ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলা ঘিরে প্রায় তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। তিন দিন ধরে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী দুই দেশ। ইসলামাবাদের দাবি, দুই দিনে ভারতের ৭৭টি ড্রোন ধ্বংস করেছে তারা। অন্যদিকে নয়াদিল্লির অভিযোগ, এক রাতেই ভারতে ৩০০ থেকে ৪০০ ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান।
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এর দায় পাকিস্তানের ওপর চাপিয়ে আসছে ভারত। তবে তা নাকচ করেছে পাকিস্তান। ওই ঘটনার জেরে পাল্টাপাল্টি বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছে দেশ দুটি। এমন উত্তেজনার মধ্যে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তান ও দেশটির নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলা চালায় ভারত। এর পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি হামলা।
এ হামলার মধ্যে ভারতের ৭৭টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর একটি সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, বুধবার দিনভর ভারতের ২৯টি ড্রোন ধ্বংস করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। সেদিন রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আরও ৪৮টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। ভারতের আকাশসীমা থেকে ড্রোনগুলো পাকিস্তানে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র।
ভারতের ড্রোন হামলা ও কামানের গোলার আঘাতে পাকিস্তানে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। পাকিস্তানের পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গোলা বর্ষণ করে ভারত। এতে এক নবজাতকসহ পাঁচজন নিহত হন। এর আগে বুধবার পর্যন্ত ৩১ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছিল পাকিস্তান। এ নিয়ে তিন দিনে ভারতের হামলায় ৩৬ জন নিহত হওয়ার খবর জানাল দেশটি।
চলমান এ উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জম্মু ও উদামপুর শহর এবং পাঞ্জাবের পাঠানকোটে পাকিস্তান হামলা চালায় বলে দাবি করেছে ভারত। হিন্দুস্তান টাইমস–এর খবর অনুযায়ী, গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সামরিক বাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং বলেন, এদিন রাতে ভারতের ৩৬টি স্থানে ৩০০ থেকে ৪০০টি ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালায় পাকিস্তান।
বৃহস্পতিবার রাতের ওই হামলায় পাকিস্তান তুরস্কের তৈরি ড্রোন ব্যবহার করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন ব্যোমিকা সিং। এ ছাড়া বাণিজ্যিক উড়োজাহাজকে ইসলামাবাদ ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে বলে দাবি করেছেন তিনি। এর আগে ভারতের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের তৈরি ড্রোন ব্যবহারের অভিযোগ এনেছিল ইসলামাবাদ।
তিন দিন ধরে চলা সংঘাতে ভারতীয় ২৫ সেনা নিহত হওয়ার দাবি করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। তবে বুধবার পর্যন্ত ১৫ বেসামরিক নাগরিকসহ ১৬ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে ভারত সরকার। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তানের হামলায় কাশ্মীরের উরি সেক্টরে আরও একজন নারী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা।
দেশভাগের পর এখন পর্যন্ত চারটি যুদ্ধে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। এর মধ্যে ১৯৪৭, ১৯৬৫ ও ১৯৯৯—তিনবার দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে কাশ্মীরের মালিকানা নিয়ে।
অমৃতসর–শ্রীনগর বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরণগতকাল রাতে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগর বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। স্থানীয় সাংবাদিক উমর মেহরাজ সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরাকে জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের কাছ থেকে বিস্ফোরণের উচ্চ শব্দ ভেসে আসে। আকাশে প্রোজেক্টাইল (ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র) দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। এ সময় তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এ ছাড়া ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসর শহরেও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশ করেছেন রনবিন্দর সিং নামের একজন সাংবাদিক। ওই ভিডিওর শিরোনামে তিনি লেখেন, ‘কিছুক্ষণ আগে অমৃতসরে বিমানবাহিনীর সেনানিবাসের কাছে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে।’
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জম্মু শহরে গতকাল রাতে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। এক্সে করা এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, এগুলো কামানের গোলার শব্দ।’ এর আগে আরেকটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘জম্মু এখন অন্ধকারাচ্ছন্ন রয়েছে। শহরজুড়ে সাইরেনের শব্দ শোনা যাচ্ছে।’
চলমান উত্তেজনার মধ্যে ভারতের অন্যান্য সীমান্তবর্তী অঞ্চলে গতকাল সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গুজরাট রাজ্যের ভুজ শহরে সীমান্ত এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। রাজস্থানের বিকানের অঞ্চলে বন্ধ করা হয় সব স্কুল ও কোচিং সেন্টার। সম্ভাব্য হামলার হুমকির মধ্যে ভারতের সব বন্দর, টার্মিনাল ও শিপইয়ার্ডগুলোকে নিরাপত্তাব্যবস্থা বৃদ্ধি করার নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
‘বড় সংঘাতের দিকে দুই দেশ’পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলী খান গতকাল ইসলামাবাদে বলেছেন, এটি সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক যে ভারতের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশকে বড় সংঘাতের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ভারতের ‘অন্ধ জাতীয়তাবাদ ও যুদ্ধের জন্য উন্মাদনা’ বিশ্বের জন্য উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত।
জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন এরই মধ্যে দুই দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, ‘আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব উত্তেজনা যেন কমে আসে। যদিও আমরা দুই দেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না।’
আর গতকাল পাকিস্তানের পার্লামেন্টে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছেন, উত্তেজনা কমাতে সৌদি আরব, কাতার ও চীনের সঙ্গে ইসলামাবাদ আলোচনা করছে।
তবে যুদ্ধের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও বিদেশি শক্তিগুলো কিছুটা উদাসীন রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। আর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, উভয় পক্ষকে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং দুর্ভোগ ও প্রাণহানি কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল ম ব দ ব যবহ র কর ছ ন মন ত র গতক ল র খবর
এছাড়াও পড়ুন:
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এক্সপ্রেসওয়ের ঢাকামুখী সড়ক অবরোধ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফরিদপুর ও ভাঙ্গার নেতাকর্মীরা। শুক্রবার ভাঙ্গা টোলপ্লাজা সংলগ্ন ফ্লাইওভার ব্রিজের ওপরে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে এ কার্যক্রম শুরু করেন তারা। এতে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার সকালে ঢাকায় কর্মসূচি চলছিল। এ কর্মসূচিকে ত্বরান্বিত ও বেগবান করার লক্ষ্যে রাত সাড়ে ১২টার পরে দক্ষিণ বঙ্গ থেকে ঢাকায় যাতায়াতের পথ অবরোধ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফরিদপুর ও ভাঙ্গার নেতৃবৃন্দ। পরে মাওয়া-ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা টোলপ্লাজায় অবস্থান নেয় তারা।
এ সময় আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দেন নেতাকর্মীরা।
ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আশরাফ বলেন, আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবিতে আমরা এখানে অবস্থান করছি। যেই পর্যন্ত আমাদের দাবি না মেনে নেওয়া হবে, সেই পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।