মঞ্চে আসছে জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে নাটক ‘কমলা রঙের বোধ’
Published: 22nd, April 2025 GMT
কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য কবি। তাঁর জীবন ও কর্ম অবলম্বনে নাটক ‘কমলা রঙের বোধ’ নিয়ে আসছে নাট্যদল থিয়েটার ফ্যাক্টরি। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনায় রয়েছেন অলোক বসু। রাজধানীর মহিলা সমিতির মঞ্চে আগামী ৯ মে উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে নাটকটির। একই স্থানে ১০ ও ১১ মে কমলা রঙের বোধ নাটকের আরও চারটি প্রদর্শনী করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্দেশক অলোক বসু।
এর আগে ২৭ এপ্রিল নাটকটির একটি টেকনিক্যাল শো করবে দলটি। নাটকটি প্রয়াত নাট্যজন আলী যাকেরের স্মৃতির উদ্দেশে নিবেদন করবে থিয়েটার ফ্যাক্টরি।
নির্দেশক অলোক বসু বলেন, কবি জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে আমাদের দেশে সেভাবে আলোচনা হয় না। নতুন প্রজন্মের মাঝে তাঁকে ছড়িয়ে দিতেই নাটকটির পরিকল্পনা। আজকের তরুণ প্রজন্ম কবি জীবনানন্দ দাশকে কেমন করে দেখেন, সেই দেখাকে এ নাটকে মেলানো হয়েছে কবি জীবনানন্দ দাশের সময়ের সঙ্গে।’
নাটকের গল্প প্রসঙ্গে নির্দেশক বলেন, ‘নাটকের আখ্যান রচিত হয়েছে কবি জীবনানন্দ দাশের জীবন ও সাহিত্যকর্মকে উপজীব্য করে। ১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর জীবনানন্দ দাশ ট্রাম দুর্ঘটনার শিকার হন। নাটকের গল্প শুরু সেখান থেকেই। ২২ অক্টোবর শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে মারা যান কবি। ৯ দিন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কবি তাঁর চিন্তার জগতে মুখোমুখি হয়েছেন তাঁর জীবন-স্বপ্ন-কল্পনা-দর্শন ও বাস্তবতার। তাঁর সাহিত্যের নোট এর মাধ্যমে আজকের জীবনানন্দ ও কাব্যপ্রেমী কতিপয় তরুণ উন্মোচন করেন জীবনানন্দ দাশকে।’
নির্দেশক আরও বলেন, ‘গত বছরের নভেম্বর থেকে নাটকের মহড়া শুরু করেছি। সম্প্রতি এটি শেষ হয়েছে। কবির ১২৬তম জন্মবার্ষিকীতে এটি মঞ্চে আনার ইচ্ছা ছিল। শিল্পকল্পার কাছে আমরা আবেদনও করেছিলাম শো করার জন্য। আমাদের প্রস্তুতিও ছিল। হল পায়নি বলে নাটকটি মঞ্চায়ন করা সম্ভব হয়নি। আশা করছি, এ নাটকে পুরোপুরি জীবনানন্দকে পাওয়া যাবে।’
নাটকে জীবনানন্দ দাশের চরিত্রে অভিনয় করবেন দিপু মাহমুদ, আরিফ আনোয়ার ও কে এম হাসান। অন্য চরিত্রে আশা আক্তার, বিপাশা সাইদ, মুনমুন খান, সুভাষ সরকার, আকলিমা আক্তার, শান্তনূর ইহসান দিগন্ত, হাসিবুল হক, মৃন্ময় চৌধুরী, নওরীন পাপড়ি, রবিউল ইসলাম রাজিব, শাইরা, সূর্য, প্রীতম প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন টক র র জ বন ন টকট
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।