এপ্রিল মাসে দেশের অর্থনীতির সম্প্রসারণের গতি কমেছে। এপ্রিল মাসে দেশের অর্থনীতির প্রধান চারটি খাত নিয়ে প্রণীত পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স বা পিএমআই সূচকের মান ৮ দশমিক ৮ পয়েন্ট কমেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এপ্রিল মাসে পিএমআই সূচকের মান ৫২ দশমিক ৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে। মার্চ মাসে এই সূচকের মান ছিল ৬১ দশমিক ৯।

গত মাসে দেশের অর্থনীতির প্রধান চারটি খাতই সম্প্রসারিত হয়েছে। কৃষি খাতে সপ্তম মাসের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। উৎপাদন খাত টানা আট মাস সম্প্রসারিত হয়েছে। নির্মাণ খাত সম্প্রসারণ হয়েছে টানা পাঁচ মাস। পরিষেবা খাতেরও সম্প্রসারণ হয়েছে সাত মাস।

বিজ্ঞপ্তিতে অর্থনীতির প্রধান চারটি খাতের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলা হয়েছে, উৎপাদন ও নির্মাণ সূচকের উচ্চ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকলেও কৃষি খাতের সম্প্রসারণ হবে ধীরগতিতে।

এই প্রতিবেদন সম্পর্কে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, সম্প্রতি পিএমআই থেকে বোঝা যায়, অর্থনীতির প্রধান খাতগুলোর সম্প্রসারণ অব্যাহত আছে, যদিও গতি কিছুটা কমেছে। এপ্রিল মাসের পিএমআই অক্টোবর মাসে সম্প্রসারণ শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বনিম্ন। দীর্ঘ ছুটির কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা, পোশাক খাতে ট্রাম্পের শুল্কের প্রাথমিক প্রভাব ও জ্বালানি সরবরাহ সমস্যা সম্ভবত এই ধীর গতির কারণ।

পিএমআই শূন্য থেকে ১০০ নম্বরের মধ্যে পরিমাপ করা হয়। সূচকের মান ৫০-এর বেশি হলে অর্থনীতির সম্প্রসারণ এবং ৫০-এর নিচে হলে সংকোচন বোঝায়। আর মান ৫০ থাকলে বুঝতে হবে সংশ্লিষ্ট খাতে ওই মাসে কোনো পরিবর্তন হয়নি। গত বছরের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার ও সরকার পতনের আন্দোলনের জেরে পিএমআই মান ৩৬ দশমিক ৯ পয়েন্টে নেমে এসেছিল। আগস্টে তা কিছুটা বেড়ে ৪৯ দশমিক ৭ পয়েন্ট হয়। অক্টোবর মাসে তা ৫৫ দশমিক ৭ পয়েন্টে উঠে আসে। এর পর থেকে অর্থনীতি সম্প্রসারণের ধারায় আছে।

ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের শতবর্ষের পুরোনো সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স (এমসিসিআই) ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ এক বছর ধরে যৌথভাবে পিএমআই প্রণয়ন করছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প এমআই দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

কাদেরপন্থী নেতাকর্মীরা চান বহিষ্কার, কাউন্সিলে অনড় আনিস-হাওলাদারর

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ (ক্ষমতার) ধারা গঠনতন্ত্র থেকে বাদ দিয়ে ২৮ জুন দলের জাতীয় কাউন্সিল আয়োজন করতে দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ শীর্ষনেতারা।

তারা বলেছেন, ‘প্রেসিডিয়ামের অনুমোদন ছাড়া কাউন্সিল স্থগিত করা দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও গঠনতন্ত্র বিরোধী পার্টির চেয়ারম্যানের একক স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত। দলকে শক্তিশালী করতে এই ধারা বাদ দিতে হবে এবং সবাইকে নিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাউন্সিল করে একটি শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গঠন করতে হবে।’

