ঠাকুরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সাঁটানো সাইনবোর্ড সরিয়ে নিল ‘জুলাই যোদ্ধা’
Published: 15th, May 2025 GMT
ঠাকুরগাঁওয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুড়িয়ে দেওয়া জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় দখলে নিয়ে ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামের একটি সংগঠনের সাইনবোর্ড টানানো হয়েছিল। আসবাবের পোড়া অংশ ও ছাই পরিষ্কার করে আয়োজন করা হয় ভোজের। চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার সকালে সাইনবোর্ডটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে হঠাৎ একদল যুবক এসে জেলা আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত কার্যালয়ে ওই সাইনবোর্ড টানান। নিজেদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করা ওই যুবকদের কর্মকাণ্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হলে সাইনবোর্ডটি আপাতত সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে তাঁরা জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ঠাকুরগাঁও শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশে খাসজমি ইজারা (বন্দোবস্ত) নিয়ে দলীয় কার্যালয় স্থাপন করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ২০০৮ সালের পর (সরকার গঠনের পর) তিনতলা কার্যালয় বানানো হয়। তিনতলা ভবনের নিচতলায় দোকানপাট। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গত ৪ আগস্ট জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল কার্যালয়টি। কয়েক মাস আগে ফুটপাতের দোকানিরা কার্যালয়ের সিঁড়িঘরে মালামাল রাখতে শুরু করেন।
আশপাশের দোকানিরা জানান, গতকাল দুপুরে হঠাৎ একদল যুবক এসে কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। পরে তাঁরা শ্রমিক দিয়ে কার্যালয়ের আসবাবের পোড়া অংশ, ছাই, জানালার ভাঙা কাচ ও ময়লা পরিষ্কারের কাজ শুরু করেন। পরে কার্যালয়ের দেয়ালে ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামের একটি সংগঠনের সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন। পরে সেটা কার্যালয়ের লোহার গ্রিলে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের পুড়ে যাওয়া কার্যালয়ে টানানো হয়েছিল ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে একটি সংগঠনের সাইনবোর্ড। পরে সেটি সরিয়ে নেওয়া হয়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ইনব র ড ঠ ক রগ গঠন র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
কলাপাড়ায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-আগুন, আহত ৩
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় একটি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক সরবরাহ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের মরিচবুনিয়া জেটি ঘাটে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর নাম শাহীন মৃধা। তিনি ধানখালী ইউনিয়নে আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরএনপিএল) নামের নির্মাণাধীন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক সরবরাহসহ বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ করে আসছিলেন। সম্প্রতি স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম (মহসিন) ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রে মালামাল সরবরাহের একটি কাজ পেয়েছেন।
শাহীন মৃধার অভিযোগ, আমিনুলের লোকজন তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি তাঁর একটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে তাঁর কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হামলায় স্থানীয় বাসিন্দা দোলন মৃধা (৩৫), মিরাজ হোসেন (৩৭) ও তাঁর গাড়িচালক রানা (৩২) আহত হয়েছেন।
তবে অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আমিনুল ইসলাম বলছেন, শাহীন মৃধা বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক সরবরাহে বাধা দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অনেক অভিযোগ আছে। তিনি আজকের হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শতাধিক মোটরসাইকেলে একদল যুবক ধানখালীর মরিচবুনিয়া এলাকায় যান। তাঁরা শাহীন মৃধার শ্রমিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়, তাঁর বসবাসের একটি ঘর ও শ্রমিকদের বসবাসের ছাউনিতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুনে ঘরে থাকা শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটরসহ আসবাব পুড়ে যায়।
খবর পেয়ে কলাপাড়া উপজেলা সদর থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আগুন নেভানোর জন্য রওনা হলে পথে ছয় লেন সড়ক এলাকায় একদল লোক আটকে দেয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে গেলে লোকজন সরে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
কলাপাড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা আগুন লাগার খবর শুনে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলাম। পথে কিছু লোক বাধা দিয়েছিল। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যদের আসতে দেখে সেসব লোক সটকে পড়ে। এরপর আমরা ঘটনাস্থলে যাই এবং আগুন নেভানোর কাজে অংশ নিই।’
ব্যবসায়ী শাহীন মৃধা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার ইন্ধনে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসী যুবকেরা লাঠিসোঁটা, দেশি অস্ত্রশস্ত্রসহ দলবল নিয়ে এসে তাঁর কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন। একপর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এমনকি সন্ত্রাসীরা তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িটিও ভাঙচুর করেছে। তিনি বলেন, ‘আমাকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে তালাবদ্ধ করে হামলাকারী চক্র আগুন লাগিয়ে দেয়। আমি বের হতে না পারলে পুড়ে ছাই হয়ে যেতাম। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। এমন জাহিলি কাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘আসলে শাহীন মৃধা আওয়ামী লীগের লোক। তাঁর সঙ্গে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মহিববুরের সুসম্পর্ক ছিল। সে নিজে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এলাকার লোকজন এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সব সময় অভিযোগ করে আসছে। আমি আরএনপিএল নামের নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে মালামাল সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছি। এতে শাহীন মৃধা ক্ষুব্ধ হয়ে আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। এমনকি আমার শ্রমিকদের মালামাল সরবরাহে বাধা দিয়েছে। এসব নিয়ে শাহীন মৃধার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছি।’ তিনি বলেন, তিনি এলাকায় থাকেন না। ঢাকায় বসবাস করেন। এখন এলাকায় যে ঘটনা ঘটেছে, তার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, তিনি জানেন না। তাঁকে নিয়ে কোনো কথা বলে থাকলে তা উদ্দেশ্যমূলক। তিনি ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটির পাশের স্থাপনায় চিহ্নিত একদল সন্ত্রাসী হামলা ও নাশকতা চালায়। বর্তমানে সেখানকার আগুন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি।