রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশের পর লুট হওয়া বই ফেরত পেয়েছে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর ‘অভয়ারণ্য’ পাঠাগার কর্তৃপক্ষ। রবিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুপক্ষের সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে পাঠাগারে কোনো নিষিদ্ধ ঘোষিত বই বা নাস্তিক্যবাদ প্রচারের বই রয়েছে, এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরে লুট হওয়া প্রায় চার শতাধিক বই পাঠাগার কর্তৃপক্ষকে ফেরত দেওয়া হয়।

এর আগে, পাঠাগারে ‘নাস্তিকদের’ বই, ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে লুট শিরোনামে সংবাদ প্রচার হয় দেশের শীর্ষ স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে। এরপরই প্রশাসন বই ফেরতের উদ্যোগ নেয়।

ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিন মাহমুদের সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদের হলরুমে এই সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সা‌য়েম ইমরান, ধনবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম শহিদুল্লাহ, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি খায়রুল মুন্সী, উপজেলা জামায়াতের আমির মিজানুর রহমান, অভয়ারণ্য পাঠাগারের সভাপতি সুপ্তি মিত্র, সম্পাদক সঞ্জয় চন্দ্র ঘোষ, ইসলামী খেলাফত মজলিশের নেতা গোলাম রব্বানী এবং স্থানীয় সংবাদকর্মীরা।

উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভার শুরুতে ইউএনও মো.

শাহীন মাহমুদ উভয়পক্ষকে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানান। পরে পাঠাগারের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ কীভাবে বইগুলো পাঠাগার থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল, তার বর্ণনা তুলে ধরেন। পরে যেসব যুবক বই নিয়ে আসার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাদের পক্ষ থেকে ধনবাড়ী উপজেলা খেলাফত যুব মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী রিশাদ বক্তব্য দেন। বৈঠকে পাঠাগারে কোনো নিষিদ্ধ ঘোষিত বই বা নাস্তিক্যবাদ প্রচারের বই রয়েছে, এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরে বইগুলো অভয়ারণ্য পাঠাগারে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

গোলাম রব্বানী রিশাদ বলেন, ‘‘পাঠাগার কর্তৃপক্ষকে আহ্বান করেছি, তারা যেন কোনো ধর্মবিরোধী বা নিষিদ্ধ বই পাঠাগারে না রাখেন।’’

পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র বলেন, ‘‘পাঠাগারে কোনো ধর্মবিরোধী বই ছিল না। সেদিন যে বইগুলো নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সঞ্জীব ভট্টাচার্য, জাফর ইকবাল প্রমুখের বই ছিল।’’

ইউএনও শাহীন মাহমুদ বলেন, ‘‘উভয়পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। দুই পক্ষই বৈঠকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এসেছিলেন। পরে তাদের সঙ্গে নিয়ে বইগুলো পাঠাগারে দিয়ে আসা হয়েছে।’’

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার রাতে ধনবাড়ী উপজেলা খেলাফত যুব মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে একদল যুবক গিয়ে প্রায় চার শতাধিক বই লুট করেন। পরে বইগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেন তারা। সেদিন দাবি করা হয়েছিল, বইগুলো ধর্মবিরোধী।

ঢাকা/কাওছার/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ ল ম রব ব ন বইগ ল উপজ ল ধনব ড়

এছাড়াও পড়ুন:

মতলব দক্ষিণে এক বিদ্যালয়ের ২০ এসএসসি পরীক্ষার্থীর রোল নম্বরে অন্য শিক্ষার্থীদের নাম

চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় একটি বিদ্যালয়ের ২০ পরীক্ষার্থীর রোল নম্বরে অন্য শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে। এ কারণে তাদের ফলাফল আসেনি। নিবন্ধন প্রক্রিয়ার ত্রুটির কারণে এমনটি হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।

ওই বিদ্যালয়ের নাম আলহাজ তোফাজ্জল হোসেন ঢালী উচ্চবিদ্যালয়। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ২০ জুলাই লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে গতকাল রোববার মৌখিক অভিযোগ করে বিদ্যালয়টির আরও ১৯ পরীক্ষার্থী। ফলাফল না পেয়ে এসব পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীরা হলো সামিয়া, নাদিয়া আক্তার, আঁখি, মীম, মাহিয়া আক্তার মাহী, রিফাতুল ইসলাম, আরাফাত রহমান, তানজিনা আক্তার, অন্তরা, ফারিয়া ইসলাম, সাবিকুন্নাহার জুমা, জাকিয়া আক্তার মুন্নী, ইয়াসমিন আক্তার, নুসরাত, আসমা আক্তার, দ্বীপ চক্রবর্তী, মাহমুদা, শিরিনা আক্তার, আহাদ ঢালী ও খাদিজা আক্তার ফাতেমা।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আলহাজ তোফাজ্জল হোসেন ঢালী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সব বিভাগ হতে মোট ৮৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ৬৪ জনের ফলাফল পাওয়া যায়। বাকি ২০ জনের ফলাফল পাওয়া যায়নি। ওই ২০ জনের রোল নম্বরের বিপরীতে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নাম-তথ্য পাওয়া যায়, যারা এবার এসএসসি পরীক্ষাতেই বসেনি। ছাত্রীর রোল নম্বরের বিপরীতে ফলাফল শিটে ছাত্রের নাম এবং ছাত্রের ফলাফল শিটে ছাত্রীর নাম দেখা যায়।

সাবিকুন্নাহার অভিযোগে জানায়, ১০ জুলাই প্রকাশিত ফলাফল শিটে তার রোল নম্বর সার্চ দিলে ফারদিন হোসেন নামের আরেক ছাত্রের নাম আসে, অথচ সে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেয়নি। ছাত্রটি একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ছে। পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল না পেয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ জুমা।

জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মাজহারুল হক বলেন, হাফিজুর রহমান নামের এক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনলাইনে নিবন্ধনের কাজ করেন। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে তাদের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্বও তাঁকে দেওয়া হয়। তাঁর দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ড ও ভুলের কারণে ওই পরীক্ষার্থীরা ফলাফল পাচ্ছে না। নবম শ্রেণিতে তাদের নিবন্ধনই ঠিকমতো হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে ওই পরীক্ষার্থীদের নিবন্ধন কার্ড সংশোধন করে ফলাফল সংশোধনের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

এদিকে বিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষকের দাবি, এসএসসির ফলাফল প্রকাশের পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক হাফিজুর রহমান বিদ্যালয়ে আসছেন না। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ। এই প্রতিবেদকও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পেয়েছেন।

অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে ইউএনও আমজাদ হোসেন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তদন্ত প্রতিবেদন কয়েক দিনের মধ্যে জমা দেওয়া হবে জানিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গাউছুল আজম পাটওয়ারী বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ওই পরীক্ষার্থীদের নিবন্ধনই করা হয়নি। যেসব নিবন্ধন কার্ড ও প্রবেশপত্র পরীক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ভুয়া। ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে আগামীকাল মঙ্গলবার কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের একটি প্রতিনিধিদল ওই বিদ্যালয়ে যাবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেঘনায় নদীতে অবৈধ বালু তোলায় ব্যবহৃত ৭টি খননযন্ত্র ও ১টি বাল্কহেড জব্দ
  • মতলব দক্ষিণে এক বিদ্যালয়ের ২০ এসএসসি পরীক্ষার্থীর রোল নম্বরে অন্য শিক্ষার্থীদের নাম