অন্যদিকে বিশেষ ক্ষমতার এই ধারা বহাল রেখে জিএম কাদেরকে সমর্থন জানিয়ে তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির কাদেরপন্থী মহানগর ও জেলা নেতাকর্মীরা। তারা কাউন্সিলের পরিবর্তে ওইদিন কাকরাইলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।এমনকি কাউন্সিলের পক্ষ অবলম্বনকারী শীর্ষনেতা আনিস-হাওলাদারদের দল থেকে বহিস্কারের দাবি তুলেছেন।তারা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় কাকরাইল ও বনানী কার্যালয় নিজেদের দখলে রেখেছেন।

বুধবার (২৫ জুন) দলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশের জেলা ও মহানগর নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

বেলা ১২টায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নেতারা বলেছেন, তারা জাতীয় পার্টির বিষফোঁড়া। পার্টির চেয়ারম্যানকে জিম্মি করে তারা দলকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আদর্শ থেকে দূরে নিয়ে গেছেন। তারা সবসময় ক্ষমতার রাজনীতি করেছেন। নিজেরা এমপি, মন্ত্রী ও দলের শীর্ষপদ বাগিয়ে নিয়েছেন। ক্ষমতার লোভে এখন তারা দলকে শেষ করতে চান।তাই দলের জন্যই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এসব বিষফোঁড়া কেটে ফেলতে হবে। তাদের দল থেকে বহিস্কার করে জাতীয় পার্টিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে। তারা জিএম কাদের এর নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত করে মাঠে থাকার ঘোষণা দেন।

এ সময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের জেলা ও মহানগর নেতাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জাতীয় পার্টি নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।এতদিন যারা জাতীয় পার্টি নিয়ে বেচাকেনার রাজনীতি করেছে তারাই ষড়যন্ত্র করছে। তাদের সঙ্গে নিয়ে আমি আর রাজনীতি করব না। তিনি ত্যাগী নেতাদের উপযুক্ত মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলার আহ্বান জানান।

উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, ইমরান হোসেন মিয়া, লিয়াকত হোসেন খোকা, শেরীফা কাদের, মো. শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, মনিরুল ইসলাম মিলন, আশরাফুজ্জামান আশু, এসএম ইয়াসির, ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস।

জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সঞ্চালনায় জেলা নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নুরুন্নাহার বেগম, আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, রেজাউল করিম রেজা, রেজাউর রাজী স্বপন চৌধুরী, আহমেদ শফি রুবেল, সারোয়ার হোসেন শাহীন, আনোয়ার হোসেন, সাইফুল ইসলাম স্বপন, আব্দুল কাদের খান কদর, মোস্তফা জামান লিটন, কেফায়েতউল্ল্যোহ নজির, অধ্যাপক মাহসিনুল ইসলাম হাবুল, আনোয়ার হোসের আনু, বশির আহমেদ, মাহমুদুল হক মনি, জাকির হোসেন খান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি, মো. মোজাম্মেল হক, সামছুল হক, নাসির আহমেদ খান, মো. হাসান সাঈদ, এএফএম আরিফুজ্জামান দিদার, নেওয়াজ আলী ভূঁইয়া, নাজমুল হুদা হিমেল, আহমেদ রিয়াজ, জালাল খান, এয়ার আহমেদ সেলিম, জিয়াউল হুদা আপলু, নুরুচ্ছফা সরকার, আবু তাহের, মো. তারেজ, মিথিলা রওয়াজা, শওকত জামান মিশুক, নাফিজ আহমেদ খান টিটু, শাহরিয়ার জামিল জুয়েল, খন্দকার ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ, রবিউল ইসলাম, মো. এমদাদুল হক বাচ্চু, হাজরা শহীদুল ইসলাম বাবলু, শফিকুল ইসলাম মধু, আব্দুল্লাহ আল মামুন।

অন্যদিকে, গঠনতন্ত্রের চেয়ারম্যানের বিশেষ ধারা বাদ দিয়ে ২৮ জুন জাতীয় কাউন্সিল ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন দলের সিনিয়র কো চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো চেয়ারম্যান এবি এম রুহুল আমিন হাওলাদার।

