ক্ষুদ্র উদ্যোগ অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের চালিকাশক্তি
Published: 9th, May 2025 GMT
তিনটি শব্দগুচ্ছ দ্বারা লেখাটা শুরু করা যাক। ক্ষুদ্র উদ্যোগ বনাম বিশাল ভবিষ্যৎ; ক্ষুদ্রঋণ বনাম ক্ষুদ্র উদ্যোগ; প্রথাগত উন্নয়ন বনাম অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন। ক্ষুদ্র উদ্যোগ শুনলেই অনেকেই ভ্রু কুঁচকান। ভাবেন, এসব ছোট উদ্যোগ দিয়ে কী হবে? উদ্যোগ হতে হবে বৃহৎ– দশাসই প্রকল্প। তবেই না উন্নয়ন! কিন্তু কথা হচ্ছে, ক্ষুদ্র উদ্যোগের দুটি মাত্রিকতা থাকে, যা বৃহৎ উদ্যোগের থাকে না। তার একটি হচ্ছে ব্যক্তিগত স্বপ্ন, অন্যটি ব্যক্তিগত শ্রম। দীর্ঘদিনের সযত্ন-লালিত একটি স্বপ্নই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার মূল চালিকাশক্তি। একটি স্বপ্ন নিয়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তাঁর উদ্যোগ শুরু করেন। সেই উদ্যোগই উদ্যোক্তাকে আরও বড় স্বপ্ন দেখতে শেখায়। সেই স্বপ্নের দিকে উদ্বুদ্ধ করে। স্বপ্ন আর উদ্যোগ তখন পরস্পরকে পুষ্ট করে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য থাকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার রক্ত জল করা, ঘাম ঝরানো ব্যক্তিগত শ্রম। স্বপ্ন দেখে সে বিশাল এক ভবিষ্যতের। সেই ভবিষ্যতের দিকে সে দিনভর খেটে যায়। ব্যক্তিগত সেই স্বপ্ন, ব্যক্তিগত সেই শ্রম দিয়েই একটু একটু করে একদিন তৈরি হয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার বিশাল পৃথিবী। সে পথযাত্রায় অন্তরায় আছে, ব্যর্থতা আছে, হতাশা আছে। কিন্তু সব পেরিয়ে সেখানে একটি বিশাল ভবিষ্যতের স্বপ্ন থাকে।
পরের বিষয়টি হচ্ছে ক্ষুদ্রঋণ বনাম ক্ষুদ্র উদ্যোগের। অনেকেই মনে করেন, ক্ষুদ্র উদ্যোগের ঝামেলা অনেক। বহু কিছু সংগঠিত করতে হয়– ভূমি, কারখানা, কাঁচামাল ইত্যাদি। ঝুঁকিও সেখানে বহুবিধ– ব্যর্থতার আশঙ্কাও অনেক। সেদিক থেকে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ– খেলাপি হওয়া ভিন্ন সেখানে ঝুঁকি তেমন কিছু নেই। তারপরও ক্ষুদ্র উদ্যোগ পছন্দনীয়। কারণ ক্ষুদ্র উদ্যোগ একটি সার্বিক ব্যবস্থা, যেখানে উৎপাদনের সব উপকরণ থাকে। ক্ষুদ্রঋণ সেই উপকরণ মোর্চার একটি অংশ মাত্র। সুতরাং অন্য কথায়, ক্ষুদ্রঋণ ক্ষুদ্র উদ্যোগের একটি অত্যাবশ্যকীয় অংশ, কিন্তু পর্যাপ্ত অংশ নয়।
ক্ষুদ্রঋণের সঙ্গে ক্ষুদ্র উদ্যোগের তিনটি মৌলিক পার্থক্য আছে। এক.
প্রথাগত বনাম অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন আলোচনার আগে উন্নয়ন বিষয়কে একটু খোলাসা করা দরকার। আমি ‘অগ্রগতি’ এবং ‘উন্নয়নের’ মধ্যে একটি বিভাজন করি। ‘অগ্রগতি’ হচ্ছে কোনো ইতিবাচক বিষয়ের পরিমাণগত বৃদ্ধি (যেমন জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি) কিংবা কোনো নেতিবাচক বিষয়ের পরিমাণগত হ্রাস (যেমন শিশুমৃত্যুহারের হ্রাস)। অন্যদিকে ‘উন্নয়ন’ মানে কোনো বিষয়ের পরিমাণগত বৃদ্ধিই নয়; তার গুণগত পরিবর্তনও। যেমন– জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি হচ্ছে অগ্রগতি। আর যদি সে বৃদ্ধি সুষমভাবে বণ্টিত হয়, সেটা হচ্ছে উন্নয়ন। ঠিক তেমনিভাবে শিশুমৃত্যুহার হ্রাস হচ্ছে অগ্রগতি। সেটার সঙ্গে যদি শিশুর পুষ্টি বাড়ে, তা হচ্ছে উন্নয়ন। সোজা কথায়, অগ্রগতির সঙ্গে যদি গুণগত পরিবর্তন ঘটে, তবে সেটা উন্নয়ন। অতএব, অগ্রগতি উন্নয়নের একটি অংশ– আবশ্যিক শর্ত, কিন্তু পর্যাপ্ত শর্ত নয়।
প্রথাগত উন্নয়ন আসলে অগ্রগতির নামান্তর, সেখানে পরিমাণগত বৃদ্ধিই মুখ্য বিষয়। কিন্তু অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন গুণগত পরিবর্তনকে বিবেচনা করে। তাই এটি উন্নয়ন। উন্নয়ন অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে। এক. সেই উন্নয়নে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় জনগণ অংশগ্রহণ করবে। তবে সেই অংশগ্রহণ শুধু উৎপাদনের একটি উপকরণ (শ্রম) হিসেবে নয়। সেই অংশগ্রহণ হবে উৎপাদন সিদ্ধান্তে, উন্নয়ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে। সুতরাং সেসব সিদ্ধান্ত ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হবে না; স্থানীয়ভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই জনগণ উন্নয়ন বিষয়ে (কর্মসূচি ও প্রকল্প) সিদ্ধান্ত নেবে– কর্মসূচি ও প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে। প্রয়োজনে এ অংশগ্রহণ পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। সুতরাং জনগণ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করবে না।
দুই. জনগণ শুধু উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে না। তারা এর সুফলও ভোগ করবে। এবং সেই সুফল সুষমভাবে বণ্টিত হতে হবে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে। সেখানে সাম্যের নীতি পালিত এবং অনুসৃত হবে। তিন. উন্নয়ন অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হলে উন্নয়ন-সুযোগ এবং উন্নয়ন-ফলাফলে বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে। সে জন্য প্রবৃদ্ধি প্রক্রিয়ায় সমাজের নিম্নতম ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রবৃদ্ধি অন্য সব গোষ্ঠীর আয়-প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে দ্রুত হারে বাড়তে হবে। উপর্যুক্ত শর্তগুলো উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় পালিত হলে তা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন।
প্রশ্ন হচ্ছে, ক্ষুদ্র উদ্যোগ কি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে সহায়ক? অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের শর্তগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যাবে ক্ষুদ্র উদ্যোগ অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। প্রথমত, ক্ষুদ্র উদ্যোগে উদ্যোক্তা তাঁর শ্রম, উপকরণ ও সৃজনশীলতা নিয়ে সরাসরি উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উদ্যোক্তা তাঁর শ্রম দেন। উৎপাদন ও উন্নয়ন সিদ্ধান্তও তাঁরই। পুরো প্রক্রিয়ার নিরীক্ষণ ও মূল্যায়নও উদ্যোক্তা করে থাকেন। দ্বিতীয়ত, ক্ষুদ্র উদ্যোগ দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিকদের কর্মে নিয়োজন দান করে থাকে। সুতরাং তাদের কর্মে নিয়োজনের মাধ্যমে আয় এবং আয়-প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা হয়। সেই সঙ্গে যেহেতু উদ্যোগটি ক্ষুদ্র, তাই এই আয়ের বণ্টনও সরাসরি ক্ষুদ্র উদ্যোগের মধ্যে হয়ে থাকে। তৃতীয়ত, প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মনিয়োজনের পরিবর্তে কর্মনিয়োজনের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির যে প্রক্রিয়া ক্ষুদ্র উদ্যোগ অনুসরণ করে, তা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। সবটা মিলিয়ে বলা চলে, ক্ষুদ্র উদ্যোগ অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।
সেলিম জাহান: ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন
কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ষ দ রঋণ প রব দ ধ ন য় জন গ রহণ র একট
এছাড়াও পড়ুন:
ইসলামের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ
মদিনার মসজিদে নববিতে সূর্যের আলো এসে পড়েছে। একদল সাহাবা জড়ো হয়েছেন, তাঁদের কণ্ঠে ন্যায়বিচারের দাবি। তাঁরা খলিফার কাছে তাঁদের অভিযোগ তুলে ধরছেন, কিন্তু তাঁদের হাতে তরবারি নেই—আছে কোরআন। এই দৃশ্য ইসলামি ইতিহাসের একটি চিরন্তন ছবি। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, যা মুসলিম সমাজের ন্যায়বিচার ও জনকল্যাণের প্রতি অঙ্গীকারের প্রতীক, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পেয়েছে। মিছিল, সংলাপ, প্রতীকী অভিযোগ, মসজিদে সমবেত দোয়া—এসব ছিল মুসলিমদের অধিকার আদায়ের শান্তিপূর্ণ অস্ত্র। এই প্রবন্ধে আমরা ইসলামের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ধর্মীয় শিকড়, খেলাফতের যুগে এর প্রাথমিক রূপ এবং এর সামাজিক তাৎপর্য অনুসন্ধান করব।
ন্যায়ের জন্য কথা বলার আহ্বান
ন্যায়বিচার ইসলামের মূল শিক্ষার অন্যতম। কোরআন বলে, ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাক্ষী হও, যদিও তা তোমাদের নিজেদের বা তোমাদের পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে যায়।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১৩৫)
এই আয়াত মুসলিমদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে উৎসাহিত করে, এমনকি তা শাসকের বিরুদ্ধে হলেও। মহানবী (সা.) ছিলেন এই শিক্ষার জীবন্ত উদাহরণ। তিনি জনগণের অভিযোগ শুনতেন এবং তাদের কথা বলার অধিকার রক্ষা করতেন। একটি হাদিসে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং দুর্বল ও প্রয়োজনীয়দের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে বিচ্ছিন্ন করবেন।’ (সুনানে তিরমিজি: ১,৪১০; আবু দাউদ: ২,৯৪৮; মুসনাদে আহমদ: ২১,৫৮৪)
রাশিদুন খলিফারা এই শিক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন। আবু বকর সিদ্দিক (রা.) খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পর মদিনার মসজিদে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি তোমাদের দায়িত্বে নিযুক্ত হয়েছি, কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম নই। যদি আমি ভালো করি, তবে আমাকে সাহায্য করো; আর যদি আমি ভুল করি, তবে আমাকে সংশোধন করো।’ (ইমাম মালিক, মুয়াত্তা, ২/৮৮১, বৈরুত: দারুল কুতুব, ১৯৮৫)
এই বক্তব্য জনগণকে শাসকের তদারকি ও সংশোধনের অধিকার দিয়েছিল। ইমাম মালিক (৭১১-৭৯৫ খ্রি.) বলেন, ‘এই শর্ত ছাড়া কেউ ইমাম হতে পারে না।’ (আল-কুরতুবি, তাফসিরুল কুরতুবি, ৫/২১২, কায়রো: দারুল কুতুব, ১,৯৬৪)
এই ধর্মীয় শিকড় মুসলিম সমাজে প্রতিবাদের সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করেছিল। প্রতিবাদ ছিল ‘আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার’ (ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে বাধা দেওয়া)-এর অংশ, যা মুসলিমদের ধর্মীয় দায়িত্ব।
