কাপ্তাই হ্রদে রুই জাতীয় মাছ কমছে
Published: 22nd, November 2025 GMT
ষাটের দশকে কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর ১৯৬৫-৬৬ সালে রাঙামাটিতে কার্যক্রম শুরু হয় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটি অঞ্চলের। এ সময় সংস্থাটির রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কাপ্তাই হ্রদ থেকে বিএফডিসি ঘাটে অবতরণকৃত মাছের ৮১ শতাংশ ছিল রুই জাতীয় মাছ। কিন্তু কয়েক দশক পর ক্রমান্বয়ে কমেছে রুইজাতীয় মাছের অবতরণ, বিপরীতে বেড়েছে কাচকি-চাপিলার মতো ছোট মাছের পরিমাণ। বর্তমানে বিএফডিসি ঘাটে প্রতি বছর যে পরিমাণ মাছ অবতরণ করছে, তার প্রায় ৯০-৯২ শতাংশ ছোট মাছ, বাকিটা রুই জাতীয় মাছের। এই পরিসংখ্যানে পরিষ্কার, কাপ্তাই হ্রদে কতটা কমেছে রুই জাতীয় মাছ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, হ্রদে পলি জমাট ও মাছের প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র নষ্ট হওয়ায় এর উৎপাদন কমে গেছে।
বিএফডিসি ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, কাপ্তাই হ্রদে ৮৬ প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব রয়েছে। এর মধ্যে দেশি ৭০ প্রজাতি, সাত প্রজাতি বিদেশি ও আট প্রজাতি চিংড়ি ও এক প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে। এরই মধ্যে বিলুপ্তির পথে রয়েছে দেশি মহাশোল, কৈ, মধু পাবদা, পোয়া, ফাইস্যা, তেলে গুলশা ও সাদা ঘনিয়া। এ ছাড়া ক্রমহ্রাসমান মাছের মধ্যে রয়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল, বাঁচা, পাতি পাবদা ও বড় চিতল। এগুলোর উৎপাদন ৮১ থেকে ৫ শতাংশে চলে এসেছে। তবে এর বিপরীতে হ্রদে ছোট মাছের মধ্যে কাঁচকি, চাপিলা, কাঁটা মইল্যা, বাটা, ফলি ও মলা মাছের সংখ্যা বেড়ে ৯২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
সেন্টমার্টিনে ধরা পড়ল ৩৫ কেজির পোয়া, দাম হাঁকছে ১২ লাখ
বগুড়ার হাটে-বাজারে নবান্নের মাছের মেলা
আরো জানা যায়, ১৯৬৫-৬৬ সালে রুই, কাতল, মৃগেল, কালিবাউস ও মহাশোলসহ সামগ্রিকভাবে মেজর কার্প ছিল মোট মৎস্য অবতরণের প্রায় ৮১.
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কম বৃষ্টিপাত, হ্রদের সঙ্গে সংযুক্ত নদীগুলোর নাব্যতা হ্রাস, কাপ্তাই হ্রদে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট ঘোলাত্ব ও পলি ভরাটের কারণে পানির গভীরতা কমে যাওয়া এবং রুই জাতীয় মাছের প্রধান চারটি প্রজননস্থল (কাচালং চ্যানেল, মাইনিমুখ; বরকল চ্যানেল, জগন্নাথছড়ি; চেঙ্গী চ্যানেল, নানিয়ারচর; রাইংক্ষ্যং চ্যানেল, বিলাইছড়ি) ভরাট হয়ে স্রোত কমে যাওয়ায় কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, প্রজনন মৌসুমে পোনা মাছ ও মা মাছ নিধন, শুষ্ক মৌসুমে অধিক মাছ আহরণের ফলে কার্প জাতীয় মাছের পরিবেশ ও খাবার এবং ডিম ধ্বংস ইত্যাদি কারণে রুই জাতীয় মাছের উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
