১. মৌখিক পদ্ধতি
ক. পরিচয়ের সময় নামটি উচ্চারণ করুন
নাম মনে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো যাঁর সঙ্গে পরিচিত হবেন, তাঁর নামটি সশব্দে উচ্চারণ করা। তাঁর সামনেই দু–তিনবার নামটি বলুন। এতে নামটি আপনার স্মৃতিতে গেঁথে যাবে। যখন নতুন কারও সঙ্গে হাত মেলাবেন, তখনো তাঁর নামটি উচ্চারণ করুন। এরপর যদি আরও কথা হয়, তখন তাঁর নামটি হঠাৎ আবার বলুন। আর যদি বেশি সময় কথা বলার সুযোগ না থাকে, তাহলে বিদায়ের সময় বলুন। একটা উদাহরণ দিই। ধরুন, আপনার অফিসে একজন নতুন কর্মী এসেছেন। তাঁর নাম রফিক। তাহলে পরিচয়ের সময় বলুন, ‘অফিসে স্বাগত, রফিক ভাই!’ এরপর আবার কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করুন, ‘রফিক ভাই, এই সেক্টরে আপনার কাজ করার আগ্রহ হলো কীভাবে?’ আবার বিদায়ের সময় বলুন, ‘ভালো থাকবেন, রফিক ভাই। দেখা হবে।’ এভাবে পরিচয়পর্বের সময় দু-তিনবার তাঁর নাম ব্যবহার করলে, ভবিষ্যতে আর ভুলে যাবেন না।
খ.
নামের বানান জেনে নিন
কারও নাম মনে রাখা কঠিন মনে হলে তাঁর নামের বানানটা জেনে নিন। অনেক সময় কিছু নাম অচেনা বা নতুন লাগে। যেমন প্রসূন সরকার। এমন নাম শুনলে যদি আপনি বলেন, ‘আপনার নামের বানানটা কী?’ বানান বললে এই নামটা আপনার মাথায় থেকে যাবে।
আবার অনেক নামের একাধিক বানান থাকতে পারে। যেমন ‘জুনায়েদ’ নামের বানান কেউ লেখেন ‘জুনায়েদ’, কেউ ‘জুনাইদ’, আবার কেউ লেখন ‘জোনায়েদ’। সঠিক বানানটা জেনে নিলে বানানের সঙ্গে সঙ্গে নামটাও ভুলবেন না।
গ. ভুলে গেলে আবার জিজ্ঞেস করুন
কথা বলতে বলতে শুরুর দিকেই যদি নামটা ভুলে যান, তাহলে দ্বিধা না করে আবার জিজ্ঞেস করুন। বিনয়ীভাবে বলতে পারেন, ‘দুঃখিত, আপনার নামটা ঠিক শুনতে পাইনি।’ এতে ওই ব্যক্তি আবার নামটা বলবেন। আর যদি কথা বলার মাঝামাঝি বা শেষ দিকে নামটা ভুলে যান, তাহলে বলতে পারেন, ‘ওহ্! নামটাই তো ভুলে গেলাম।’ তখন আরেকটু বিনয়ের সঙ্গে বলুন, ‘আপনার সঙ্গে কথা বলে খুব ভালো লাগল। কিন্তু দুঃখিত, আপনার নামটা ঠিক মনে রাখতে পারছি না। আরেকবার বলবেন?’ এভাবে বললে কেউ মন খারাপ করেন না, বরং আপনার আন্তরিকতা বুঝতে পারবেন। হ্যাঁ, একটু লজ্জা লাগতেই পারে। কিন্তু এই কষ্টটুকু যদি তখনই না করেন, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বিব্রতকর পরিস্থিতি পড়তে পারেন। সম্পর্কের শুরুর দিকেই নামটা নিশ্চিত করে নেওয়া সবচেয়ে ভালো।
আরও পড়ুনযে পাঁচ উপায়ে স্মৃতিশক্তি বাড়াবেন২২ সেপ্টেম্বর ২০২২২. মানসিক কৌশলক. নামের সঙ্গে কিছু মিল খুঁজে বের করুন
নাম মনে রাখার আরেকটা মজার কৌশল হলো নামের সঙ্গে কিছু একটা যোগসূত্র বানিয়ে নেওয়া। যেমন কারও নাম যদি হয় হুমায়ুন শেখ, তাহলে মনে মনে লেখক হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে মেলাতে পারেন। আবার মোগল সম্রাট হুমায়ুনের সঙ্গে মিল রেখেও মনে রাখতে পারেন। এতে সহজে নাম মনে থাকবে। তবে সব সময় এমন মিল না–ও পেতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে পড়লে সেই ব্যক্তির সঙ্গে একটা ছবি কল্পনা করুন। যেমন জিসান নামের একজনের সঙ্গে পরিচিত হলেন, যিনি জেমসের ভক্ত। তাহলে মনের মধ্যে জিসানের একটা ছবি কল্পনা করুন, যিনি একটা গিটার হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। এই ছবি মাথায় থাকলে ওই ব্যক্তির সঙ্গে আবার দেখা হলেই মনে পড়বে ‘আরে, গিটার? ও তো জিসান!’
খ. মনে মনে নামটা একাধিকবার বলুন
কেউ যখন নিজের নাম বলছেন, তখন সঙ্গে সঙ্গে সেটা কয়েকবার মনে মনে বলুন। একবার, দুবার, তিনবার নামটা নিজের মনে উচ্চারণ করলে ওটা মস্তিষ্কে গেঁথে যাবে। তাঁর কথায় অবশ্যই মনোযোগ দেবেন, তবে একই সঙ্গে খেয়াল রাখবেন, প্রথম সাক্ষাতেই যেন নামটা ভুলে না যান। শুধু নামটা না, বরং সঙ্গে আরও কিছু একসঙ্গে বলুন। যেমন অপূর্বা নামে কেউ যদি আপনার সঙ্গে প্রযুক্তি নিয়ে কথা বলে, তাহলে মনে মনে বলুন, ‘অপূর্বা তাঁর নতুন মোবাইলের কথা বলেছিল।’ চাইলে নামটা নিয়ে একটু খেলতেও পারেন। নামটা ভেঙে ভেঙে উচ্চারণ করুন। যেমন অ-অ-অ-পূ-পূ-র-র-বা-বা-বা। অথবা অপূর্ব + আ = অপূর্বা। এসব খেলা একদম অর্থহীন হলেও কাজে দেয়। মাথার ভেতর এসব শব্দ ঘুরতে থাকলে নামটা আর ভুলে যাওয়ার সুযোগই থাকে না।
গ. চেনা কারও সঙ্গে মিল খুঁজে নিন
যাঁর সঙ্গে নতুন পরিচয় হলো, তাঁর কিছু বৈশিষ্ট্য নিশ্চয়ই আপনার চেনা কারও সঙ্গে মিলে যাবে। কার সঙ্গে মেলে, তা খুঁজে বের করুন। অথবা আপনার কোনো বন্ধু, আত্মীয় বা সিনেমার পছন্দের কোনো চরিত্রের সঙ্গেও মিলে যেতে পারে নাম। সেই মিলটা খুঁজে পেলে নতুন পরিচিত ব্যক্তির নাম সহজেই মনে রাখতে পারবেন। চাইলে আপনি এই মিলে যাওয়ার কথাটা তাঁকে বলেও দিতে পারেন। কথার ফাঁকে হঠাৎ বললেন, ‘আরে, আমার চাচাতো ভাইও দেখতে ঠিক আপনার মতো বা আমার মামার চুলগুলোও আপনার মতো কোঁকড়া। এতেও নতুন পরিচিত ব্যক্তির নাম আপনার মনে থাকবে।
ঘ. ইচ্ছা করলেই নামটা মনে রাখা যায়
আমরা অনেক সময় অন্যের নাম ভুলে যাই। কারণ, তাঁর নামটা বলার সময় আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনি না। অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকি বা মনের মধ্যে অন্য চিন্তা থাকে। কিন্তু যদি শুরুতেই মনে মনে ঠিক করে নিই যে এই মানুষটার নাম মনে রাখবই, তাহলে কিন্তু মনে থাকে। পরিচিতিপর্বে সম্পূর্ণ মনোযোগ তাঁর দিকে দিন। এতেই দেখবেন, নাম মনে থাকবে।
আরও পড়ুনস্মৃতিশক্তি বাড়াবে যেসব অভ্যাস১৬ নভেম্বর ২০২৪৩. দৃশ্যগত কৌশলক. নাম লিখে রাখুন
নাম মনে রাখার আরেকটা দারুণ উপায় হলো নামটা লিখে রাখা। কারও সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পরপরই সময় পেলে তাঁর নামটা নোট করে রাখুন। সঙ্গে কোথায় দেখা হলো, কী কথা হলো, কী কাজে তিনি যুক্ত—এসব ছোটখাটো তথ্যও লিখে রাখতে পারেন। এতে শুধু নাম নয়, বরং পুরো আলাপটাই মনে পড়ে যাবে। অবশ্য বড় কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে অনেকের সঙ্গে পরিচয় হলে সঙ্গে সঙ্গে তা লিখে রাখা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে মুঠোফোনে নামটা লিখে রাখতে পারেন। চাইলে একটা ভার্চ্যুয়াল তালিকাও বানাতে পারেন। সেখানে একটা ডকুমেন্ট বা টেবিলে নতুন পরিচিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। ডিভাইসে সেই তালিকা রেখে দিলে প্রয়োজনের সময় তা দেখে নিতে পারবেন।
খ. নাম থেকে ছবি বানান
কারও নামের সঙ্গে মিল রেখে মনের মধ্যে একটা ছবি বানিয়ে নিতে পারেন। যেমন কারও নাম সাগর হলে সমুদ্রের ছবি কল্পনা করতে পারেন। আবার কারও নাম পিংকি হলে গোলাপি রঙের কথা কল্পনা করুন। আদতে নামটা কোনো জিনিস বা ছবির সঙ্গে মিলিয়ে নিলেই তা সহজে মনে রাখা যায়।
গ. আলাদা বৈশিষ্ট্য খুঁজে নিন
