টাঙ্গাইলের সেই পাঠাগারে ফিরিয়ে দেওয়া হলো নজরুল, রবীন্দ্রনাথদের ৫ শতাধিক বই
Published: 27th, April 2025 GMT
‘ধর্মবিরোধী’ অভিযোগ তুলে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর অভয়ারণ্য পাঠাগার থেকে নিয়ে যাওয়া পাঁচ শতাধিক বই অবশেষে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার সন্ধ্যা সাতটায় পাঠাগার কর্তৃপক্ষ, বইগুলো নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জমা দেওয়া ব্যক্তি ও স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের বৈঠক শুরু হয়। আলোচনা শেষে ইউএনও মো.
উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে ইউএনও মো. শাহীন মাহমুদ উভয় পক্ষকে ভুল–বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানান। পরে পাঠাগারের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ কীভাবে বইগুলো পাঠাগার থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল, তার বর্ণনা তুলে ধরেন। পরে যেসব যুবক বই নিয়ে আসার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের পক্ষ থেকে ধনবাড়ী উপজেলা খেলাফত যুব মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী ওরফে রিশাদ বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে পাঠাগারে যাতে ধর্মবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড না হয় এবং ধর্মবিরোধী ও নিষিদ্ধ কোনো বই যেন না রাখা হয়। সভায় উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে বইগুলো অভয়ারণ্য পাঠাগারে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে ইউএনও উভয় পক্ষকে নিয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে অভয়ারণ্য পাঠাগারে গিয়ে বইগুলো ফিরিয়ে দেন। ইউএনও শাহীন মাহমুদ বলেন, উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। দুই পক্ষই বৈঠকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এসেছিলেন। পরে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে বইগুলো পাঠাগারে দিয়ে আসা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বইগুলো নিয়ে আসার নেতৃত্ব দেওয়া গোলাম রব্বানী রিশাদ বলেন, ‘আমরা পাঠাগার কর্তৃপক্ষকে আহ্বান করেছি, ভবিষ্যতে তারা যেন ধর্মবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড না করেন এবং ধর্মবিরোধী ও নিষিদ্ধ বই পাঠাগারে না রাখেন।’
২০১৫ সালে ধনবাড়ী উপজেলা সদরে অভয়ারণ্য পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা হয়। ‘যৌক্তিক দ্বিমতকে স্বাগত’ স্লোগান সামনে নিয়ে পরিচালিত পাঠাগারটিতে বর্তমান সদস্যসংখ্যা দেড় শতাধিক। গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে ধনবাড়ী উপজেলা খেলাফত যুব মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে একদল যুবক গিয়ে পাঁচ শতাধিক বই নিয়ে যান। তাঁরা বইগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেন। তাঁদের দাবি, বইগুলো ধর্মবিরোধী।
তবে পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র জানিয়েছেন, কোনো ধর্মবিরোধী বই ছিল না। সেদিন যে বইগুলো নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সঞ্জীব ভট্টাচার্য, জাফর ইকবাল প্রমুখের বই ছিল।
আরও পড়ুন‘ধর্মবিরোধী’ অভিযোগ তুলে পাঠাগার থেকে নজরুল, রবীন্দ্রনাথদের বই নিয়ে গেলেন একদল যুবক২৬ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শত ধ ক বইগ ল ধনব ড় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন অভিনেতা সমু চৌধুরী
অভিনেতা সমু চৌধুরী পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার পর পুলিশ তাঁকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এর আগে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মাজারের গাছতলায় গামছাপরিহিত সমু চৌধুরীর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নানা জল্পনা শুরু হয়।
গফরগাঁওয়ের পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম বলেন, অভিনেতা সমু চৌধুরীকে রাত ৩টা ২০ মিনিটের দিকে খালাতো ভাই অপু চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় অভিনয়শিল্পী সংঘের লোকজনও ছিলেন। তিনি বলেন, সমু চৌধুরী এর আগে মাজারটিতে কয়েকবার এলেও কেউ তাঁকে চিনতে পারেননি। এবারও মাজারে একাকী সময় কাটাতে এসেছিলেন তিনি।
এর আগে গত বুধবার রাতে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে করে গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নে অবস্থিত মুখী শাহ্ মিসকিনের মাজারে আসেন সমু চৌধুরী। পরদিন গতকাল দুপুরে মাজারের গাবগাছের নিচে শুয়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। মাজারের পাশের বাসিন্দা আল মামুন হৃদয় ফেসবুকে তাঁর গাছতলায় শুয়ে থাকার ছবি পোস্ট করেন। দ্রুত সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা সমু চৌধুরীকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে দাবি করেন। সমু চৌধুরীকে এমন অবস্থায় দেখতে পেয়ে সেখানে ভিড় করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিকেল গাড়িয়ে সন্ধ্যা হলে পুলিশের অনুরোধেও থানায় যাননি সমু চৌধুরী। সন্ধ্যার পর লোকজন আরও বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় পুলিশের পাশাপাশি মাজার প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়। এ সময় সমু চৌধুরী জানান, তিনি সুস্থ আছেন। সারা রাত মাজারে ধ্যানে ছিলেন।
আরও পড়ুনঅভিনেতা সমু চৌধুরীকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছে পুলিশ, কী হয়েছিল তাঁর২১ ঘণ্টা আগেগতকাল রাত ৯টার দিকে সমু চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন গফরগাঁওয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন। সমু চৌধুরী সুস্থ আছেন কি না, তা জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন সেখানে উপস্থিত হন।
ইউএনও এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এক ঘণ্টার বেশি সময় অভিনেতার সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় এবং তাঁকে সুস্থ পাওয়া যায়। তাঁর বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়, পুরো ঘটনা তাঁর জবানিতে শোনা হয়। অভিনেতা মাজারভক্ত মানুষ। এ মাজারে আগেও এসেছিলেন। তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও গতকাল তাঁর ভাষায় গুরুবার ও গুরুত্বপূর্ণ রাত হওয়ায় তিনি মাজারেই অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবির কারণে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়।’
সমু চৌধুরীর বয়স ৬২ বছর। তিনি ১৯৯০ সালে একটি নাটকের মাধ্যমে অভিনয়জীবনে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া উদীচীর সঙ্গে ছিলেন ১২ বছর। ব্যক্তিজীবনে তিনি অবিবাহিত। তাঁর বাড়ি যশোর। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শুধু মা জীবিত আছেন। সমু চৌধুরী যশোরে থাকেন বলেও জানান ইউএনও।
আরও পড়ুনমাজার থেকে সরতে চাইছেন না সমু চৌধুরী১৮ ঘণ্টা আগে