তবে বিএফডিসি কাপ্তাই হ্রদে একেবারে রুই জাতীয় মাছের উৎপাদন কমে গেছে, সেটা মানতে নারাজ। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ আলম বলেন, ‘‘বিএফডিসি’র রিপোর্ট দেখলে মনে হতে পারে হ্রদে একেবারে রুই জাতীয় মাছ নেই। কাপ্তাই হ্রদের মাছ ঢাকায় গিয়ে বিক্রি করতে গেলে চাষের মাছের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারে না, কারণ ক্রেতারা মনে করে এটাও চাষের মাছ, তাই দাম না পাওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা এখান থেকে ঢাকায় রুই জাতীয় মাছ নিয়ে যেতে চান না। বড় মাছগুলো জেলেরা এখানে ধরার পর স্থানীয় বাজারেই বিক্রি করে ফেলে। স্থানীয়ভাবে ছোট মাছের চেয়ে বড় মাছের চাহিদা বেশি। আবার প্রতিবছর বিশাল সংখ্যক পর্যটক রাঙামাটি ভ্রমণের কারণে তাদেরও পছন্দের শীর্ষে থাকে হ্রদের বড় মাছ।’’ তবে পলি ভরাট, প্রজননস্থল ধ্বংসসহ নানান কারণে রুই জাতীয় মাছের উৎপাদন কমছে বলে তিনিও স্বীকার করেন।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) রাঙামাটি নদী-উপকেন্দ্রের প্রধান ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক হায়দার বলেন, ‘‘প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস, অধিক মাছ আহরণ, পলি ভরাট, নদী ঘোলাত্বের কারণে রুই জাতীয় মাছের উৎপাদন কমেছে। রুই মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য তিনি বিদ্যমান অভয়াশ্রমগুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণ, জাঁক ব্যবহার বন্ধ, হ্রদে ড্রেজিংসহ মে থেকে চার মাস কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ বন্ধের সুপারিশ করেন তিনি।’’
ঢাকা/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এফড স মৎস য
এছাড়াও পড়ুন:
কাপ্তাই হ্রদে রুই জাতীয় মাছ কমছে
ষাটের দশকে কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর ১৯৬৫-৬৬ সালে রাঙামাটিতে কার্যক্রম শুরু হয় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটি অঞ্চলের। এ সময় সংস্থাটির রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কাপ্তাই হ্রদ থেকে বিএফডিসি ঘাটে অবতরণকৃত মাছের ৮১ শতাংশ ছিল রুই জাতীয় মাছ। কিন্তু কয়েক দশক পর ক্রমান্বয়ে কমেছে রুইজাতীয় মাছের অবতরণ, বিপরীতে বেড়েছে কাচকি-চাপিলার মতো ছোট মাছের পরিমাণ। বর্তমানে বিএফডিসি ঘাটে প্রতি বছর যে পরিমাণ মাছ অবতরণ করছে, তার প্রায় ৯০-৯২ শতাংশ ছোট মাছ, বাকিটা রুই জাতীয় মাছের। এই পরিসংখ্যানে পরিষ্কার, কাপ্তাই হ্রদে কতটা কমেছে রুই জাতীয় মাছ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, হ্রদে পলি জমাট ও মাছের প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র নষ্ট হওয়ায় এর উৎপাদন কমে গেছে।
বিএফডিসি ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, কাপ্তাই হ্রদে ৮৬ প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব রয়েছে। এর মধ্যে দেশি ৭০ প্রজাতি, সাত প্রজাতি বিদেশি ও আট প্রজাতি চিংড়ি ও এক প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে। এরই মধ্যে বিলুপ্তির পথে রয়েছে দেশি মহাশোল, কৈ, মধু পাবদা, পোয়া, ফাইস্যা, তেলে গুলশা ও সাদা ঘনিয়া। এ ছাড়া ক্রমহ্রাসমান মাছের মধ্যে রয়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল, বাঁচা, পাতি পাবদা ও বড় চিতল। এগুলোর উৎপাদন ৮১ থেকে ৫ শতাংশে চলে এসেছে। তবে এর বিপরীতে হ্রদে ছোট মাছের মধ্যে কাঁচকি, চাপিলা, কাঁটা মইল্যা, বাটা, ফলি ও মলা মাছের সংখ্যা বেড়ে ৯২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
আরো পড়ুন:
