স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার উদ্যোগে স্বস্তি আগাম দরখাস্তে সংশয়
Published: 29th, May 2025 GMT
স্বতন্ত্র কাউন্সিলের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের জন্য প্রথমবারের মতো নিয়োগপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে দরখাস্ত চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। গতকাল বুধবার জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে আগ্রহী প্রার্থীদের নির্ধারিত ফরমে ২২ জুনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে দরখাস্ত জমা দিতে বলা হয়েছে।
একই বিজ্ঞপ্তিতে পূর্বের দরখাস্তকারীদের নতুন করে দরখাস্ত জমা না দিতেও বলা রয়েছে। এতে বিজ্ঞপ্তি জারির আগেই দরখাস্ত জমা নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে সার্বিকভাবে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে দেশের বিচার বিভাগের জন্য ‘স্বচ্ছতা ও কাঠামোবদ্ধতার নতুন দিগন্ত’ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট আইনজ্ঞসহ নিয়োগপ্রত্যাশীরা।
তারা বলছেন, অতীতে বিচারপতি নিয়োগে দলীয় আনুগত্য ও রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ থাকলেও এবার গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে একটি ইনক্লুসিভ ও মেধাভিত্তিক প্রক্রিয়ার সূচনা হয়েছে। এর উদ্দ্যেশ্য ব্যাহত হয় এমন কিছু করা উচিত হবে না। এমনটি হলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন হবে। তবে কেউ কেউ নিয়োগ
প্রক্রিয়ার কিছু অসংগতির দিকেও ইঙ্গিত করেছেন। তারা মনে করেন, ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনের মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করা সম্ভব।
গত ২১ জানুয়ারি ‘সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি করে সরকার। এর আওতায় রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৭ সদস্যের সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল গঠন করা হয়।
এদিকে, গণবিজ্ঞপ্তি জারির আগেই বিভিন্ন ব্যক্তি থেকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের তত্ত্বাবধানে দরখাস্ত জমা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে সম্মত হননি। সুপ্রিম কোর্ট-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের দরখাস্তগুলো কাউন্সিল পর্যালোচনা করবে। সংবিধান ও অধ্যাদেশের আলোকেই নিয়োগ সম্পন্ন হবে।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড.
শাহ্দীন মালিক আরও বলেন, ‘অতীতে রাজনৈতিক তদবিরের মাধ্যমে অনেক নিয়োগ হয়েছে। সেই সংস্কৃতি ভেঙে গেলে রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের মধ্যে কেউ কেউ হতাশ বা ক্ষুব্ধ হতে পারেন। তবে নিয়োগ কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে এবার যে কাঠামো তৈরি হয়েছে, তা একটি প্রতিনিধিত্বমূলক ও ভারসাম্যপূর্ণ কাঠামো। এতে প্রধান বিচারপতি, আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, আইনের অধ্যাপক, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিও রয়েছেন।’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সমকালকে বলেন, বিচারপতি নিয়োগে স্বচ্ছতা নিয়ে গত দুই যুগে অনেক প্রশ্ন ছিল। যোগ্যতা নিয়েও বিতর্ক ছিল। নতুন অধ্যাদেশে নিয়োগ হলে বিতর্ক হওয়ার সুযোগ কমে যাবে। কারণ নিয়োগপ্রত্যাশীদের কিছু মানদণ্ড বজায় রেখে ভাইভার মুখোমুখি হতে হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে কাউন্সিলে রাখা হয়েছে। তাদের না রাখা হলে নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হতো।
মনজিল মোরশেদ আরও বলেন, কাউন্সিলকে অবশ্যই সংবিধান ও আইনের আলোকে যোগ্যতা, সততা ও নৈতিকতাসম্পন্ন প্রার্থীদেরই বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে হবে; রাজনীতিকে নয়। তাহলে অবশ্যই বিচার বিভাগ উপকৃত হবে এবং বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল সমকালকে বলেন, ‘অতীতে বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছতা ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে দলীয় আনুগত্যকেই নিয়োগের মাপকাঠি হিসেবে ধরা হতো। এবার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে দরখাস্ত আহ্বানের মাধ্যমে একটি কাঠামোবদ্ধ এবং ইনক্লুসিভ পদ্ধতির সূচনা হয়েছে, যা সৎ, মেধাবী, যোগ্য ও কর্মনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিচার বিভাগে আগ্রহী করে তুলবে।’
