Prothomalo:
2025-12-13@08:52:35 GMT

পাল্টাপাল্টি ড্রোন হামলা

Published: 10th, May 2025 GMT

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলা ঘিরে প্রায় তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। তিন দিন ধরে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী দুই দেশ। ইসলামাবাদের দাবি, দুই দিনে ভারতের ৭৭টি ড্রোন ধ্বংস করেছে তারা। অন্যদিকে নয়াদিল্লির অভিযোগ, এক রাতেই ভারতে ৩০০ থেকে ৪০০ ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান।

গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এর দায় পাকিস্তানের ওপর চাপিয়ে আসছে ভারত। তবে তা নাকচ করেছে পাকিস্তান। ওই ঘটনার জেরে পাল্টাপাল্টি বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছে দেশ দুটি। এমন উত্তেজনার মধ্যে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তান ও দেশটির নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলা চালায় ভারত। এর পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি হামলা।

এ হামলার মধ্যে ভারতের ৭৭টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর একটি সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, বুধবার দিনভর ভারতের ২৯টি ড্রোন ধ্বংস করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। সেদিন রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আরও ৪৮টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। ভারতের আকাশসীমা থেকে ড্রোনগুলো পাকিস্তানে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র।

ভারতের ড্রোন হামলা ও কামানের গোলার আঘাতে পাকিস্তানে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। পাকিস্তানের পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গোলা বর্ষণ করে ভারত। এতে এক নবজাতকসহ পাঁচজন নিহত হন। এর আগে বুধবার পর্যন্ত ৩১ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছিল পাকিস্তান। এ নিয়ে তিন দিনে ভারতের হামলায় ৩৬ জন নিহত হওয়ার খবর জানাল দেশটি।

চলমান এ উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জম্মু ও উদামপুর শহর এবং পাঞ্জাবের পাঠানকোটে পাকিস্তান হামলা চালায় বলে দাবি করেছে ভারত। হিন্দুস্তান টাইমস–এর খবর অনুযায়ী, গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সামরিক বাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং বলেন, এদিন রাতে ভারতের ৩৬টি স্থানে ৩০০ থেকে ৪০০টি ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালায় পাকিস্তান।

বৃহস্পতিবার রাতের ওই হামলায় পাকিস্তান তুরস্কের তৈরি ড্রোন ব্যবহার করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন ব্যোমিকা সিং। এ ছাড়া বাণিজ্যিক উড়োজাহাজকে ইসলামাবাদ ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে বলে দাবি করেছেন তিনি। এর আগে ভারতের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের তৈরি ড্রোন ব্যবহারের অভিযোগ এনেছিল ইসলামাবাদ।

তিন দিন ধরে চলা সংঘাতে ভারতীয় ২৫ সেনা নিহত হওয়ার দাবি করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। তবে বুধবার পর্যন্ত ১৫ বেসামরিক নাগরিকসহ ১৬ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে ভারত সরকার। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তানের হামলায় কাশ্মীরের উরি সেক্টরে আরও একজন নারী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা।

দেশভাগের পর এখন পর্যন্ত চারটি যুদ্ধে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। এর মধ্যে ১৯৪৭, ১৯৬৫ ও ১৯৯৯—তিনবার দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে কাশ্মীরের মালিকানা নিয়ে।

অমৃতসর–শ্রীনগর বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরণ

গতকাল রাতে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগর বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। স্থানীয় সাংবাদিক উমর মেহরাজ সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরাকে জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের কাছ থেকে বিস্ফোরণের উচ্চ শব্দ ভেসে আসে। আকাশে প্রোজেক্টাইল (ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র) দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। এ সময় তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এ ছাড়া ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসর শহরেও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশ করেছেন রনবিন্দর সিং নামের একজন সাংবাদিক। ওই ভিডিওর শিরোনামে তিনি লেখেন, ‘কিছুক্ষণ আগে অমৃতসরে বিমানবাহিনীর সেনানিবাসের কাছে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে।’

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জম্মু শহরে গতকাল রাতে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। এক্সে করা এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, এগুলো কামানের গোলার শব্দ।’ এর আগে আরেকটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘জম্মু এখন অন্ধকারাচ্ছন্ন রয়েছে। শহরজুড়ে সাইরেনের শব্দ শোনা যাচ্ছে।’

চলমান উত্তেজনার মধ্যে ভারতের অন্যান্য সীমান্তবর্তী অঞ্চলে গতকাল সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গুজরাট রাজ্যের ভুজ শহরে সীমান্ত এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। রাজস্থানের বিকানের অঞ্চলে বন্ধ করা হয় সব স্কুল ও কোচিং সেন্টার। সম্ভাব্য হামলার হুমকির মধ্যে ভারতের সব বন্দর, টার্মিনাল ও শিপইয়ার্ডগুলোকে নিরাপত্তাব্যবস্থা বৃদ্ধি করার নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

‘বড় সংঘাতের দিকে দুই দেশ’

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলী খান গতকাল ইসলামাবাদে বলেছেন, এটি সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক যে ভারতের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশকে বড় সংঘাতের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ভারতের ‘অন্ধ জাতীয়তাবাদ ও যুদ্ধের জন্য উন্মাদনা’ বিশ্বের জন্য উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত।

জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন এরই মধ্যে দুই দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, ‘আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব উত্তেজনা যেন কমে আসে। যদিও আমরা দুই দেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না।’

আর গতকাল পাকিস্তানের পার্লামেন্টে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছেন, উত্তেজনা কমাতে সৌদি আরব, কাতার ও চীনের সঙ্গে ইসলামাবাদ আলোচনা করছে।

তবে যুদ্ধের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও বিদেশি শক্তিগুলো কিছুটা উদাসীন রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। আর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, উভয় পক্ষকে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং দুর্ভোগ ও প্রাণহানি কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম ব দ ব যবহ র কর ছ ন মন ত র গতক ল র খবর

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই অভ্যুত্থানকে নস্যাতের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকে জুলাই অভ্যুত্থান নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলেছেন, এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে তারা ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে রয়েছেন।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই অঙ্গীকার করেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর নেতারা। বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা এবং আইন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

বিএনপির প্রতিবাদ কর্মসূচি: নয়াপল্টনে এসে মিলছে সব পথের মিছিল

তারেক রহমান দেশে ফিরছেন ২৫ ডিসেম্বর: মির্জা ফখরুল

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ওসমান হাদির ওপর হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এর পেছনে বড় শক্তি কাজ করছে, যাদের লক্ষ্য নির্বাচন বানচাল করা। তিনি বলেন, হামলাটি ছিল প্রতীকী শক্তি প্রদর্শন এবং প্রাপ্ত তথ্যে প্রশিক্ষিত শুটার ব্যবহারের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এসব মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”

বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এই পরিস্থিতিতে পরস্পরের দোষারোপ বন্ধ করে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে একযোগে আওয়াজ তুলতে হবে।”

তিনি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার পরামর্শ দেন।

জামায়াত নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “নিজেদের মধ্যে দোষারোপের প্রবণতায় বিরোধীরা সুযোগ নিচ্ছে।”

ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে জাতিকে বিভক্ত করা থেকে সরে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানকে খাটো করতে সুসংগঠিত অপতৎপরতা চলছে। মিডিয়া, প্রশাসন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “অনৈক্যই ষড়যন্ত্রকারীদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”

তিন দলের নেতারা জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধরে রাখতে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