বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় মোটিফ বানানো চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনায় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন। এতে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাজমুল হোসেন খানকে প্রধান করা হয়েছে।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এদিকে, ওই ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করার তথ্য দিয়েছে পুলিশ। 

আরো পড়ুন:

হাসপাতালে পবিপ্রবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন

খুলনার দিঘলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হায়দারের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রাত আড়াইটার দিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া ঘোষের বাজার এলাকায় অবস্থিত মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দেয় সন্ত্রাসীরা বলে অভিযোগ ওঠে। আগুনে পুড়ে যায় বাড়িটির টিনশেড ঘরে রাখা মানবেন্দ্র ঘোষের দীর্ঘদিনের শিল্পকর্ম, একটি মোটরসাইকেল ও আসবাবপত্র।

এবার ঢাকায় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখের আদলে ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার মোটিফ’ বানানো হয়। এলাকাবাসীর ধারণা, মোটিফ তৈরির কাজে যুক্ত থাকার কারণে মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দেওয়া হতে পারে। 

ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে বাড়িতে থাকা দোকানের কর্মচারীরা আগুন লেগেছে বলে চিৎকার করতে থাকেন। পরে আশপাশের লোকজন উপস্থিত হয়ে আগুন লেভানোর চেষ্টা করে। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষ দাবি করেন, ‍পহেলা বৈশাখের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ইনডাইরেক্ট ভাবে তিনি হুমকির মধ্যে ছিলেন। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানোর পর মঙ্গলবার রাতে সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি।

তিনি বলেন, “নববর্ষের শোভাযাত্রায় শেখ হাসিনার যে মুখাকৃতি তৈরি হয়েছে সেটাতে অনেকেই জড়িত ছিল। এটি প্রশাসনের চাহিদার জন্য করা হয়েছে। কোনো শিল্পী নিজ উদ্যোগে সেগুলো তৈরি করেনি। এখানে শিল্পীদের কোনো দায় নেই। প্রশাসন যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে শিল্পীরা সেভাবেই কাজ করেছে।”

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোছা.

ইয়াছমিন খাতুন। তিনি বলেন, “এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।”

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “আমরা গতকাল রাতে জানতে পেরেছি চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনের কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাজমুল হোসেন খানকে প্রধান করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।”

ঢাকা/চন্দন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আগ ন ম ন কগঞ জ র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

আদাবরে কুপিয়ে হত্যা: তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিল সেনাবাহিনী

রাজধানীর আদাবরে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধে রিপন সরদার (৪২) খুনের ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, রিপন হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইমন ওরফে ভাইগ্না ইমন ওরফে দাঁতভাঙা ইমনকে তাঁর দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে দুটি সামুরাই উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ইমন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

সেনাবাহিনী জানায়, গতকাল ভোরের দিকে রাজধানীর আদাবর থানার বালুর মাঠ এলাকায় বাসায় ঢুকে রিপন নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। কিশোর গ্যাং এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ। পরে আহত অবস্থায় রিপনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে তিনি মারা যান।

৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গতকাল সকালে বালুমাঠ এলাকায় একটি হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়। বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করে জানা যায় এলেক্স সবুজ, মনির ও ইমন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান নির্ণয় করে অভিযান চালিয়ে ইমন ও তাঁর দুই সহযোগীকে দুটি সামুরাইসহ গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযান চালানোর কিছুক্ষণ আগে সবুজ ও মনির সেই জায়গা থেকে পালিয়ে যান। তাই তাঁদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। বাকিদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে আদাবরের ১০ নম্বরের বালুর মাঠ এলাকায় ‘বেলচা মনির’ ও ‘রাজু গ্রুপে’র মধ্যে এ মারামারি হয়। ‘বেলচা মনিরের’ লোকজন ‘রাজু গ্রুপের’ রিপনকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিপন সরদারের মৃত্যু হয়।

আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও বিরোধকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটির বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।

আরও পড়ুনআদাবরে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মারামারিতে নিহত ১১৮ ঘণ্টা আগে

তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিপন সরদারের ছেলে ইমন সরদার গতকাল দাবি করেন, রিপন মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন না। রিপন পেশায় চা–দোকানি। বেলচা মনিরের লোকজনের সঙ্গে দুই দিন আগে তাঁর বাবার কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরে তাঁর বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর মা আরজু বেগমও আহত হয়েছেন। তাঁদের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায়।

পুলিশের ভাষ্য, নিহত রিপন সরদার মাদক কারবারি রাজুর চাচাতো ভাই। ‘রাজু গ্রুপ’ ও ‘বেলচা মনিরের’ নেতৃত্বে আদাবরের ১০ ও ১৭ নম্বর এলাকায় মাদক ব্যবসা হয়। ওই বিরোধের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। নিহত রিপনের বিরুদ্ধে ভোলায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আদাবরে কুপিয়ে হত্যা: তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিল সেনাবাহিনী