পেঁয়াজের বাজার চড়া মুরগির দামে স্বস্তি
Published: 17th, April 2025 GMT
হঠাৎ তেতেছে পেঁয়াজের বাজার। গত তিন-চার দিনে কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়েছে মসলাজাতীয় পণ্যটির দাম। তবে ঈদের আগে উত্তাপ ছড়ানো মুরগির বাজারে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে। সবজির বাজারও গত সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা কমতির দিকে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার কারওয়ান বাজার, মালিবাগ ও তেজগাঁওয়ের কলোনি বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের বাজারের এই চিত্র দেখা গেছে।
এবার মৌসুমে বেশ কম দর ছিল পেঁয়াজের। ফলন ভালো হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের কেজি সর্বনিম্ন ২৫ টাকায় নেমেছিল। রোজার ঈদের আগে, অর্থাৎ ১৫ থেকে ২০ দিন আগেও কেজি বিক্রি হয়েছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ঈদের পর বাড়তে থাকে দাম। গত সপ্তাহে সবচেয়ে ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি উঠেছে ৫০ টাকায়। তবে গতকাল দর আরও বেড়ে ৬০ টাকা ছুঁয়েছে। যদিও পাড়া-মহল্লার দোকানদারদের কেউ কেউ এর চেয়েও কিছুটা বেশি দরে বিক্রি করছেন। তবে পাইকারি বাজার থেকে একসঙ্গে পাঁচ কেজি কেনা যাচ্ছে ২৭০ থেকে ২৭৫ টাকায়। সেই হিসাবে কেজিপ্রতি দর পড়ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আকাশ মিয়া বলেন, ঈদের পর থেকে দুই-তিন টাকা করে বাড়ছে দাম। পাবনার মোকামে দাম বাড়ার কারণে ঢাকায়ও দর বাড়ছে।
ঢাকার বাইরেও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। হিলি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলি স্থলবন্দর এলাকায় সপ্তাহ ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। বিক্রেতারা জানান, মৌসুমের শেষের দিকে পেঁয়াজের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে দাম বাড়তির দিকে। বন্দরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে পেঁয়াজের আইপি (আমদানির অনুমতি) বন্ধ রয়েছে। আসন্ন কোরবানি ঈদে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে পড়বে। তাই দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়া দরকার।
এদিকে, রসুনের দর কিছুটা কমতির দিকে। সপ্তাহ দুয়েক আগে আমদানি করা রসুনের কেজি ২০০ থেকে ২২০ এবং দেশি রসুনের কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গতকাল আমদানি করা রসুনের কেজি ১৮০ থেকে ২১০ এবং দেশি রসুনের ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা রসুন কেজিতে ১০ থেকে ২০ এবং দেশি রসুন কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে।
এদিকে ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে বাড়তে থাকে মাংসের দাম। তখন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২১০ থেকে ২৩০ টাকা দরে। একইভাবে সোনালি জাতের মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায়। গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৭৫ এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একইভাবে দর কমেছে গরুর মাংসের। ১৫ থেকে ২০ দিন আগে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায়। দর কমে গতকাল বিক্রি হয়েছে কেজি ৭৫০ টাকা দরে। মুরগির দর কমার বিষয়ে পশ্চিম নাখালপাড়ার মুরগি বিক্রেতা সুজন মিয়া বলেন, খামার পর্যায়ে দর কিছুটা কম। সেজন্য খুচরা বাজারেও কমেছে।
ডিমের দরে তেমন হেরফের নেই। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। মাসখানেক ধরেই এই দামের আশপাশে রয়েছে ডিমের দর। মাছের বাজারেও খুব বেশি পরিবর্তন দেখা যায়নি।
দাম বাড়ানোর আশায় কয়েক দিন ধরে বাজারে পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিলেন আমদানিকারকরা। গত মঙ্গলবার লিটারে ১৪ টাকা দাম বাড়ানোর পর বাজারে বোতলের সরবরাহ বেড়েছে। বিশেষ করে ফ্রেশ ও রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের তেল দেখা গেছে বেশির ভাগ দোকানে।
ঈদের পর সরবরাহ কম থাকায় কিছুটা বেড়েছিল সবজির দাম। তবে গতকাল সবজির বাজার অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। পটোল, উচ্ছে, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙা, চিচিঙ্গা ও শসার কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। গাজর ও টমেটোর কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে। এ ছাড়া বেগুনের কেজি কেনা গেছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। তবে বরবটির কেজি কিনতে ক্রেতাকে ১০০ বা এর চেয়ে বেশি টাকা গুনতে হয়েছে। কাঁচামরিচের দরও বেশ কম। মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। আলুর দর এখনও কম। প্রতি কেজি কেনা যাচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব জ রদর র ম রগ রস ন র ৫০ ট ক ম রগ র আমদ ন গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।
‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।
পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।
দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।
শিল্পে নতুন সংযোগে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।
সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।
জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে
তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।
সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে
পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।
গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা
পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।