নিক্সন চৌধুরীর স্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ
Published: 20th, April 2025 GMT
সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরীর স্ত্রী তারিন হোসেনের নামে গুলশানে থাকা একটি ফ্ল্যাট, গ্যারেজ ও কমন স্পেস জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দুদকের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
দুদকের পক্ষে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালাম এসব সম্পদ ক্রোক চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়েছে, তারিন হোসেনের নামে মোট ১০ কোটি ৩২ লাখ ৮৬ হাজার ৪৩৮ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।
তদন্তে জানা যায়, গুলশান আবাসিক এলাকায় ১০ কাঠা ৩ ছটাক জমির ওপর নির্মিত দ্য সেরেনিটি নামে দুটি বেজমেন্টসহ ১৩ তলা আবাসিক ভবনের সাত তলার (একটি গ্যারেজ ও কমন স্পেসসহ) ৫ হাজার ১৭২ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট ও অচিহ্নিত ১৭০ অযুতাংশ ভূমি রয়েছে নিক্সন চৌধুরীর। এই সম্পদ ২০১৩ সালের ২৯ জানুয়ারি অ্যালটমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট অনুযায়ী নিক্সন চৌধুরীর প্রথম স্ত্রী মুনতারিন মুজিব চৌধুরীর নামে করা হয়। পরে প্রথম স্ত্রী মারা গেলে দ্বিতীয় স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাটটি নিবন্ধন করা হয়, যা নিক্সন চৌধুরী অবৈধ অর্থ দিয়ে কেনেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের ভর্তি বন্ধ, স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের ভর্তির আবেদন বাতিল ও স্থগিত করছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। দেশটির অভিবাসন নীতি আরও কঠোর করার পর ভিসার অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ফিন্যান্সিয়াল টাইমস’ জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের অন্তত ৯টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘উচ্চ ঝুঁকির’ দেশগুলো থেকে শিক্ষার্থী ভর্তিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন প্রকৃত শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করে, সে জন্য তাদের ওপর চাপ বাড়ছে। যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন ব্যাপকভাবে বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি দেশটির সীমান্ত নিরাপত্তামন্ত্রী ডেম অ্যাঞ্জেলা ইগল সতর্ক করেন, ভিসাব্যবস্থাকে ব্রিটেনে ‘স্থায়ী হওয়ার পেছন দরজা’ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
যেসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভর্তিতে এই পরিবর্তন এনেছে, সেগুলোর মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব চেস্টার আগামী বছরের শরৎকাল (অটাম) পর্যন্ত পাকিস্তান থেকে সব ধরনের শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে। কারণ হিসেবে সম্প্রতি অপ্রত্যাশিতভাবে ভিসা আবেদন নাকচের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছে তারা। ইউনিভার্সিটি অব উলভারহ্যাম্পটন পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে স্নাতকের শিক্ষার্থীদের আবেদন গ্রহণ করছে না। ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট লন্ডন পাকিস্তান থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করছে।
এ ছাড়া লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, সান্ডারল্যান্ড ইউনিভার্সিটি, অক্সফোর্ড ব্রুকস, বিপিপিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে। কোথাও সরাসরি নিষেধাজ্ঞার ভাষা ব্যবহার না করলেও বাস্তবে শিক্ষার্থীরা ভর্তির নিশ্চয়তাপত্র (সিএএস লেটার) পাচ্ছেন না বা আবেদন গ্রহণই বন্ধ রাখা হয়েছে।
সান্ডারল্যান্ড ও কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভর্তির আবেদন গ্রহণ স্থগিত করেছে। হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয় আগামী বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে। লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, তাদের যেসব শিক্ষার্থীর ভিসা আবেদন নাকচ হয়েছে, তার ৬০ শতাংশ এ দেশের।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই পরিবর্তনের কেন্দ্রে রয়েছে গত সেপ্টেম্বরে কার্যকর হওয়া যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন ভিসা কমপ্লায়েন্স নীতি। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভিসা স্পনসর করতে হলে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিবছর ‘বেসিক কমপ্লায়েন্স অ্যাসেসমেন্ট’ (বিসিএ) নামের একটি মূল্যায়নে উত্তীর্ণ হতে হয়। এই মূল্যায়নে তিনটি সূচক দেখা হয়। আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার, যুক্তরাজ্যে এসে কোর্সে উপস্থিত না হওয়া এবং মাঝপথে কোর্স ত্যাগের হার। হোম অফিসের নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ভিসা আবেদনের ৫ শতাংশের বেশি বাতিল হলে তাদের স্পনসর লাইসেন্সের মান অবনমন, ভর্তি স্থগিত কিংবা লাইসেন্স বাতিল পর্যন্ত হতে পারে। আগে এসব ব্যবস্থার জন্য ভিসা আবেদন নাকচের হার ছিল ১০ শতাংশ। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন ছাত্র বাছাইয়ে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সতর্ক।
‘ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের’ প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে শিক্ষার্থী ভিসা আবেদন বাতিলের হার যথাক্রমে ২২ ও ১৮ শতাংশ, যা নতুন সীমার চেয়ে অনেক বেশি। এ সময় হোম অফিস যে ২৩ হাজার ৩৬টি আবেদন নাকচ করেছে, তার অর্ধেকই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাগরিকদের আশ্রয় প্রার্থনার আবেদনও বেড়েছে। এই আবেদনকারীদের অধিকাংশই কোনো একটি কাজ বা শিক্ষার্থী ভিসায় ব্রিটেনে এসেছিলেন।
পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়াশোনায় সহায়তা দেওয়া লাহোরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অ্যাডভান্স অ্যাডভাইজর্সের প্রতিষ্ঠাতা মরিয়ম আব্বাস বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ধাপে গিয়ে আটকে যাওয়া প্রকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য হৃদয়বিদারক।
আর যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল অ্যাডমিশনের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. মুস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাজ্যের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আবেদনের সুযোগ থাকলেও সম্প্রতি ৫–৭টি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আবেদন গ্রহণ করছে না। এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ছাত্র ভিসায় এসে তাদের নির্দিষ্ট কোর্স শেষ না করে আশ্রয় প্রার্থনা করে আবেদন করা এবং ভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভিসা পরিবর্তন করা অথবা ইউরোপে চলে যাওয়া। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের উচিত যুক্তরাজ্যকে ছাত্র ভিসার ট্রানজিট রুট না বানিয়ে সঠিক ব্যবহার করা।