কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় হাঁস চুরির অপবাদ দিয়ে এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌর শহরের কালিপুর নয়াহাটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া তরুণের নাম জনি মিয়া (১৯)। তিনি নয়াহাটি গ্রামের জয়নাল মিয়ার ছেলে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জনি পাটের বস্তার দোকানের কর্মচারী ছিলেন। বুধবার রাতে তাঁর প্রতিবেশী হারুন মিয়ার বাড়ি থেকে সাতটি হাঁস চুরি হয়। প্রতিবেশীদের ধারণা, জনি হাঁস চুরির সঙ্গে জড়িত। অন্যদিকে জনির পরিবার বলেছে, চুরির সময় জনি দেখে ফেলেন। ফলে তিনি হাঁসগুলো উদ্ধার করতে সহায়তা করেন। দুপুরের দিকে হাঁস চুরির অভিযোগে এলাকার কয়েকজন জনিকে মারধর করেন। ঘরে ফিরে তিনি বমি করেন। পরে জনিকে জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।

নিহত জনির মা জামিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার চার সন্তান। জনি আমার একমাত্র ছেলে। হারুন মিয়ার ছেলে আল আমিনের নেতৃত্বে আমার ছেলেকে মারধর করা হয়। মুখে ইঁদুর মারার বিষ ঢেলে দেওয়া হয়। শারীরিক নির্যাতনে আমার ছেলের মৃত্যু হয়।’ জনির মাধ্যমে হাঁস ফিরে পাওয়ার বিষয়ে জামিনা বেগমের ভাষ্য, ‘চুরির সময় আমার ছেলে দেখে ফেলে। এ জন্য চোরের নাম বলতে পারে ও হাঁস উদ্ধার হয়।’

আত্মগোপনে থাকায় অভিযোগের বিষয়ে আল আমিনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর মা মরিয়ম বেগম বলেন, ‘এলাকার সবার বিশ্বাস, হাঁস চুরির সঙ্গে জনি জড়িত। পরে তাঁর মাধ্যমে হাঁস উদ্ধারও হয়। এ জন্য জনিকে দুই হাজার টাকা দিতে হয়েছে। জনিকে উদ্ধার করে বাড়িতে দিয়ে আসে আমার স্বামী ও ছেলে আল আমিন। মারধরের সঙ্গে আমার পরিবারের কেউ জড়িত নয়।’ মরিয়ম বেগমের দাবি, জনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারে।

ভৈরব থানার উপপরিদর্শক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কিশোরগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অ্যাপে পরিচয়-প্রেম, বিয়ে করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলেন চীনের যুবক

ভাষা, সংস্কৃতি ও হাজার মাইলের দূরত্বকে হার মানিয়েছে ভালোবাসা। ভালোবাসার টানে এক তরুণীকে বিয়ে করতে বাংলাদেশে এসেছেন চীনের এক যুবক। গত শুক্রবার রাতে চীন থেকে ঢাকায় পৌঁছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এক তরুণীর বাসায় আসেন তিনি। আজ রোববার আদালতের মাধ্যমে তাঁরা বিয়ে সম্পন্ন করবেন।

চীনের যুবকের নাম ওয়াং তাও (৩৬)। চীনের হোয়ানান প্রদেশের ওয়াং ইচাং চাওয়ের ছেলে তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের তাহের মিয়ার মেয়ে সুরমা আক্তারের (২২) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে তাঁর। সুরমা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন এবং ঢাকার লালবাগে থাকেন। আজ রোববার তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন বলে তরুণীর পরিবার জানিয়েছে।

জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছান চীনের যুবক ওয়াং তাও। বিমানবন্দর থেকে চীনের যুবককে আতিথেয়তা দিয়ে নিজ বাড়ি নাসিরনগরের কুন্ডার কোনাপাড়ায় নিয়ে আসেন তরুণী সুরমাসহ তাঁর পরিবারের লোকজন।

স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও তরুণীর পরিবারের দাবি, দেড় থেকে দুই মাস আগে ডেটিং এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে সুরমার পরিচয় হয়। তাঁরা নিয়মিত চ্যাটে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। বিষয়টি চীনের যুবক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণী নিজ নিজ পরিবারকে জানান। উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাঁরা একে অপরকে বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। পরে চীনের যুবক বাংলাদেশ ও চীনের দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসেন। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে দুপুরের পর থেকে চীনের যুবককে দেখার জন্য সুরমার বাড়িতে ভিড় করেন স্থানীয় লোকজন।

সুরমা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ‘ওয়ার্ল্ড টক’ অ্যাপের মাধ্যমে চীনের যুবক ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে চ্যাট করতেন। একপর্যায়ে তাঁরা পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের সিদ্ধান্তে পৌঁছান।

সুরমার মা নুরেনা বলেন, ‘আমার মেয়ের ভালোবাসা পেতে চীন থেকে যুবক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে চলে এসেছে। ওই যুবক কোনো ধর্মই বিশ্বাস করে না। মেয়েকে বিয়ে করতে প্রয়োজনে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে। আগামীকাল (আজ) রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে মুসলিম রীতি মেনে সুরমাকে বিয়ে করবে চীনের যুবক। এতে দুই পরিবারের সম্মতি আছে। আমরা এই বিয়েতে আনন্দিত। মেয়ের খুশিই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

নাসিরনগর থানার কুন্ডা বিট উপপরিদর্শক (এসআই) জাহান-ই-আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে কুন্ডা গ্রামে যাই। পাসপোর্ট দেখে নিশ্চিত হলাম যে যুবক চীনের নাগরিক। ওই তরুণী ঢাকার লালবাগে থাকেন। ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে তাঁদের পরিচয়। একপর্যায়ে তাঁরা প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। চীনের যুবক ইংরেজি বোঝেন না। তাই কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে কথা বলতেন। তরুণী ও তাঁর পরিবার জানিয়েছে, রোববার হলফনামার মাধ্যমে চীনের যুবক মুসলিম হবেন। তারপর তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন।’ তরুণীর বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, চীনের যুবক এক থেকে দেড় মাস থাকবেন। যাওয়ার সময় হয় ওই তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বা পরে নিয়ে যাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