রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না। ১৩ এপ্রিল রাকসুর চূড়ান্ত বিধিমালা ও নির্বাচনী আচরণবিধি এবং গতকাল সোমবার রাকসুর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও তা করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ১৫ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলেও এখনো কোনো সভা হয়নি। এমন অবস্থায় রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী জুনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব প্রথম আলোকে বলেন, রোডম্যাপ অনুযায়ী রাকসুর চূড়ান্ত বিধিমালা ও নির্বাচনী আচরণবিধি এবং খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। তবে শিগগিরই দুটি বিষয় একসঙ্গে প্রকাশ করা হবে। রোডম্যাপের পরবর্তী ধাপগুলোর কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় এক দশক পর ১৯৬২ সালে রাকসু প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর মোট ১৪টি নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। জুলাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন রাকসু নির্বাচনের দাবি জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

রোডম্যাপ অনুযায়ী, গত ২৮ মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অনলাইনে রাকসু বিধিমালার খসড়া সংশোধনী সম্পর্কে পরামর্শ ও মতামত দিয়েছেন। ১৩ এপ্রিল রাকসুর চূড়ান্ত বিধিমালা ও নির্বাচনের আচরণবিধি প্রকাশ করার কথা ছিল। তবে তা এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। ১৫ এপ্রিল রাকসুর গঠনতন্ত্র অনুমোদন এবং রাকসু ও বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য সাত সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট। তবে কমিশন এখন পর্যন্ত সভা করতে পারেনি। এ ছাড়া গতকাল খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও তা হয়নি।

রোডম্যাপে উল্লেখ করা হয়, ৩০ এপ্রিল ভোটার তালিকা নিয়ে আপত্তি গ্রহণ ও ১৩ মে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া ১৫ মে মনোনয়নপত্র বিতরণ ও ১৯ মে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ২০ মে মনোনয়নপত্র বাছাই, ২২ মে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ এবং ২৫ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এরপর ২৭ মে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। আর জুন মাসের তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহে রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় আগামী জুনে রাকসুর নির্বাচন হবে কি না, সেটা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি মাসুদ কিবরিয়া বলেন, ‘প্রশাসন বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভঙ্গ করছে। হঠাৎ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচন নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে। অথচ রাকসু যে শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি, সেই বিষয়ে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে রাকসুকে মুলার মতো ঝুলিয়ে রেখে প্রশাসন ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সুবিধা হাসিল করে নিচ্ছে।

রাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ করতে না পারার পেছনে প্রশাসনের দুর্বলতা ও সদিচ্ছার অভাব দেখছেন শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ তাহের। রাকসুকে সামনে রেখে ভেতরে ভেতরে প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল মিঠু।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, রাকসু নিয়ে প্রশাসনের সদিচ্ছা শুরুর দিকে ভালোই ছিল। তবে রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ না হওয়ার পেছনে প্রশাসনের কয়েকজন ব্যক্তির হাত আছে। তাঁরা এই মুহূর্তে রাকসু নির্বাচন চাচ্ছেন না। এভাবে চলতে থাকলে জুনে নির্বাচন হওয়া সম্ভব না।

আরও পড়ুনরাকসুর চূড়ান্ত বিধিমালা হয়নি, জুনে নির্বাচন নিয়ে সংশয়২০ এপ্রিল ২০২৫

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সদস্য মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এখন পর্যন্ত কোনো সভা ডাকেননি। তাই তাঁরা শুরু করতে পারছেন না। রাকসুর চূড়ান্ত বিধিমালা অনুযায়ী, রোডম্যাপ ঘোষণার এখতিয়ার উপাচার্যের নেই। এটা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। আগে যে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে, সেটা বর্তমান বিধিমালার পরিপন্থী। নির্বাচন কীভাবে অর্থবহ করা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আগের রোডম্যাপ অনুযায়ী চললে খুব ভালো কিছু আশা করতে পারছেন না। বর্তমান যে বিধিমালা পাস হয়েছে, সেই আলোকে প্রশাসন সদিচ্ছা রাখলে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব।

সভা না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে। কয়েক দিন আগে চিঠি এসেছে বলে শুনেছেন। তিনি ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় খুলে দেখতে পারেননি। চূড়ান্ত বিধিমালা অনুযায়ী যা করলে ভালো হবে, সেই সিদ্ধান্তই নেবেন। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন ঘোষিত রোডম্যাপটি পর্যালোচনা করা হবে। রোডম্যাপের তারিখগুলো কিছুটা আগে-পরে হতে পারে।

আরও পড়ুনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র অনুমোদন, নির্বাচন কমিশন গঠন১৬ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাতিল করে দেওয়ার পরও আগামী নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রীদের জন্য বাড়তি দামে বিলাসবহুল গাড়ি কিনতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতি আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে এ ধরনের কেনাকাটায় অতি আগ্রহের কারণ অনুসন্ধানও জরুরি বলে মনে করছে সংস্থাটি।

টিআইবি বলছে, সমালোচনার মুখে প্রথম দফায় গাড়ি কেনার প্রস্তাব নাকচ হওয়ার পর আবারও আগের চেয়ে তুলনামূলক বেশি দামে গাড়ি কেনার অভিনব প্রস্তাব উত্থাপন বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলের মতোই একশ্রেণির আমলাদের পরবর্তী সরকারের সম্ভাব্য মন্ত্রীদের প্রতি অতি উৎসাহী তোষামোদি আচরণের ন্যক্কারজনক পুনরাবৃত্তি।

আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলে সংস্থাটি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এক শ্রেণির অতি উৎসাহী স্বার্থান্বেষী তোষণপ্রবণ আমলাদের প্রস্তাব অনুযায়ী গাড়ি কেনার এ সিদ্ধান্ত অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য। যা সুবিধাবাদী আমলাদের প্রভাববলয় প্রতিষ্ঠার যে চর্চাকে পতিত সরকারের আমলে স্বাভাবিকতায় পরিণত করা হয়েছিল, তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার বিব্রতকর ও আত্মঘাতী উদাহরণ।’ এ ধরনের সিদ্ধান্তকে অবিবেচনাপ্রসূত উল্লেখ করে ভবিষ্যৎ মন্ত্রীদের গাড়ি কেনার প্রস্তাব বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আইন অনুযায়ী একজন মন্ত্রী সরকারিভাবে সার্বক্ষণিক একটি গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে থাকেন। বিগত সময়ে মন্ত্রীরা এবং বর্তমানে উপদেষ্টারা গাড়ি ব্যবহার করছেন। হঠাৎ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আইনবহির্ভূতভাবে ভবিষ্যতের মন্ত্রীদের জন্য বিলাসবহুল টয়োটা ব্র্যান্ডের ল্যান্ড ক্রুজার কেনার জন্য উদ্‌গ্রীব কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। সরকারের এ জাতীয় আগ্রহের পেছনের কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি।

অন্তর্বর্তী সরকার গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত অনুমোদন দিলেও তা পরবর্তী সরকারের মন্ত্রীদের কাছে গ্রহণযোগ্য না–ও হতে পারে উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকারের ব্যয় সংকোচনের নিজস্ব সিদ্ধান্তের পরিপন্থী এ ক্রয়ের মাধ্যমে এমন স্ববিরোধী পথে সরকার কেন যাচ্ছে? এটি কি জবাবদিহিমূলক সরকার ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্র সংস্কারে অঙ্গীকারবদ্ধ সরকারের স্ববিরোধী আচরণ বলে বিবেচিত হবে না? এর দায়ভার সরকারের পক্ষ থেকে কে বা কারা নেবেন?’

আরও পড়ুনসংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ গাড়ি কেনা হচ্ছে০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতিআগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
  • ছাত্রশিবিরের ভরসা ওএমআর মেশিনে, ছাত্রদল চায় হাতে ভোট গণনা
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • গকসু নির্বাচন: জিএস প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ
  • ডাকসুর ব্যালট পেপারে ২ ভোট নিয়ে যা বলছে নির্বাচন কমিশন
  • দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • গাজায় পাগলের মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েল
  • মনোনয়নপত্র নিতে এসে স্লোগান, আচরণবিধি ভাঙলেন এক শিক্ষার্থী
  • ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩
  • রাকসুর নির্বাচনি প্রচার শুরু, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা