হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাইফুল ইসলাম, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা উন নবী, পুলিশের সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. মুশফিকুর রহমান, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, পুলিশ সুপার মো. তোফায়েল আহাম্মেদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সুনামগঞ্জে এবার ২ লাখ ২৩ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৩ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন।
কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দুপুরে সুনামগঞ্জে আসার পথে জেলার শান্তিগঞ্জ থানা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং আরও হবে বলে মন্তব্য করেন। উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব কিছু হাতিয়ারও আমরা হারিয়েছি। সবগুলো উদ্ধার হয়নি। সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। সেগুলো উদ্ধার হলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কি আগের চেয়ে ভালো হয়নি?
সম্প্রতি দেশের দুটি বিভাগীয় শহরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকালে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ঘটনা কিছু ঘটবে। আমরা প্রতিকার নিয়েছি কি না, সেটা দেখার বিষয়। যেসব জায়গায় ঘটনা ঘটছে, যারা এই অপকর্ম করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ভবিষ্যতেও কেউ যদি এ রকম অপরাধ করতে যায়, আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ উপদ ষ ট হ ওর র
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।