যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের সুফল পেতে পারে ভারতীয় বেসরকারি বেসামরিক বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া ও আকাশ এয়ার। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের দরুন চীন সরকার সে দেশের উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোকে মার্কিন বিমান না কেনার হুকুম জারি করায় ভারতের কাছে এই সুযোগ চলে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে চীনা সংস্থাগুলোর দেওয়া উড়োজাহাজগুলো এবার ভারতে চলে আসতে পারে। ভারতীয় সংস্থাগুলোকে উড়োজাহাজ পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে না।

মার্কিন সংস্থা বোয়িংকে চীনের বিভিন্ন এয়ারলাইনস প্রায় ১০০টি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স জেট উড়োজাহাজের বরাত দিয়েছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে শুল্কযুদ্ধ শুরু হওয়ায় সেই বরাত বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। এতে ভারতের এয়ার ইন্ডিয়া ও আকাশ এয়ারের লাভ হতে পারে। তারাও ওই একই মডেলের বিমানের বরাত বোয়িংকে দিয়েছে। পাশাপাশি ১১টি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারেরও বরাত দিয়েছে ওই দুই সংস্থা। চীনের সিদ্ধান্তের দরুন ভারতীয় সংস্থাগুলোর বিমান পেতে দীর্ঘ অপেক্ষার প্রয়োজন হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।

যাত্রীসংখ্যা বাড়লেও পর্যাপ্ত উড়োজাহাজের অভাবে এই দুই ভারতীয় সংস্থাকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। মার্কিন সংস্থা বোয়িং ছাড়াও ভারতীয় বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো ফ্রান্সের এয়ারবাসের ওপর নির্ভরশীল।

ওয়াকিবহাল সূত্রের বরাতে সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে আজ মঙ্গলবার বলা হয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়ার মালিক টাটা গোষ্ঠী বোয়িংকে এই বিষয়ে অনুরোধ করতে চলেছে। চীনকে সরবরাহ দিতে যেসব উড়োজাহাজ প্রস্তুত, সেগুলোকে দ্রুত যাতে তাদের দেওয়া যায়, অনুরোধে সে কথাই বলা হবে। এতে ভারতীয় সংস্থাগুলোর মতো বোয়িংয়েরও লাভ হবে। তৈরি উড়োজাহাজ ফেলে না রেখে তারা অন্যত্র সরবরাহ করতে পারবে।

বোয়িং অনুরোধ রাখলে ভারতীয় সংস্থা যেমন লাভবান হবে, তেমনি তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটবে। এভাবে অতীতেও এয়ার ইন্ডিয়ার লাভ হয়েছিল। চীন বরাত না নেওয়ায় ৪১টি ৭৩৭ ম্যাক্স জেট এয়ার ইন্ডিয়ায় চলে এসেছিল।

ট্রাম্প প্রশাসন চীনা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক চাপানোয় চীনও পাল্টা শুল্ক বাড়িয়েছে। মার্কিন পণ্যের ওপর চাপানো হয়েছে ১২৫ শতাংশ শুল্ক। এই মুহূর্তে ১০টি উড়োজাহাজ পুরোপুরি তৈরি অবস্থায় বোয়িংয়ের কাছে পড়ে আছে। আনুষ্ঠানিকভাবে অবশ্য এ বিষয়ে এয়ার ইন্ডিয়া বা আকাশ এয়ার কর্তৃপক্ষ এখনো গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করেনি।

ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী তেলুগু দেশম পার্টির নেতা রাম মোহন নাইডু গতকাল সোমবার হরিয়ানার গুরুগ্রামে এয়ার ইন্ডিয়ার সদর দপ্তর পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি ওই সংস্থার নিরাপত্তা উন্নয়ন কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। বিমান পরিবহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ওপর এয়ার ইন্ডিয়া বিশেষ জোর দিয়েছে।

এ বিষয়ে মন্ত্রী সেখানে বলেন, এয়ার ইন্ডিয়ার পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয় যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে। টাটা গোষ্ঠীর এই সংস্থা বিশ্বের অন্যতম সেরা সংস্থা হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। ভারত সরকার তাদের সব রকমের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

আকাশ এয়ার সংস্থার যাত্রা শুরু হয় ২০২১ সালে। উড়োজাহাজ পেতে দেরি হওয়ায় এই নতুন সংস্থাকে সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। সংস্থাটির কাছে যত উড়োজাহাজ রয়েছে, তার চেয়ে বেশি রয়েছেন পাইলট। ভবিষ্যতের প্রয়োজনের কথা মনে রেখে তাঁদের নিযুক্তি দেওয়া হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়ার মতো তারাও দ্রুত বিমান পেতে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের যুদ্ধংদেহী মনোভাব এই দুই সংস্থার সন্তুষ্টির কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
  • ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
  • গ্যাস সংকট
  • ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  • ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়