চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে মঙ্গলবার (০৬ মে) দিবাগত রাতে মুখোমুখি হচ্ছে ইন্টার মিলান ও বার্সেলোনা। এই ম্যাচটা শুরুর আগে বারবার স্মৃতি থেকে উঁকি দিচ্ছে ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ মৌসুম। এই দুই মৌসুমের সাথে বার্সা ও ইন্টারের বেশ কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।

২০০৮ সালের জুলাইয়ে জোসে মোরিনহোর আগ্রহকে উপেক্ষা করে ইয়োহাইন ক্রুইফ অখ্যাত পেপ গার্দিওলাকে বার্সার কোচ হিসেবে নিয়োগ দেন। সেই মৌসুমেই বার্সা ট্রেবল জেতে। চলমান মৌসুমে বোর্ডের সবার বিপক্ষে গিয়েই একক সিধান্তে সভাপতি হুয়ান লাপোর্তে জার্মান কোচ হান্সি ফ্লিককে নিয়োগ দেন এবং প্রথম মৌসুমেই কাতালান ক্লাবটির সামনে ট্রেবল জয়ের হাতছানি।

২০০৮-০৯ মৌসুম শেষেই রিয়ালের ম্যানেজার হুয়ান্দো রামোস চাকরিচ্যুত হন। মজার ব্যাপার হচ্ছে চলমান মৌসুমে শেষে লস ব্ল্যাঙ্কসদের ৩টি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো ম্যানেজার কার্লো আনচেলত্তি সরে যাচ্ছেন।

আরো পড়ুন:

স্টেগেনের ফেরার ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও জিতল ‘কামব্যাক কিং’ বার্সা

ইন্টারের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বার্সার জন্য সুখবর

অন্যদিকে ২০০৯-১০ মৌসুমে এই বার্সাকে হারিয়েই ইন্টার তাদের ইতিহাসের দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতেছিল। নেরাজ্জুরিদের তখন কোচ ছিলেন মোরিনহো। সেমিফাইনালের প্রথম লেগে সান সিরোতে এই পর্তুগিজ ম্যানেজারের রক্ষণের দেয়াল চিড় ধরাতে পারেননি মেসি, ইব্রাহিমোভিচ, থিয়েরে অঁরি ও পেদ্রোরা। সেই ম্যাচে ৩-১ গোলে হারতে হয়েছিল গার্দিওলার দলকে।

মঙ্গলবার আবারও সেই সান সিরোতেই বার্সার বিপক্ষে নামার আগে খানিকটা এগিয়েই আছে ইন্টার মিলান। আগের লেগে কাতালান জায়ান্টদের ঘরের মাঠ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে গিয়ে ৩-৩ গোলে ড্র করে এসেছে নেরাজ্জুরিরা। ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ ১৫টা ম্যাচে হারেনি সিমিওনে ইনজাগির ইন্টার।

মূল লড়াইটা হবে কৌশলের আর স্নায়ুর। ইন্টারের রক্ষণকে যেখানে লড়তে হবে বার্সার পরাক্রমশালী আক্রমণভাগের বিপক্ষে। তবে সব বাদ দিয়ে অলআউট আক্রমণে যাওয়াও বিপদে ফেলতে পারে বার্সাকে। প্রতিআক্রমণে ইন্টার বিধ্বংসী। আজ তাই ফ্লিককে আক্রমণ ও রক্ষণের মধ্যে সমন্বয় রাখতে হবে। কারণ, ইন্টার যদি আগে গোল করে, তাহলে স্বাগতিকদের রক্ষণপ্রাচীর ভেঙে সেই গোল শোধ করা কঠিনই হবে বার্সার জন্য।

চলতি মৌসুমে ইন্টারের রক্ষণশক্তি বোঝা যাবে একটি পরিসংখ্যানে। চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সার ২০ গোল হজম করার বিপরীতে ইন্টার হজম করেছে মাত্র ৮ গোল। তবে ঘরের মাঠে ইন্টার খেয়েছে ৬ ম্যাচে মাত্র ৩ গোল। রক্ষণের সঙ্গে বাড়েতি পাওয়া প্রায় ৮০ হাজার দর্শকের গর্জন।

প্রথম লেগে বার্সা আক্রমণ সাজিয়েছে ইয়ামালকে কেন্দ্র করে। দ্বিতীয় লেগেও এই উইঙ্গারের ওপরই চোখ থাকবে সবচেয়ে বেশি। মাঠের এক প্রান্ত অনেকটা একাই দখল করে রাখবেন ১৭ বছর বয়সী এই কিশোর। আগের ম্যাচে ডাবল মার্কার লাগিয়েও আটকানো যায়নি ইয়ামালকে। দুজনের বেশি মার্কার রাখারও অবশ্য সুযোগ নেই ইন্টার কোচ সিমোনে ইনজাগির। কারণ, সেই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য আছেন রাফিনিয়া–ফেরমিন লোপেজসহ অন্যরা।

দারুণ ছন্দে থাকা রাফিনিয়া কখনো কখনো ইয়ামালের চেয়েও বিপজ্জনক। বিশেষ করে রুদ্ধশ্বাস মুহূর্তগুলোতে। বার্সার জন্য সুখবর হচ্ছে এ ম্যাচে বদলি হিসেবে মাঠে নামতে পারেন চোট কাটিয়ে ফেরা রবার্ট লেভানডফস্কিও। এই পোলিশ স্ট্রাইকারের ফেরা বার্সার গোল করার সম্ভাবনা নিশ্চিতভাবে বাড়িয়ে দেবে। পাশাপাশি তার উপস্থিতি ইয়ামাল কিংবা রাফিনিয়ার ওপর থেকে গোল করার চাপও অনেক কমিয়ে দেবে। নিজেদের খেলাটা আরও বেশি স্বাধীনতা নিয়ে খেলতে পারবেন এ দুজন। চলতি মৌসুমে এই তিনজন মিলে ১৫০ ম্যাচে করেছেন ৮৬ গোল।