বুধবার এক যুক্ত বিবৃতিতে তারা বলেছেন, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের জাতীয় সম্মেলন বা কাউন্সিলের তারিখ ও স্থান নির্ধারণের পূর্ণ ক্ষমতা প্রেসিডিয়ামের। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের প্রেসিডিয়ামের মতামত বা অনুমোদন ছাড়াই একতরফাভাবে ২৮ জুন নির্ধারিত দশম জাতীয় কাউন্সিল স্থগিত করেছেন।

প্রেসিডিয়াম সভার সিদ্ধান্ত ছিল বাংলাদেশ চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল পাওয়া না গেলে একই দিনে বিকল্প স্থান হিসেবে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের চত্ত্বরে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সেই বিকল্প স্থানেও কাউন্সিল না করে তিনি একক সিদ্ধান্তে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাউন্সিল এড়ানোর জন্য সমাবেশ ডাকেন।যা সম্পূর্ণভাবে গঠনতন্ত্র ও দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী। গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা যেভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে, তা প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক চর্চার অন্তরায়।

তারা বলেন, ‘জাতীয় পার্টির অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্য বিশ্বাস করেন, এই ধারা গণতন্ত্রবিরোধী এবং অনতিবিলম্বে সংশোধনের দাবি রাখে।

এই একতরফা সিদ্ধান্তের পিছনে দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্য আছে বলে আমরা মনে করি। দীর্ঘদিন ধরে দলের নেতাকর্মীরা দলীয় অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দাবি জানিয়ে আসলেও, চেয়ারম্যান সেই চাহিদা এড়িয়ে যাচ্ছেন। তার সদিচ্ছার ঘাটতি এবং স্বচ্ছতা এড়িয়ে চলার প্রবণতাই আজ দলের গুরুত্বপূর্ণ কাউন্সিল বিলম্বের কারণ বলে আমরা মনে করি।’

তাছাড়া, প্রেসিডিয়ামের একাধিক সদস্যের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল-দলের পুরনো, ত্যাগী, দক্ষ ও অভিজ্ঞ নেতাদের সমন্বয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গঠন করা হোক। কিন্তু একতরফা আধিপত্য বজায় রাখার জন্য চেয়ারম্যান সেই উদ্যোগেরও বিরোধিতা করছেন।এটি অত্যন্ত হতাশাজনক।

জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ-একজন রাষ্ট্রনায়ক, যিনি সর্বদা সংগঠনের ভিতরে গণতন্ত্র, শৃঙ্খলা ও দলীয় ঐক্যের চর্চা করতেন জানিয়ে নেতারা বলেন, তিনি (এরশাদ) বিশ্বাস করতেন, দল চলবে সবার মতামতের ভিত্তিতে এবং নেতৃত্ব আসবে অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আজ তার সেই মহান আদর্শ থেকে বিচ্যুতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে—যা আমরা কখনোই মেনে নিতে পারি না।

‘পার্টির চেয়ারম্যান যেন অবিলম্বে একগুয়েমী ও স্বেচ্ছাচারিতার পথ থেকে সরে এসে, পল্লীবন্ধুর আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, অনতিবিলম্বে জাতীয় কাউন্সিলের নতুন তারিখ ঘোষণা করেন এবং সেই কাউন্সিল প্রেসিডিয়ামের সভা আহ্বান করে পুনরায় সিদ্ধান্ত নিয়ে যথাসময়ে কাউন্সিল আয়োজনে সহযোগিতা করবেন-আশাবাদ ব্যক্ত করেন দলের দুই শীর্ষনেতা।

জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী এবং গণতান্ত্রিক দল হিসেবে পুনর্গঠনের এটাই উপযুক্ত সময় উল্লেখ করে তারা বলেন, দয়া করে দলকে একক সিদ্ধান্ত, গোপনীয়তা এবং দায়বদ্ধতা বিবর্জিত নেতৃত্বের দিকে নয়-বরং অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা এবং যৌথ নেতৃত্বের মাধ্যমে ঐক্যের পথে এগিয়ে নিতে সহায়তা করুন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