ইন্টার-বার্সা সেমিফাইনালে ফিরে আসছে ২০১০ সালের স্মৃতি
Published: 6th, May 2025 GMT
চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে মঙ্গলবার (০৬ মে) দিবাগত রাতে মুখোমুখি হচ্ছে ইন্টার মিলান ও বার্সেলোনা। এই ম্যাচটা শুরুর আগে বারবার স্মৃতি থেকে উঁকি দিচ্ছে ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ মৌসুম। এই দুই মৌসুমের সাথে বার্সা ও ইন্টারের বেশ কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।  
২০০৮ সালের জুলাইয়ে জোসে মোরিনহোর আগ্রহকে উপেক্ষা করে ইয়োহাইন ক্রুইফ অখ্যাত পেপ গার্দিওলাকে বার্সার কোচ হিসেবে নিয়োগ দেন। সেই মৌসুমেই বার্সা ট্রেবল জেতে। চলমান মৌসুমে বোর্ডের সবার বিপক্ষে গিয়েই একক সিধান্তে সভাপতি হুয়ান লাপোর্তে জার্মান কোচ হান্সি ফ্লিককে নিয়োগ দেন এবং প্রথম মৌসুমেই কাতালান ক্লাবটির সামনে ট্রেবল জয়ের হাতছানি।
২০০৮-০৯ মৌসুম শেষেই রিয়ালের ম্যানেজার হুয়ান্দো রামোস চাকরিচ্যুত হন। মজার ব্যাপার হচ্ছে চলমান মৌসুমে শেষে লস ব্ল্যাঙ্কসদের ৩টি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো ম্যানেজার কার্লো আনচেলত্তি সরে যাচ্ছেন।
আরো পড়ুন:
স্টেগেনের ফেরার ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও জিতল ‘কামব্যাক কিং’ বার্সা
ইন্টারের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বার্সার জন্য সুখবর
অন্যদিকে ২০০৯-১০ মৌসুমে এই বার্সাকে হারিয়েই ইন্টার তাদের ইতিহাসের দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতেছিল। নেরাজ্জুরিদের তখন কোচ ছিলেন মোরিনহো। সেমিফাইনালের প্রথম লেগে সান সিরোতে এই পর্তুগিজ ম্যানেজারের রক্ষণের দেয়াল চিড় ধরাতে পারেননি মেসি, ইব্রাহিমোভিচ, থিয়েরে অঁরি ও পেদ্রোরা। সেই ম্যাচে ৩-১ গোলে হারতে হয়েছিল গার্দিওলার দলকে।
মঙ্গলবার আবারও সেই সান সিরোতেই বার্সার বিপক্ষে নামার আগে খানিকটা এগিয়েই আছে ইন্টার মিলান। আগের লেগে কাতালান জায়ান্টদের ঘরের মাঠ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে গিয়ে ৩-৩ গোলে ড্র করে এসেছে নেরাজ্জুরিরা। ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ ১৫টা ম্যাচে হারেনি সিমিওনে ইনজাগির ইন্টার।
মূল লড়াইটা হবে কৌশলের আর স্নায়ুর। ইন্টারের রক্ষণকে যেখানে লড়তে হবে বার্সার পরাক্রমশালী আক্রমণভাগের বিপক্ষে। তবে সব বাদ দিয়ে অলআউট আক্রমণে যাওয়াও বিপদে ফেলতে পারে বার্সাকে। প্রতিআক্রমণে ইন্টার বিধ্বংসী। আজ তাই ফ্লিককে আক্রমণ ও রক্ষণের মধ্যে সমন্বয় রাখতে হবে। কারণ, ইন্টার যদি আগে গোল করে, তাহলে স্বাগতিকদের রক্ষণপ্রাচীর ভেঙে সেই গোল শোধ করা কঠিনই হবে বার্সার জন্য।
চলতি মৌসুমে ইন্টারের রক্ষণশক্তি বোঝা যাবে একটি পরিসংখ্যানে। চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সার ২০ গোল হজম করার বিপরীতে ইন্টার হজম করেছে মাত্র ৮ গোল। তবে ঘরের মাঠে ইন্টার খেয়েছে ৬ ম্যাচে মাত্র ৩ গোল। রক্ষণের সঙ্গে বাড়েতি পাওয়া প্রায় ৮০ হাজার দর্শকের গর্জন।
প্রথম লেগে বার্সা আক্রমণ সাজিয়েছে ইয়ামালকে কেন্দ্র করে। দ্বিতীয় লেগেও এই উইঙ্গারের ওপরই চোখ থাকবে সবচেয়ে বেশি। মাঠের এক প্রান্ত অনেকটা একাই দখল করে রাখবেন ১৭ বছর বয়সী এই কিশোর। আগের ম্যাচে ডাবল মার্কার লাগিয়েও আটকানো যায়নি ইয়ামালকে। দুজনের বেশি মার্কার রাখারও অবশ্য সুযোগ নেই ইন্টার কোচ সিমোনে ইনজাগির। কারণ, সেই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য আছেন রাফিনিয়া–ফেরমিন লোপেজসহ অন্যরা।
দারুণ ছন্দে থাকা রাফিনিয়া কখনো কখনো ইয়ামালের চেয়েও বিপজ্জনক। বিশেষ করে রুদ্ধশ্বাস মুহূর্তগুলোতে। বার্সার জন্য সুখবর হচ্ছে এ ম্যাচে বদলি হিসেবে মাঠে নামতে পারেন চোট কাটিয়ে ফেরা রবার্ট লেভানডফস্কিও। এই পোলিশ স্ট্রাইকারের ফেরা বার্সার গোল করার সম্ভাবনা নিশ্চিতভাবে বাড়িয়ে দেবে। পাশাপাশি তার উপস্থিতি ইয়ামাল কিংবা রাফিনিয়ার ওপর থেকে গোল করার চাপও অনেক কমিয়ে দেবে। নিজেদের খেলাটা আরও বেশি স্বাধীনতা নিয়ে খেলতে পারবেন এ দুজন। চলতি মৌসুমে এই তিনজন মিলে ১৫০ ম্যাচে করেছেন ৮৬ গোল।
আক্রমণের পাশাপাশি মাঝমাঠেও বার্সা বেশ শক্তিশালী। বিশেষ করে মাঝমাঠে পেদ্রি এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা। রক্ষণ থেকে খেলা তৈরিতে রীতিমতো অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন এই স্প্যানিশ তরুণ। তবে ফ্লিকের মূল দুশ্চিন্তার নাম রক্ষণ। বিশেষ করে চোটের কারণে জুলস কুন্দের ছিটকে যাওয়া বার্সাকে বেশ ভোগাতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ছন্দে ছিলেন এই রাইটব্যাক। ইয়ামালের সঙ্গে তার বোঝাপড়াও চমৎকার।
অন্যদিকে ইন্টারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে তাদের দুই সেন্টার ব্যাক ফ্রান্সিসকো অ্যকার্বি ও ইয়ান বিসসেকের মধ্যমাঠের খেলোয়াড়দের সঙ্গে পজিশন বদল করা। তাছাড়া দুই ফুলব্যাক ডিমার্কো ও ডামফ্রিস যেভাবে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে ঢুকে যান সেটা একটা মাথাব্যথার কারণ হবে ফ্লিকের।
তবে আগের লেগে চোটে পড়া স্ট্রাইকার লাউতারো মার্তিনেজের এই ম্যাচে প্রথম একাদশে না খেলার সম্ভাবনা বেশি। খেললেও চোট কাটিয়ে কতটুকু দিতে পারবেন সেটাই চিন্তার বিষয় ইনজাগির জন্য।
ঢাকা/নাভিদ/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল চ য ম প য়নস ল গ ইন ট র ম ল ন চ য ম প য়নস ল গ ইন ট র র র জন য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে: হাইকোর্ট
শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ দিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নেওয়া সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি রেজাউল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রায় দেন।
একই সঙ্গে ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালার আলোকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে পরীক্ষার আয়োজন করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি পরীক্ষা আগামী ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
আইনজীবীদের তথ্যমতে, শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গত ১৭ জুলাই এক স্মারকে জানায়। এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কেরানীগঞ্জ পাবলিক ল্যাবরেটরি স্কুলের পরিচালক মো. ফারুক হোসেন, শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধিসহ ৪২ জন চলতি বছর রিটটি করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে ওই স্মারকের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য স্থগিত করেন। শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতিসংক্রান্ত ১৭ জুলাইয়ের ওই স্মারক (ম্যামো) কেন আইনগত কর্তৃত্ব–বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালার আলোকে বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নিয়াজ মোর্শেদ। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দ ইজাজ কবির।
পরে আইনজীবী নিয়াজ মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ দিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গত ১৭ জুলাইয়ে স্মারক অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালা অনুসারে সব বেসরকারি অর্থাৎ বেসরকারি নিম্নমাধ্যমিক, রেজিস্ট্রার্ড কিন্ডারগার্টেন, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রেজিস্টার্ড/অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত/স্থাপনা ও প্রাথমিক অনুমতিপ্রাপ্ত চালু বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এ জন্য ১৫ দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের ফলে শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই নয়, এসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।
প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ১৯৮১ সালে প্রবর্তন করা হয় বলে জানান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৫ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এটি চলে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নতুন নীতিমালার আলোকে পিএসসি পরীক্ষা হয়। এতে যারা ভালো করত, তাদের বৃত্তি দেওয়া হতো। তবে করোনার সময় ২০২০ ও ২০২১ সালে তা বন্ধ ছিল। ২০২২ সালে আবার বৃত্তি পরীক্ষা শুরু হয়, তবে তা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার নীতিমালার (সংশোধিত–২০১৬) আলোকে। বিভিন্ন কারণে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে এটি বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২৫ সালে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। বেসরকারি শিক্ষার্থীরাও প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে—এমন নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তারা যাতে পরীক্ষা দিতে পারে সে জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।