রুহুল কুদ্দুস কাজল আরও বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করি, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে কোনো অসৎ, দুর্নীতিগ্রস্ত, অযোগ্য বা দলবাজ ব্যক্তি বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাবেন না। আমরা সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিলের প্রতি আহ্বান জানাব, আবেদনকারীদের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করে জনগণের মতামত গ্রহণের একটি ব্যবস্থা রাখা হোক। এতে কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা আগেভাগেই জানা যাবে এবং নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারকরা মেরুদণ্ড সোজা করে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।’
নিয়োগপ্রত্যাশী পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক অধস্তন আদালতের এক জেলা জজ সমকালকে বলেন, ‘গণবিজ্ঞপ্তি জারির আগেই কাউন্সিল দরখাস্ত গ্রহণ করেছে– এমন তথ্য বিজ্ঞপ্তিতেই উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ কাউন্সিলের সঙ্গে আগেভাগে কারও কারও যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে, যা বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশের মূল স্পিরিটের পরিপন্থি।’ ওই জেলা জজ আরও বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা, গণবিজ্ঞপ্তি জারির আগে যেসব দরখাস্ত জমা পড়েছে, সেগুলোর তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করে ঘোষণামূলক বাতিল করা হবে। অন্যথায় পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক ও প্রশ্ন উঠতে পারে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব চ র ব যবস থ ব চ রক ন য় গ প রক র য় র জ র র আগ ক উন স ল র জন ত ক ব চ রপত ট আইনজ আইনজ ব প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষকের মুক্তি চেয়ে শিক্ষার্থীদের আদালত চত্বরে অবস্থান, সড়ক অব
পঞ্চগড়ে ধর্ষণ চেষ্টা মামলায় কারাগারে থাকা পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের মুক্তির দাবিতে আদালত চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা সড়ক অবরোধ করেন। ফলে সড়কের দুই পাশে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিকেলে পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরের ন্যায়কুঞ্জ ভবনের সামনে পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। পরে তারা সেখান থেকে সরে গিয়ে পঞ্চগড়-তেতুঁলিয়া মহাসড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ গিয়ে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
আরো পড়ুন: পঞ্চগড়ে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষক আটক
আরো পড়ুন:
পাবিপ্রবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে প্রজেক্ট শো
অবকাঠামো উন্নয়নের দাবিতে ববিতে মানববন্ধন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, গণিত বিষয়ের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানকে ন্যায় বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা আদালতের কর্মকর্তা হওয়ায় আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবীকে দাঁড়াতে দিচ্ছেন না। দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের জামিন দাবি করেন।
অভিযুক্ত শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী আক্তার বানুর অভিযোগ, “একটি মিথ্যা মামলায় আমার স্বামীকে কারাগারে রাখা হয়েছে। ভুক্তভোগীর বাবা আইনজীবী হওয়ায় আমাদের পক্ষে কোনো আইনজীবীকে শুনানি করতে দেওয়া হচ্ছে না।”
তিনি আরো বলেন, “মঙ্গলবার দুপুরে মামলার শুনানিকালে এজলাসে আসামি পক্ষের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। দ্রুতই মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। কোনো মামলায় এত দ্রুত চার্জশিট দেওয়া হয় না। আমি আমার স্বামীর মুক্তি দাবি করছি।”
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর জাকির হোসেন বলেন, “আসামির মামলার শুনানি যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে হচ্ছে। আসামি পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগটি সত্য নয়। তারা কোনো আইনজীবীর প্রতি ভরসা রাখতে পারছেন না।”
তিনি বলেন, “শিশু আছিয়া মারা যাওয়ার পর থেকে প্রতিটি ধর্ষণ মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।”
গত ১৬ এপ্রিল ৯ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করে গণধোলাইয়ের পর পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা।
ওসি বলেন, “শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের জামিন হচ্ছে না দাবি করে আন্দোলন করেন। তারা ২০ মিনিটের মতো সড়ক অবরোধ করে রাখেন। আমরা গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝাই, আদালতের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। এরপর শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে যান।”
ঢাকা/নাঈম/মাসুদ