কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে শিকল দিয়ে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার সেই গৃহবধূর দিন কাটছে ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে। ঘটনার তিন দিনেও মুখোশ পরা যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, তাঁকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে পাশবিক নির্যাতন শেষে ওই গৃহবধূকে হাত-পা শিকলে বেঁধে বিবস্ত্র অবস্থায় ঘরের মেঝেতে ফেলে যায় জড়িত ব্যক্তিরা। পরে তাঁর বৃদ্ধ শাশুড়ির চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে গৃহবধূকে পড়ে থাকতে দেখতে পান। কেউ একজন তাঁকে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন। তখন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে ভুক্তভোগীর মেঝেতে পড়ে থাকার ছবি তোলেন, আবার কেউ ভিডিও ধারণ করেন। এরই মধ্যে এসব ছবি ও ভিডিও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়েছেন ভুক্তভোগী নারী।

গত বৃস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নাঙ্গলকোট উপজেলার দৌলখাঁড় ইউনিয়নের একটি গ্রামে ওই গৃহবধূর ওপর পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। ওই গৃহবধূর স্বামী ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বাড়িতে ৭০ বছর বয়সী অসুস্থ শাশুড়ি আর দুই বছর বয়সী কন্যাসন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। ২২ বছর বয়সী ওই গৃহবধূকে শিকল দিয়ে হাত-পা বেঁধে পাশবিক নির্যাতনের পর তাঁর মাথার চুলও কেটে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিত ওই গৃহবধূ। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়ে ওই দিন রাতে অভিযোগটি মামলা হিসিবে নথিভুক্ত করে।

আজ রোববার বিকেলে ওই গৃহবধূর স্বামী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই লম্পটরা যখন আমার স্ত্রীকে হাত-পা শিকলে বেঁধে তালা মেরে বিবস্ত্র অবস্থায় ঘরের মেঝেতে ফেলে যায়, তখন আশপাশের লোকজন এসে প্রথমে ঘর থেকে একটি কাপড় তাঁর শরীরে দেয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন এসে অনেকে এ ঘটনার ভিডিও করে ফেলে। পরে এসব ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন ঘটনায় আমি রীতিমতো অবাক হয়েছি। মানুষের মধ্যে কি মনুষ্যত্ব নেই?’

ওই গৃহবধূর স্বামী আরও বলেন, ‘৯৯৯-এর মাধ্যমে ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ এসে আমার স্ত্রীকে হাত-পায়ের শিকল ও তালা খোলে। আমি তখন ঢাকায় আমার কর্মস্থলে ছিলাম। এ ঘটনায় আমার স্ত্রী মানসিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমি লম্পটদের বিচার চাই।’

এ ঘটনায় হওয়া মামলায় দুজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা একজনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান আসামি ওই তরুণের নাম মো.

ইমাম হোসেন (২৪)। তিনি উপজেলার কান্দাল গ্রামের বাসিন্দা। শুক্রবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার কুমিল্লার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলায় জাহিদুল্লাহ (২৫) নামের একজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তবে তাঁর বিস্তারিত ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি। নির্যাতিত গৃহবধূ জানিয়েছেন, ঘটনার সময় ইমাম হোসেনের মুখে জাহিদুল্লাহ নামটি শুনেছেন তিনি। মামলার অজ্ঞাতনামা ওই আসামি ঘটনার সময় মুখোশ পরা ছিলেন। তিনি গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ।

আরও পড়ুনকুমিল্লার নাঙ্গলকোটে শিকল দিয়ে হাত–পা বেঁধে গৃহবধূকে ধর্ষণ–নির্যাতন, মামলা, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার১৯ এপ্রিল ২০২৫

ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে। জীবন্ত লাশের মতো বেঁচে আছি। আমার আর কোনো কিছু চাওয়ার নেই, শুধু ওই লম্পটদের কঠোর শাস্তি চাই। ঘটনার মূল হোতা ইমাম হোসেন গ্রেপ্তার হয়েছে। তবে যেই লম্পট মুখোশ পরা অবস্থায় আমার সর্বনাশ করেছে, সে এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। আমি তার ফাঁসি চাই। ইমাম হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব বেরিয়ে আসবে। দ্রুত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’

গ্রেপ্তার ইমাম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নাঙ্গলকোট থানার উপপরিদর্শক গনেশ চন্দ্র শীল। রোববার বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছি। তবে এখনো রিমান্ড শুনানি হয়নি। আশা করছি ইমাম হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে পুরো তথ্য বেরিয়ে আসবে। আমরা মামলাটি ভালোভাবে তদন্ত করছি।’

নির্যাতিত ওই গৃহবধূর ভাষ্য, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে তিনজন। পাশবিক নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি ওই লম্পটরা লুট করে নিয়েছে ঘরে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ মালামালও। নির্যাতন ও লুট শেষে পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা ঘরে জামাকাপড়ের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া গৃহবধূর মাথার চুলও কেটে দেয়।

নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মামলার প্রধান আসামি এখন কারাগারে আছেন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। শনিবার গৃহবধূর মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে কুমিল্লা মেডিকেলে। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। মামলার অপর দুই আসামিকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ই গ হবধ র ন ঙ গলক ট গ হবধ ক আম র স ঘটন র এ ঘটন ঘটন য় তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষুদ্রঋণ তহবিল গঠনের আহ্বান

দারিদ্র্য বিমোচনে মাইক্রোফাইন্যান্স খাতের কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে আগামী অর্থবছরে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি ক্ষুদ্র ঋণ (ঘূর্ণায়মান) তহবিল গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

ইনাফি বাংলাদেশের উদ্যোগে ’জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬: মাইক্রোফাইন্যান্স খাতের পরামর্শ সভা’য় এই আহ্বান জানানো হয়। ঢাকার মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে সম্প্রতি এই সভা হয়।

পরামর্শ সভায় ২০২৪ সালের অর্থবিলে প্রস্তাবিত জটিল কর বিধানগুলো সরলীকরণেরও আহ্বান জানানো হয়।

আরো পড়ুন:

ঋণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কমিটি 

ঋণের কিস্তি দিতে না পারায় গৃহবধূকে আটকে রাখার অভিযোগ

সভায় দেশের মাইক্রোফাইন্যান্স খাতের নেতৃবৃন্দ আসন্ন জাতীয় বাজেট নিয়ে তাদের প্রত্যাশা তুলে ধরেন। পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)-এর নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান (ইভিসি) অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্, আশার প্রেসিডেন্ট মো. আরিফুল হক চৌধুরী এবং শক্তি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ড. হুমায়রা ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইনাফি বাংলাদেশ ও সোনালী ব্যাংক পিএলসি-এর চেয়ারম্যান এবং সাবেক অর্থ সচিব ও বাংলাদেশের ১২তম কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনাফি বাংলাদেশ-এর ভাইস চেয়ারম্যান এমরানুল হক চৌধুরী। মূল প্রবন্ধে মাইক্রোফাইন্যান্স খাতের প্রধান নীতিগত ও আর্থিক প্রত্যাশাগুলো তুলে ধরে বলা হয়, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও দারিদ্র্য বিমোচনে মাইক্রোফাইন্যান্স খাতের ভূমিকা অপরিসীম। এই খাতের কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল জরুরি। পাশাপাশি করনীতিকে সরলীকরণ করা হলে আমরা আরও বেশি মানুষের কাছে সহজে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

পরামর্শ সভায় মাইক্রোফাইন্যান্স খাতের পক্ষ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি ক্ষুদ্র ঋণ (রিভলভিং) তহবিল গঠনের আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া ২০২৪ সালের অর্থবিলে প্রস্তাবিত জটিল কর বিধানগুলো সরলীকরণের আহ্বান জানানো হয়। দাতাদের সহায়তা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে উল্লেখ করে অনুদান-নির্ভর সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে সরকারি অনুদান বরাদ্দের আহ্বান জানানো হয়। মাইক্রোফাইন্যান্স খাতের নেতৃবৃন্দ অর্থ মন্ত্রণালয় ও মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নিয়মিত প্রাক-বাজেট পরামর্শ সভাগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন যাতে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগেুলোতে মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা ও চাহিদার প্রতিফলন দেখা যায়।

অধ্যাাপক হেলাল উদ্দিন বলেন, “মাইক্রোফাইন্যান্স খাতের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা হলে নীতিনির্ধারক ও উন্নয়ন সহযোগীদের সমর্থন আদায় আরো সহজ হবে।”

তিনি আরো বলেন, “প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থায়নের সুযোগ বাড়াতে হবে। বড় মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলো যদি ব্যাংকের মতো সঞ্চয় সংগ্রহ করতে পারে এবং সেটি ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়নে ব্যবহার করতে পারে, তাহলে এই খাতের অর্থনৈতিক সংকট অনেকটাই দূর হবে।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, “অর্থনৈতিক দিক থেকে আমরা স্থিতিশীলতার দিকে এগুলেও সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা ভুলে গেলে চলবে না। বর্তমানে দেশ নানা সংকটের মুখোমুখি। কোভিডের সময়ের মতো এই প্রেক্ষাপটেও মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে জলবায়ু অভিযোজন ও নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে বেকারত্ব মোকাবিলার মতো বিষয়গুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।

“এ ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক খাতগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাজেটে বরাদ্দ রাখা হলে আমরা এই ভারসাম্য বজায় রাখতে পারব,” বলেন তিনি। 

ইনাফি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ২০০৩ সাল থেকে প্রধানত গবেষণা, সক্ষমতা বৃদ্ধি, কারিগরি সহায়তা, উদ্ভাবনী প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে।

ঢাকা/হাসান/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