নাম মনে রাখতে হলে মানুষটার মুখের দিকে ভালোভাবে তাকান। খেয়াল করে দেখুন, তাঁর মধ্যে কী এমন আছে, যা অন্যদের থেকে আলাদা। যেমন কারও গালে টোল পড়তে পারে, টানা ভ্রু থাকতে পারে, কান দুটি বড় বড় হতে পারে। এসব বৈশিষ্ট্য খেয়াল রাখুন।
ঘ. মজার দৃশ্য কল্পনা করুন
মানুষকে মনে রাখার আরেকটা মজার ও কার্যকর উপায় হলো তাঁকে নিয়ে আজগুবি কোনো দৃশ্য কল্পনা করা। ধরুন, একজন বিড়াল পছন্দ করেন। তাহলে ভাবতে পারেন, তাঁর আশপাশে অনেক বিড়াল ঘুরঘুর করছে। সেসবের কোনোটার রং সাদা, কোনোটা কালো, আবার কোনোটা ধূসর। লোকটা বিড়ালের সঙ্গে কথা বলছেন, আদর করছেন। মাঝেমধ্যে বকাও দিচ্ছেন। এভাবে কিছু দৃশ্য কল্পনা করেও মানুষটাকে মনে রাখতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনার কল্পনার দৃশ্য যত অদ্ভুত ও উদ্ভট হবে, তাঁর নামটাও তত বেশি মনে থাকবে।
শেষ কথাএসব নিয়ম যে আপনাকে ঠিকভাবে মুখস্থ করে পালন করতে হবে, ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয়। এখান থেকে কয়েকটি মনে থাকলে এবং প্রয়োগ করলে দেখবেন, মানুষের নাম আপনি আর ভুলছেন না। তাই চেষ্টা করুন, এখান থেকে বেশি বেশি পদ্ধতি মনে রাখতে। ধীরে ধীরে এসব আপনার অভ্যাস হয়ে যাবে। তখন আর নাম মনে রাখতে কোনো ঝামেলা হবে না।
সূত্র: উইকিহাউ
আরও পড়ুনস্মৃতিশক্তি বাড়াতে ‘২-৭-৩০ পদ্ধতি’ প্রয়োগ করেছেন কখনো০১ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আপন র ম য় র সময় পর চ ত ন ম মন
এছাড়াও পড়ুন:
‘সুলতানার স্বপ্ন’ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে দৃশ্যশিল্প প্রদর্শনী
নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের উপন্যাস ‘সুলতানার স্বপ্ন’ নিয়ে বিশেষ দৃশ্যশিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এ সময়ের ১৯ জন শিল্পী নিজেদের মতো করে সেই স্বপ্নময় ভাবনাকে নতুন করে ব্যাখ্যা করেছেন। ‘সুলতানার স্বপ্ন’–এর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর ‘বিশ্বস্মৃতি’ বা ‘ওয়ার্ল্ড মেমোরি’র স্বীকৃতি উদ্যাপন করতে এ আয়োজন করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও কলাকেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আজ শনিবার বিকেলে ‘পুনর্কল্পনায় সুলতানার স্বপ্ন’ শীর্ষক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। এ উদ্যোগে সহযোগিতা করেছে লাইব্রেরি উইদাউট বর্ডারস এবং অ্যালিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইউনেসকো বাংলাদেশের হেড অব অফিস সুজান ভাইজ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কলাকেন্দ্রের শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান জানান, শিল্পীদের সঙ্গে আলাপের পর তাদের সামনে উন্মুক্তভাবে বিষয়গুলো রাখা হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল ‘সুলতানার স্বপ্ন’কে আজকের সময়ের চোখে দেখা। তিনি বলেন, ‘শিল্পীদের নিজেদের ভাবনার জায়গা ছিল পুরোপুরি উন্মুক্ত। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে ধন্যবাদ এই অসাধারণ জায়গাটির জন্য।’
প্রদর্শনীর কিউরেটর শার্মিলী রহমান বলেন, ‘শিল্পীদের প্রথমে “সুলতানার স্বপ্ন” বইটি পড়তে দেওয়া হয়েছিল, এরপর তাঁরা নিজেদের ভাবনা ও ব্যাখ্যাকে কাজে প্রকাশ করেছেন, এবং এই শিল্পীরা এই কাজে তাঁদের শতভাগ দিয়েছেন।’
প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ইউনেসকো বাংলাদেশের হেড অব অফিস সুজান ভাইজ। ঢাকা, ৬ ডিসেম্বর