আরও পড়ুনসাবধানী মানুষের নয়টি গুণ০৭ মে ২০২৫খিলাফত যুগে প্রতিবাদের প্রথম রূপ
খিলাফতের যুগে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পেয়েছে। এটি কখনো সংলাপ, কখনো সমাবেশ, আবার কখনো প্রতীকী অভিযোগের মাধ্যমে। এই প্রতিবাদগুলো শাসক ও জনগণের মধ্যে একটি গতিশীল সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। এখানে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা তুলে ধরা হলো:
উমরের (রা.) সংলাপ: মদিনার রাস্তায় খলিফা উমর বিন খাত্তাব (৫৮৪-৬৪৪ খ্রি.) হাঁটছেন। তিনি সাহাবি মুহাম্মদ বিন মাসলামার (মৃ. ৬৬৬ খ্রি.) সঙ্গে দেখা করেন এবং জিজ্ঞাসা করেন, ‘তুমি আমাকে কেমন দেখো?’ মুহাম্মদ (রা.) ছিলেন স্পষ্টভাষী। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে শক্তিশালী, ন্যায়পরায়ণ ও বিশুদ্ধ ব্যক্তি হিসেবে দেখি। তবে আপনি যদি বিচ্যুত হন, আমরা আপনাকে সংশোধন করব, যেমন তীরকে সোজা করা হয়।’ উমর (রা.) হাসলেন এবং বললেন, ‘আল্লাহর প্রশংসা, যিনি আমাকে এমন জাতির মধ্যে রেখেছেন, যারা আমার ভুল সংশোধন করে।’ (ইমাম জাহাবি, তারিখুল ইসলাম, ৩/১২৫, দামেস্ক: দারুল কুতুব, ১৯৮৭)
উসমানের (রা.) সময় প্রতিবাদ: উসমান বিন আফফানের (৫৭৬-৬৫৬ খ্রি.) শাসনামলে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তাঁর কিছু নীতি এবং কয়েকজন প্রশাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। মদিনায় একদল প্রতিনিধি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। উসমান (রা.) প্রাথমিকভাবে এই প্রতিবাদের অধিকার স্বীকার করেন এবং সাহাবাদের হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমি চাই না কেউ আমার জন্য রক্তপাত করুক।’ (ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭/২১৮, দামেস্ক: দারুল ফিকর, ১৯৮৮)
উমাইয়া যুগে প্রতিবাদ: উমাইয়া শাসনকালে মুয়াবিয়া বিন আবি সুফিয়ান (৬০২-৬৮০ খ্রি.) তাঁর পুত্র ইয়াজিদের জন্য উত্তরাধিকার নির্ধারণ করেন, যা সাহাবাদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে। আবদুর রহমান বিন আবু বকর (মৃ. ৬৬৬ খ্রি.) মসজিদে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এটি আবু বকর বা উমরের পদ্ধতি নয়, বরং হেরাক্লিয়াস বা কায়সারের পদ্ধতি।’ (ইবনে হাজার আল-আসকালানি, আল-ইসাবা ফি তাময়িজিস সাহাবা, ৪/১৮৩, বৈরুত: দারুল কুতুব, ১৯৯৫)
আরও পড়ুন সুরা তাহরিমে রয়েছে মানুষের জন্য কিছু শিক্ষা০২ জুন ২০২৪একটি গতিশীল সমাজ
ইসলামের ইতিহাসে প্রতিবাদ মুসলিম সমাজের গতিশীলতা ও সংগঠিত কাঠামো প্রকাশ করে। মুসলিম সমাজ ঐক্য, সংঘ ও সম্প্রদায়ের মাধ্যমে সংগঠিত ছিল, যা শাসকদের একক আধিপত্য কঠিন করে তুলেছিল। উলামা ও সুফি সাধকেরা জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়ে প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিতেন। ইতিহাসের সেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ঐতিহ্য আজও প্রাসঙ্গিক। তবে আধুনিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমরা দেখি, মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের অধিকার দাবি ঠিকই করে, কিন্তু মুসলিম শাসকেরা সব সময় সহনশীল থাকেন না, বরং অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সহিংস উপায়ে দমন করেন। মহানবী (সা.) ও রাশিদুন খলিফারা যেখানে জনগণকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে উৎসাহিত করেছেন, সেখানে মুসলিম শাসকেরা এখন বহুক্ষেত্রে বাক্স্বাধীনতা সীমিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ফলে এখন করা প্রতিবাদগুলো মুসলিম সমাজের গতিশীলতা ও ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি আদায় করতে ব্যর্থ হয়।
আল–জাজিরা ডট নেট অবলম্বনে
আরও পড়ুনপার্থিব জাঁকজমক যেন আধ্যাত্মিকতার বাধা না হয়০৭ মে ২০২৫