আক্রমণের পাশাপাশি মাঝমাঠেও বার্সা বেশ শক্তিশালী। বিশেষ করে মাঝমাঠে পেদ্রি এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা। রক্ষণ থেকে খেলা তৈরিতে রীতিমতো অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন এই স্প্যানিশ তরুণ। তবে ফ্লিকের মূল দুশ্চিন্তার নাম রক্ষণ। বিশেষ করে চোটের কারণে জুলস কুন্দের ছিটকে যাওয়া বার্সাকে বেশ ভোগাতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ছন্দে ছিলেন এই রাইটব্যাক। ইয়ামালের সঙ্গে তার বোঝাপড়াও চমৎকার।

অন্যদিকে ইন্টারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে তাদের দুই সেন্টার ব্যাক ফ্রান্সিসকো অ্যকার্বি ও ইয়ান বিসসেকের মধ্যমাঠের খেলোয়াড়দের সঙ্গে পজিশন বদল করা। তাছাড়া দুই ফুলব্যাক ডিমার্কো ও ডামফ্রিস যেভাবে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে ঢুকে যান সেটা একটা মাথাব্যথার কারণ হবে ফ্লিকের।

তবে আগের লেগে চোটে পড়া স্ট্রাইকার লাউতারো মার্তিনেজের এই ম্যাচে প্রথম একাদশে না খেলার সম্ভাবনা বেশি। খেললেও চোট কাটিয়ে কতটুকু দিতে পারবেন সেটাই চিন্তার বিষয় ইনজাগির জন্য।

ঢাকা/নাভিদ/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল চ য ম প য়নস ল গ ইন ট র ম ল ন চ য ম প য়নস ল গ ইন ট র র র জন য প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে বিএনপি নেতা–কর্মীদের মানববন্ধন, স্মারকলিপি

কুমিল্লা-১০ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) সংসদীয় আসনকে ভেঙে ত্রিখণ্ডিত করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রকাশ করা খসড়া তালিকা বাতিল এবং বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।

‘কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা পুনরুদ্ধার বাস্তবায়ন কমিটি’–এর ব্যানারে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীর অনুসারী বিএনপির নেতা–কর্মীরা এ কর্মসূচি পালন করেন। এতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপি, কুমিল্লা মহানগর দক্ষিণের ৯ ওয়ার্ড ও লালমাই উপজেলা বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের কয়েক শ নেতা–কর্মী অংশগ্রহণ করেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতার হোসাইন, সদস্যসচিব ওমর ফারুক চৌধুরী, লালমাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাসুদ করিম, সদস্যসচিব ইউসুফ আলী মীরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এ সময় ‘নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত, মানি না, মানব না’, ‘আসন পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত, বাতিল করো, করতে হবে’, ‘সাবেক কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা, ফিরিয়ে দাও, দিতে হবে’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী বিএনপি নেতা–কর্মীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বৃহত্তর কুমিল্লা সদর দক্ষিণ এলাকা নিয়ে সাবেক কুমিল্লা-৯ আসনটি ফিরিয়ে দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের এই খসড়া বাতিল করতে হবে। যদি আসন ফিরিয়ে দেওয়া না হয়, তাহলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ বন্ধ করে দেওয়া হবে।

সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতার হোসাইন বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা ও পৌরসভা (বর্তমানে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলা এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশন দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ড) নিয়ে বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসনের সীমানা ছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হক চৌধুরী এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে মনিরুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসনটি বিলুপ্ত করে কুমিল্লা-৬, কুমিল্লা-৮ ও কুমিল্লা-১০ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। চার থেকে পাঁচ দফা পরিবর্তনের পর বর্তমানে কুমিল্লা-১০ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) আসনে রয়েছে বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসনটি। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছেন, আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু সেই দাবি মেনে নেওয়া হয়নি।

আখতার হোসাইন বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যেখানে কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহাল করার কথা, সেখানে সেটি না করে কুমিল্লা-১০ সংসদীয় আসনকে ভেঙেচুরে ত্রিখণ্ডিত করে খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ২০০৮ সালের মতো এবারও ষড়যন্ত্র করে মনিরুল হক চৌধুরীকে আটকানোর জন্য ইসি এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

লালমাই উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব ইউসুফ আলী মীর বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগপর্যন্ত কুমিল্লায় ১২টি আসন ছিল, ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় একটি আসন কমিয়ে কুমিল্লায় হযবরল অবস্থার সৃষ্টি করেছে ইসি। সেই থেকেই তাঁরা কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছেন। ইসির ঘোষিত খসড়া তালিকা বাতিল করতে হবে। সেটি না করা হলে নেতা–কর্মীরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবেন।

কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লা-১০ আসনের নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত খসড়া বাতিল এবং বিলুপ্ত হওয়া কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে একটি স্মারকলিপি পেয়েছেন। এটি ইসি সচিবের কাছে পাঠানো হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুমিল্লা-৯ আসন পুনর্বহালের দাবিতে বিএনপি নেতা–কর্মীদের মানববন্ধন, স্মারকলিপি
  • ২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণ: আসামিরা খালাস পেলেও মামলার নথি গায়েবের রহস্য কাটেনি
  • বৃত্তি পরীক্ষা আর্থিক প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে