আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে ‘জুলাই ঐক্য’র আত্মপ্রকাশ
Published: 6th, May 2025 GMT
জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে জুলাই স্পিরিট ধারণকারী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে ‘জুলাই ঐক্য’ নামে নতুন মঞ্চ গঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ মে) বিকেল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনটি আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করে।
এ মঞ্চে ঐক্যবদ্ধ সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ, ইনকিলাব মঞ্চ, এন্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশন, অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ, একতার বাংলাদেশ, রক্তিম জুলাই, স্টুডেন্ট রাইটস ওয়াচসহ মোট ৩৫টি সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
আরো পড়ুন:
১ বছর পর খুলে দেওয়া হলো ঢাবির সুইমিং পুল
ঢাবির সাবেক ২ উপাচার্যসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ঢাবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। বিগত সাড়ে ১৫ বছরের নিপীড়ন, দুর্নীতি, লুটপাট ও গণতন্ত্র হরণের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ জনতার অভূতপূর্ব এক জাগরণে সংপঠিত হয় ছাত্র জনতার জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ছাত্র-জনতা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। এই গণঅভ্যুত্থানে জীবন দিতে হয়েছে ২ হাজারের বেশী মানুষকে। সেই সঙ্গে আহত ও পঙ্গু হন প্রায় ৩১ হাজার মানুষ।”
তিনি আরো বলেন, “জুলাই বিপ্লবের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা দেখছি, গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়া এখনো অনিশ্চিত। সব থেকে বড় উদ্বেগের বিষয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও বেসরকারি মহলের কিছু অংশ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পায়তারা চালাচ্ছে। যা শহীদ, আহত ও পঙ্গু জনগণের আত্মত্যাগের চূড়ান্ত অপমান। একইসঙ্গে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পূনর্বাসন দেশের স্বাভাবিক গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করার শামিল।
মুসাদ্দিক বলেন, “জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী বিপ্লবীদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরা বিভিন্ন দাবি তুলে জুলাইয়ে অংশ নেওয়া বিপ্লবীদের বিতর্কিত করতে চায়। আমরা বিষয়টি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করেই আমরা বিভিন্ন মতাদর্শের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো নিয়ে ‘জুলাই ঐক্য’ নামে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় জোটের ঘোষণা করছি।”
মুসাদ্দিক আরো বলেন, “এ জোটের মূল ও একমাত্র দাবি হচ্ছে জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারীদের সাংবিধানিক নিরাপত্তা নিশ্চিত, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। পাশাপাশি ২৪ এর গণহত্যা, শাপলা ট্রাজেডি, পিলখানা ট্রাজেডি, গুম, খুন, দূর্নীতিসহ বিগত সাড়ে ১৫ বছরে যেসব অপকর্ম সংঘঠিত হয়েছে, তার সঙ্গে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজনীয় ক্যাম্পেইন জারি রাখা। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট ধারণকারী সব শক্তিকে নিয়ে একতাবদ্ধভাবে কাজ করবে জোটটি।”
এ সময় ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের প্রতিনিধি রাফে সালমান রিফাত বলেন, “জুলাইয়ে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে মাঝে মাঝে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করতে দেখা যাচ্ছে। তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আমরা দেশের ফ্যাসিবিরোধী সব সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে কাজ করব।”
সংবাদ সম্মেলনে পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী বিপ্লবীদের সাংবিধানিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে আগামী ৭ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ য স স ট আওয় ম ন ষ দ ধ কর র জন ত ক গণহত য
এছাড়াও পড়ুন:
ইবিতে শিক্ষক-শিবির বিতণ্ডা: বিএনপিপন্থি শিক্ষক সংগঠনগুলোর নিন্দা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষকের সঙ্গে শাখা ছাত্রশিবিরের নেতাদের বাকবিতণ্ডার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপিপন্থি ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) কেন্দ্রীয় ও ইবি শাখাসহ জিয়া পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) কেন্দ্রীয় সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
এর আগে, গত বুধবার শাখা ইউট্যাব ও জিয়া পরিষদের নেতৃবৃন্দের স্বাক্ষরিত পৃথক প্রতিবাদলিপি দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
রাবিতে নিয়োগ পাননি জামায়াত নেতার সুপারিশপ্রাপ্ত সেই প্রার্থী
কুবিতে র্যাগিং: ২ শিক্ষার্থী বহিষ্কারসহ বিভাগীয় প্রধান ও ছাত্র উপদেষ্টাকে শোকজ
ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট ও মহাসচিব এক বিবৃতিতে বলেন, ইবির লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক, বিএনপিপন্থি সাদা দলের আহ্বায়ক ও ইউট্যাবের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ড. মতিনুর রহমান বুধবার (১৩ আগস্ট) তার পূর্বনির্ধারিত ক্লাসে উপস্থিত হন। সেখানে দেখেন, শ্রেণিবহির্ভূত কিছু শিক্ষার্থী রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালান করছে। এমতাবস্থায় অধ্যাপক মতিনুর রহমান তাদেরকে রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত করে কক্ষ ত্যাগ করতে বলেন। কিন্তু উল্টো ইসলামী ছাত্রশিবিরের কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী অধ্যাপক একেএম মতিনুর রহমানের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও তাকে লাঞ্ছিত করে এবং বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে অধ্যাপক মতিনুর রহমান তার পূর্বনির্ধারিত ক্লাস না নিয়ে সেখান থেকে চলে যান এবং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তারা বলেন, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে স্পষ্ট হয় যে, ছাত্রশিবির একজন সিনিয়র অধ্যাপকের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করেছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। আমরা এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে অভিযুক্ত শিবির নেতাদের তাদের অন্যায় আচরণের জন্য অধ্যাপক মতিনুর রহমানের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানাই।
তারা আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বাদ দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে রাজনৈতিক কার্যক্রম করা সম্পূর্ণরুপে বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেই আমরা মনে করি।
ইবি জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফারুকুজ্জামান খান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, একজন শিক্ষকের প্রতি যেকোনো ধরনের অবমাননাকর আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক এবং সার্বিক পেশাদারিত্ব ও মর্যাদার পরিপন্থি।
এছাড়া ইউট্যাব ইবি শাখার সভাপতি অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রশিদুজ্জামান একই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, পাঠদানের নির্দিষ্ট সময়ে শ্রেণিকক্ষে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই।
বিবৃতিতে জিয়া পরিষদ ইবি শাখা প্রশাসনের নিকট বেশকিছু দাবি জানান। দাবিগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সংগঠনকে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম-নীতি, প্রক্রিয়া-প্রকরণ ও সময়সূচি মেনে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকার ও সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা; ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক মতপার্থক্য যেন কখনোই শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না করে, সেই লক্ষ্যে কার্যকর মনিটরিং, সচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
গত বুধবার লোকপ্রশাসন বিভাগের সভাপতির অনুমতি নিয়ে বিভাগের ২০২৪-২৫ বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে ক্লাসরুমে যান শিবিরের প্রতিনিধি দল। ৫/৭ মিনিট পর শিডিউল ক্লাস নিতে আসেন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান।
তিনি ক্লাসে এসে শিবির নেতাদের দেখে বের হয়ে যেতে বললে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে বিভাগের শিক্ষক, প্রক্টরিয়াল বডি ও শিবির প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ওই শিক্ষকের নিকট শিবির নেতাদের ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে বিষয়টির মীমাংসা করা হয়।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী