গাজীপুরে হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলা
Published: 4th, May 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনি আহত হয়েছেন। রোববার সন্ধ্যায় গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। হামলার পর একদল দুর্বৃত্ত তার গাড়ির পেছনে দৌড়াতে থাকে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব সমকালকে বলেন, ঢাকার দিকে আসার সময় গাজীপুরে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় পেছন থেকে ১০-১২টা মোটরসাইকেল এসে হাসনাতের ওপর হামলা করে। এতে তিনি আহত হন। এখন হাসনাত ঢাকায় ফিরছেন।
সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এনসিপির আরেক নেতা আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘গাজীপুরের চান্দনায় হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলা হয়েছে। আশপাশে যারা আছেন দ্রুত এগিয়ে আসেন, প্লিজ।’
একই তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘হাসনাতের গাড়িতে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী গাজীপুর এলাকায় হামলা করেছে। গাড়ির গ্লাস ভেঙে গিয়েছে, হাত রক্তাক্ত হয়েছে। আশেপাশে যারা আছেন হাসনাতকে প্রটেক্ট করুন।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বডিক্যাম কী, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় কতটা কাজে দেবে
আগামী ফেব্রুয়ারিতে হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশের জন্য কমপক্ষে ৪০ হাজার বডিওয়্যার ক্যামেরা (বডিক্যাম) সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। পুলিশ সদস্যদের শরীরে এই ক্যামেরা থাকবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল সোমবার কেরানীগঞ্জে সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিটি নির্বাচনী কেন্দ্রে ভোট কীভাবে হচ্ছে, সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে কি না—সেটি দেখার জন্য থাকবে বডিক্যাম। পুলিশের কাছে এখন ১০ হাজারের মতো বডিক্যাম আছে। এমনকি কারারক্ষীদের কাছেও আছে। বিজিবির (বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড) কাছে আছে। আরও ৪০ হাজার বডিক্যাম সংগ্রহের চিন্তা আছে। দেখে নেওয়া যাক এই বডিক্যাম কী, কীভাবে কাজ করে, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় কতটা কার্যকর হবে।
বডিক্যাম কীবডিক্যামকে ‘বডি ক্যামেরা’ বা ‘বডি-ওর্ন ক্যামেরা’ নামেও ডাকা হয়। অন্যান্য ক্যামেরার মতো এতে লেন্স, স্টোরেজ (ইন্টারনাল মেমোরি বা মাইক্রোএসডি), ব্যাটারি ও রেকর্ডিং কন্ট্রোল থাকে। তবে এই ক্যামেরার বিশেষত্ব, এটি একজন মানুষের শরীরে সংযুক্ত থাকে। আকারে ছোট। এই ক্যামেরা রাখার উদ্দেশ্য হলো—সামনের দৃশ্যের ভিডিও করা।
প্রতিটি নির্বাচনী কেন্দ্রে ভোট কীভাবে হচ্ছে, সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে কি না—সেটি দেখার জন্য থাকবে বডিক্যাম। পুলিশের কাছে এখন ১০ হাজারের মতো বডিক্যাম আছে। আরও ৪০ হাজার বডিক্যাম সংগ্রহের চিন্তা আছে।-মেজর জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।বডিক্যাম আলাদাভাবে চালানোর প্রয়োজন হয় না। সচল থাকলে তা লেন্সের আওতায় আসা সব দৃশ্য ভিডিও করে রাখে। ব্যবহারকারীর গতিবিধি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরার গতিবিধিও বদলে যায়। অনেক ক্ষেত্রে বডিক্যাম অডিও রেকর্ড করে রাখে।
বাংলাদেশে কী বডিক্যাম নতুন, কেন ব্যবহার
বডিক্যাম ব্যবহার বাংলাদেশ পুলিশের জন্য নতুন নয়। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ প্রথমবারের মতো বডিক্যাম ব্যবহার শুরু করে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি তখন চালু করা হয়।
চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল মহানগর এবং মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকেও বডিক্যাম দেওয়া হয়। বগুড়া ও কক্সবাজারের ট্রাফিক পুলিশেও পরীক্ষামূলকভাবে এ ক্যামেরার ব্যবহার চালু রয়েছে।
দেশে ভোট কেন্দ্র আছে ৪৫ হাজার। ৪০ হাজার বডিক্যাম কেনা হলে, প্রতি কেন্দ্রে একজন পুলিশ সদস্যকে এ ক্যামেরা দেওয়া সম্ভব হবে। কাজেই এই ক্যামেরার মাধ্যমে খুব বেশি প্রভাব তৈরি করা যাবে বলে মনে হয় না।-আব্দুল আলীম, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য।কেউ ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করছে, এমন ঘটনার ভিডিও করে ট্রাফিক পুলিশ বিভিন্ন যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। আইন লঙ্ঘনের সময়কার ভিডিও থাকায় আইন লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি অভিযোগ অস্বীকার করতে পারেন না। আবার অনেক সময় আইন লঙ্ঘন করার পরও অনেক মানুষ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। বডিক্যাম ব্যবহার করলে আইন লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি পুলিশের ওপর চড়াও হতে পারেন না।
পুলিশ কর্মকর্তারা যাতে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়তে না পারেন, সেটা ঠেকানোও ছিল বডিক্যাম দেওয়ার উদ্দেশ্য। যদিও অভিযোগ আছে, ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা অনেক সময় এ ক্যামেরা বন্ধ রাখেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বডিক্যামের ব্যবহার বাস্তবে তেমন একটা নেই।
দেশে দেশে ব্যবহারবিশ্বের অনেক দেশে অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে বডিক্যাম ব্যবহার করা হয়। যেমন, যুক্তরাজ্যের পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে এ ক্যামেরা ব্যবহার করছে। যুক্তরাজ্য মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়েবসাইটে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, উচ্চগতির যানবাহন থামানো ও তল্লাশি, কোনো সম্পত্তি কিংবা ব্যক্তিকে তল্লাশি ও গ্রেপ্তার, তদন্ত কাজসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের সময় এ ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়।
বডিক্যাম ব্যবহার বাংলাদেশ পুলিশের জন্য নতুন নয়। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ প্রথমবারের মতো বডিক্যাম ব্যবহার শুরু করে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি তখন চালু করা হয়। এরপর চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও বরিশাল মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকেও বডিক্যাম দেওয়া হয়। বগুড়া জেলা পুলিশ ও কক্সবাজার জেলা পুলিশেও পরীক্ষামূলকভাবে এ ক্যামেরার ব্যবহার চালু রয়েছে।ইউরোপ, এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বডিক্যাম ব্যবহার করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পুলিশও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এ ক্যামেরা ব্যবহার করছে।
ভারতের দিল্লি পুলিশও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এ ক্যামেরা ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে। গত ১১ মে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ বাহিনীর আধুনিকায়ন, স্বচ্ছতা বাড়ানো এবং নাগরিকদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলতে বডিক্যাম ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শুরুতে দিল্লি পুলিশ ১ হাজার ৫০০ বডিক্যাম সংগ্রহ করবে। ধাপে ধাপে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দিল্লিতে এর আগে ২০১৬, ২০১৯ ও ২০২২ সালে বডিক্যাম ব্যবহারের পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে তা সফল হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের একজন পুলিশ সদস্য বডিক্যাম দেখাচ্ছেন