সেন্টমার্টিনে ধরা পড়ল ৩৫ কেজির পোয়া, দাম হাঁকছে ১২ লাখ
বগুড়ার হাটে-বাজারে নবান্নের মাছের মেলা
আরো জানা যায়, ১৯৬৫-৬৬ সালে রুই, কাতল, মৃগেল, কালিবাউস ও মহাশোলসহ সামগ্রিকভাবে মেজর কার্প ছিল মোট মৎস্য অবতরণের প্রায় ৮১.৩৫ শতাংশ; যা ক্রমশ হ্রাস পেয়ে বর্তমানে ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ছোট মাছ, বিশেষ করে চাপিলা, কাচকি, মলা ইত্যাদির পরিমাণ ১৯৬৫-৬৬ সালের রেকর্ডকৃত তিন শতাংশ থেকে বিগত ছয় দশকে বেড়ে বর্তমানে প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি হয়েছে। ২০২৪-২৫ মৌসুমে হ্রদে বিএফডিসি ঘাটে মাছের অবতরণ হয়েছে প্রায় নয় হাজার মেট্রিক টন মাছ, যার মধ্যে প্রায় সাড়ে সাত হাজার টন অবতরণ হয়েছে কাচকি ও চাপিলা।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কম বৃষ্টিপাত, হ্রদের সঙ্গে সংযুক্ত নদীগুলোর নাব্যতা হ্রাস, কাপ্তাই হ্রদে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট ঘোলাত্ব ও পলি ভরাটের কারণে পানির গভীরতা কমে যাওয়া এবং রুই জাতীয় মাছের প্রধান চারটি প্রজননস্থল (কাচালং চ্যানেল, মাইনিমুখ; বরকল চ্যানেল, জগন্নাথছড়ি; চেঙ্গী চ্যানেল, নানিয়ারচর; রাইংক্ষ্যং চ্যানেল, বিলাইছড়ি) ভরাট হয়ে স্রোত কমে যাওয়ায় কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, প্রজনন মৌসুমে পোনা মাছ ও মা মাছ নিধন, শুষ্ক মৌসুমে অধিক মাছ আহরণের ফলে কার্প জাতীয় মাছের পরিবেশ ও খাবার এবং ডিম ধ্বংস ইত্যাদি কারণে রুই জাতীয় মাছের উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
তবে বিএফডিসি কাপ্তাই হ্রদে একেবারে রুই জাতীয় মাছের উৎপাদন কমে গেছে, সেটা মানতে নারাজ। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ আলম বলেন, ‘‘বিএফডিসি’র রিপোর্ট দেখলে মনে হতে পারে হ্রদে একেবারে রুই জাতীয় মাছ নেই। কাপ্তাই হ্রদের মাছ ঢাকায় গিয়ে বিক্রি করতে গেলে চাষের মাছের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারে না, কারণ ক্রেতারা মনে করে এটাও চাষের মাছ, তাই দাম না পাওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা এখান থেকে ঢাকায় রুই জাতীয় মাছ নিয়ে যেতে চান না। বড় মাছগুলো জেলেরা এখানে ধরার পর স্থানীয় বাজারেই বিক্রি করে ফেলে। স্থানীয়ভাবে ছোট মাছের চেয়ে বড় মাছের চাহিদা বেশি। আবার প্রতিবছর বিশাল সংখ্যক পর্যটক রাঙামাটি ভ্রমণের কারণে তাদেরও পছন্দের শীর্ষে থাকে হ্রদের বড় মাছ।’’ তবে পলি ভরাট, প্রজননস্থল ধ্বংসসহ নানান কারণে রুই জাতীয় মাছের উৎপাদন কমছে বলে তিনিও স্বীকার করেন।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) রাঙামাটি নদী-উপকেন্দ্রের প্রধান ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক হায়দার বলেন, ‘‘প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস, অধিক মাছ আহরণ, পলি ভরাট, নদী ঘোলাত্বের কারণে রুই জাতীয় মাছের উৎপাদন কমেছে। রুই মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য তিনি বিদ্যমান অভয়াশ্রমগুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণ, জাঁক ব্যবহার বন্ধ, হ্রদে ড্রেজিংসহ মে থেকে চার মাস কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ বন্ধের সুপারিশ করেন তিনি।’’
ঢাকা/বকুল